Header Ads

বিমান চালিয়ে ৮০০ ভারতীয় পড়ুয়াকে ইউক্রেন থেকে ফিরিয়েছেন মহাশ্বেতা চক্রবর্তী


যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ধার করে নজির গড়লেন বীরাঙ্গনা মহাশ্বেতা চক্রবর্তী। যিনি পেশায় একজন পাইলট। যার কৃতিত্বের জন্য গর্বিত গোটা দেশ। মহাশ্বেতা চক্রবর্তী নিজে বিমান চালিয়ে ৮০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে উদ্ধার করে ভারতে ফিরিয়ে এনেছেন। ইউক্রেনের ওয়ার জোন থেকে এতজন ছাত্র-ছাত্রীদের ফেরানোর কাজটি ছিল যথেষ্ট কঠিন। তাঁর এমন দুঃসাহসিক কাজের জন্য গর্বিত তাঁর মা৷ তাঁর পরিবার-পরিজনদেরও তাঁকে নিয়ে গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে। 


গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারী ভোররাতে হঠাৎ বেজে ওঠে তাঁর ফোন, তিনি তখন ঘুমোচ্ছেন। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে তিনি জেগে ওঠে ফোনটি রিসিভ করেন। ফোনের ওপার থেকে বলা হয়, তাঁকে দু'ঘন্টার মধ্যে প্রস্তুত হয়ে বেরোতে হবে। মাত্র দু'ঘন্টার এই নোটিশে রাতের অন্ধকারে প্রথমে দিল্লি তারপর ইস্তাম্বুল পাড়ি দেন তিনি। এরপর ইস্তাম্বুল থেকে বিমানে করে পৌঁছে যান সোজা পোল্যান্ডে৷ সেখানে আটকে পড়া শত শত ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ইস্তাম্বুল হয়ে দিল্লি নিয়ে আসেন তিনি৷ ২৭ শে ফেব্রুয়ারী থেকে ৭ ই মার্চ মোট ৬ টি উড়ানের পাইলট ছিলেন তিনি৷ চারটি উড়ান তিনি করেছেন পোল্যান্ডে এবং দুটি হাঙ্গেরিতে। তাঁর কাছে এই দায়িত্ব এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তিনি বাড়ি থেকে বেরোনের আগে মা-বাবাকেও জানাতে পারেননি।

তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে এই মিশনের অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, "পড়ুয়ারা যে পথ দিয়ে ইউক্রেন ত্যাগ করে এসেছেন, সেখানে কোনও খাবারদাবারের দোকান ছিল না। সেখানে চারিদিকে তীরবেগে গুলি ছুটছে। সেই অবস্থায় মাইলের পর মাইল হেঁটে তাঁরা এসেছেন পোল্যান্ড। বিমানে উঠেও ওঁদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না, যে তাঁরা নিরাপদস্থানে চলে এসেছেন। খাওয়াদাওয়া ঘুম কোনওটারই যেন গুরুত্ব ছিল না ওঁদের কাছে৷ অনেকে তো বিমানে উঠে জলও খেতে চাইছিলেন না। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে কঠিন সময় পার হয়ে এসেছেন। আমরা নিরাপদ ছিলাম৷ কিন্তু ইউক্রেনের এয়ারস্পেস এড়ানোর জন্য ওঁদের অনেকটা পথ এসে বিমান ধরতে হয়েছে। ওঁরা সেই সময় এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে নিজেকে ঠিক রাখাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।" 

যুদ্ধে মানুষের অসহায়তা, আতঙ্কের জ্বলন্ত স্মৃতি তিনি ভুলতে পারছেন না। একইসাথে সেই উদ্ধারকার্যের স্মৃতিও এখন দগদগে তাঁর মনে। তিনি জীবনে কখনো ভাবেননি যে একদিন যুদ্ধের মুখ থেকে দেশের মানুষকে ফিরিয়ে এনে তাঁদের নতুন জীবনদান করবেন। এক একটা দিন প্রায় পনেরো থেকে ষোলো ঘন্টা পর্যন্তও তাঁকে বিমান চালাতে হয়েছে। খাওয়ার সময়টুকুও তিনি পেতেন না৷ তাই কেবল ব্ল্যাক কফি, বিস্কুট ও নুডলস খেয়ে কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। নিরাপদে ঘরে ফেরার চিন্তায় তাঁর চোখে ঘুমও উড়ে গিয়েছিল। 

মহাশ্বেতা চক্রবর্তীর জন্ম অশোকনগরে। পড়াশোনা সূত্রে তিনি কলকাতায় আসেন। কলকাতার অক্সিলিয়াম কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনার পর ইন্দিরা গান্ধী  রাষ্ট্রীয় উড়ান অ্যাকাডেমি থেকে পাইলট হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ছোটোবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন পাইলট হওয়ার। আজকে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়া তো দূরের কথা পাইলট হয়ে এমন কিছু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন যা তাঁকে গর্বিত করেছে। তিনি ভারতে কোভিড-১৯ এর টিকাকরণের সময় প্লেনে করে বহু ভ্যাক্সিনও নিয়ে আসেন৷  

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments