Header Ads

দু'পা হারিয়েও সফল যোগ ব্যায়াম প্রশিক্ষক হিসেবে নজির গড়ছেন বঙ্গতনয়া অর্পিতা রায়


মনের ইচ্ছেশক্তিই পারে যে-কোনো দুর্বলতাকে হারিয়ে জয়ের মুখ দেখতে। বঙ্গতনয়া অর্পিতা রায়ই হলো এর সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ। জীবনপথে এক বড়োসড়ো ধাক্কা খেয়েও সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেছেন তিনি। নিজের দুটো পা হারিয়েও তিনি আজকে বাংলার একজন স্বনামধন্য যোগ ব্যায়াম প্রশিক্ষক। হাজার হাজার বাঙালি তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন তিনি। ব্যর্থ মনের মানুষদের চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন 'ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি'। 


২০০৬ সালের ২২ শে এপ্রিল ব্যারাকপুর থেকে বাইকে করে প্রতিদিনের মতো কলকাতা যাচ্ছিলেন বছর কুড়ির কলেজ পড়ুয়া অর্পিতা রায়। সেদিন তিলোত্তমার বুকে পা রাখা হয়নি তাঁর। কলকাতা পৌঁছানোর আগেই তাঁর বাইক দুর্ঘটনা হয়। বাইক থেকে তিনি ছিটকে মাটিতে পড়লেন। তারপর তাঁর দুই পায়ের ওপর পেরিয়ে যায় একটি দ্রুতগতির মালবোঝাই ট্রাক। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলেন তিনি। সারাজীবনের মতো চলার শক্তি হারিয়ে ফেললেন তিনি।  মুহূর্তের মধ্যে তাঁর সুন্দর জীবনটা যেন নষ্ট হওয়ার উপক্রম। 
 
দুর্ঘটনার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা আশ্বাস দেন তাঁর দুই পায়ে সঠিক সার্জারি করা গেলেই নাকি তিনি পায়ে চলার শক্তি ফিরে পাবেন। তবে এই সার্জারির জন্য লাখখানেক টাকার প্রয়োজন। হঠাৎ করে বিরাট অঙ্কের এই টাকা জোগাড় করা অর্পিতার পরিবারের কাছে হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য ব্যাপার। যে কারণে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার শুরু করতে বারোটা দিন পেরিয়ে যায়। ততদিনে তাঁর সারা দেহে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। নিজের জীবন রক্ষার তাগিদে তাঁর দুটো পা কেটে বাদ দিতে হয়। তাঁর চিকিৎসা করে লাগালো হলো দুটি কৃত্রিম পা। দীর্ঘ চারমাস হাসপাতালে কাটাতে হয় তাঁকে। এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকেন তিনি।  

কৃত্রিম পা হয়ে উঠলো তাঁর চলার বিকল্প শক্তি৷ প্রথম প্রথম কৃত্রিম পায়ে চলাফেরা করতে গিয়ে অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় তাঁকে। আস্তে আস্তে বাড়িতেই কষ্ট সহ্য করে কৃত্রিম পায়ে হাঁটাচলা অভ্যাস করতে লাগলেন তিনি৷ মনের জোরে চলার শক্তি ফিরিয়ে আনা ও পড়াশোনা দুই-ই তিনি সমান তালে চালিয়ে যেতে লাগলেন। স্নাতক হওয়ার পর তাঁর চিকিৎসার খরচ ও ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। বাড়িতে বসেই একটি কল সেন্টারের কাজ করতে লাগলেন তিনি৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে বড় কাজ পেতে গেলে তাঁকে বাড়ির বাইরে বেরোতেই হবে। তাই পাঁচ বছর ধরে যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করে কৃত্রিম পায়ে যে-কোনো রকম যোগ ব্যায়াম করে দেখানোর দক্ষতা আয়ত্ত করেন তিনি। 

তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিলেন যোগ ব্যায়ামকেই। কেউই কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেননি যে যোগ ব্যায়ামই বদলে দেবে তাঁর জীবনটা। ২০১৯ সালে যোগ ব্যায়াম  প্রশিক্ষক হিসেবে একটি যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি৷ লকডাউনের আগে প্রায় চল্লিশ জন শিক্ষার্থী যোগ দেন তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। বর্তমানে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি ছাড়িয়ে গেছে৷ তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁর মতো বহু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও রয়েছে। 

সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি নিয়মিত ভালো থাকার বার্তাও দিয়ে থাকেন। মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে তিনি লাভ করেছেন তুমুল জনপ্রিয়তাও। তিনি মনে করেন বাস্তবে প্রতিবন্ধকতা বলে কোনো কিছুই হয়না। প্রতিবন্ধকতা জয় করে যে-কোনো মানুষই পারেন জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments