একগুচ্ছ গান মুক্তির আগে আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অ্যানি আহমেদ কী জানাচ্ছেন?
অ্যানি আহমেদ বর্তমান প্রজন্মের একজন জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক সঙ্গীতশিল্পী। 'যুদ্ধ থামার পর', 'গারদ বন্দী', 'হাওয়াই মেলে ডানা', 'বিপ্লবের গান'- এর মতো একগুচ্ছ গান গেয়েছেন তিনি। একাধিক রবীন্দ্র সঙ্গীত ও বাংলা ফোক গানের কভারও তিনি গেয়েছেন। আগামীদিনে তাঁর আরো বহু গান মুক্তি পেতে চলেছে। যে গানগুলো মুক্তির আগে তিনি ঠিক কী জানালেন?
লিটারেসি প্যারাডাইস:- বাংলা ব্যান্ডে আপনি এত বছর প্লে ব্যাক করার পরও কেন সেভাবে আপনি শো করেন না?
অ্যানি আহমেদ:- বাংলা ব্যান্ডের সঙ্গে আমি অনেক বছরই যুক্ত। প্লে ব্যাকও আমি করেছি। টুকটাক প্লে ব্যাক আমি অনেক জায়গাতেই করেছি। হইচইতে করেছি এছাড়াও বিভিন্ন সোর্সে যেমন ওয়েব সিরিজ ও সিরিয়ালে প্লে ব্যাক করেছি। শো করিনি বলতে শোয়ের যখন ডাক এসেছে তখনই করেছি, তবে সেটা আমার পরিচিত যারা যেটুকু ডাক পাঠিয়েছেন তাদের ডাকে সেটুকুই শো করে আসছি এতো বছর। সেই লেভেলে যথেষ্ট শো এখনও পর্যন্ত করে উঠতে পরিনি। তার বিভিন্ন কারণ হতে পারে, এক হয়তো পরিচিতির অভাব হতে পারে। আমি সবার কাছে হয়তো সেভাবে পৌঁছাতে পারিনি আমার কাজকর্ম নিয়ে সেটা হতে পারে। আবার এও হতে পারে আমি হয়তো সেরকম বিগ ব্র্যান্ডে বা বড়ো প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি বা করতে পারিনি, হয়তো আশা করছি আগামীদিনে সেগুলো হবে। এই বিভিন্ন কারণেই হয়তো আমার নাম্বার অফ শো বেশি নয় বছরে। তবে শো করি। ছয় থেকে আট বছর ধরে অনেক শোই করে এসেছি। কিন্তু যতটা হওয়া উচিৎ ছিল ঠিক ততটা হয়নি। এটা আমার একপ্রকার কপাল বা ভাগ্যও বলতে পারেন।
লিটারেসি প্যারাডাইস:- যারা এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে নতুন ব্যান্ড তৈরি করছেন কিংবা যারা নতুন গায়ক গায়িকা হতে চান তারা কীভাবে কাজ করবে?
অ্যানি আহমেদ:- বর্তমান সময়ে প্রচুর ব্যান্ড তৈরি হচ্ছে। এখন প্রচুর গায়ক গায়িকা। সত্যি কথা বলতে আমাদের পশ্চিম বাংলার মতো জায়গায় ট্যালেন্টের কোনো অভাব নেই এবং এটাও বলবো যে অনেক ভালো ভালো ট্যালেন্টের খবর কিন্তু আমরা পাইনা। হয়তো সে ঘরের এক কোণায় কাজ করছে, ইউটিউব অথবা স্পটিফাইয়ে তারা তাদের গান রিলিজ করছে। সবাই যে এতোটা প্রচার পাচ্ছে বা সমাজ মাধ্যমে এগিয়ে আসতে পারছে এটা কিন্তু নয়। তার পিছনে বিভিন্ন কারণ আছে সেটা নিয়ে না হয় আলোচনা নাই করলাম। কিন্তু আমি অবশ্যই তাদেরকে বলবো তারা কী করবে। প্রথমত যে সব গুণী শিল্পীরা বিশেষ করে ইয়াং আর্টিস্টরা যারা চেষ্টা করছে, ব্যান্ড করছে, গাইছে তাদেরকে বলবো তারা যেন কোনোমতেই রেওয়াজটা না বন্ধ করে সেটা ভোকাল হোক বা ইন্সট্রুমেন্ট। রেওয়াজটা অবশ্যই রোজ সঠিক সময় ধরে সঠিক নিয়ম মেনে করতে হবে। দ্বিতীয়ত নিজেদের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। আপনি আমাকে প্রথমে যে প্রশ্নটা করলেন তার একটা উত্তর আমার এখন মনে আসছে। আমি হয়তো আমার সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। আমি চাকরিসূত্রে টিচিং প্রফেশনে রয়েছি, আমি একজন শিক্ষিকা। চাকরি করি বলে হয়তো সেই লেভেলে আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করতে পারিনি। সোশ্যাল মিডিয়া বলতে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম তো আছেই যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজ সবার সামনে তুলে ধরতে পারছি। এই প্ল্যাটফর্মগুলোকেই যথাযথ ভাবে কাজ লাগাতে হবে। যারা এই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগাতে পেরেছে তারাই আজকে ঘর থেকে কাজ করেই জনসমক্ষে এসেছে। আমার ক্ষেত্রে আমি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ বা সময় দুটোই পেয়ে উঠিনি চাকরি করার জন্য। নতুন গায়ক-গায়িকাদের প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে, নিয়মিত রেওয়াজ চালিয়ে যেতে হবে। ভালো ভালো কাজ এনে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে দারুণ ভাবে কাজ লাগাতে হবে এবং একটু ধৈর্য্য ধরে কাজটা করে যেতে হবে। তাহলেই একদিন না একদিন তারা পরিচিতি পাবে, শোস পাবে, বড় বড় কাজের ডাক পাবে, সবকিছুই হবে।
লিটারেসি প্যারাডাইস:- দুবাই নাকি কলকাতা কোনটা বেশি পছন্দের জায়গা আপনার কাছে?
অ্যানি আহমেদ:- আমার কাছে অবশ্যই আমার নিজের জায়গাটাই পছন্দের হবে। কলকাতার আকাশ-বাতাস, মাটির টান, কলকাতায় নিজের মানুষেরা, পরিবার সবকিছুই তো কলকাতা। এর সঙ্গে একটু জুড়তে চাইবো; আমি কিন্তু কলকাতায় এসেছি ২০১০ সালে উচ্চ শিক্ষার তাগিদে। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবই মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। মুর্শিদাবাদ একটা ঐতিহাসিক জায়গা। আমরা সকলেই জানি যে একসময় বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। সেই মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের মেয়ে আমি। সেখানে আমার ছোটো থেকে গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত প্রায় ২০ টা বছর কাটাই। আর কলকাতায় আসি মাস্টার্স করতে। সেই সময় ২০১০-এ এসে এখনও পর্যন্ত ২০২৫ সাল একটা লম্বা জার্নি কলকাতায়। অবশ্যই কলকাতা আমার নিজের জায়গা। পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতা এমনকি এই শহরটা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমাকে অনেক পরিচিতি দিয়েছে, অনেক ভালোবাসা দিয়েছে, অনেক কাজ আমি কলকাতায় করেছি। কলকাতায় পড়াশোনা করতে করতে আমি টিকিট টু টলিউড নামের একটি রিয়েলিটি রেডিও সিঙ্গিং কনটেস্টে উইনার হই। তো কলকাতা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। কলকাতায় আমি অনেক কাজই করেছি। যেটুকু পরিচিতি আমি পেয়েছি ওটা কলকাতায় আমাকে দিয়েছে। বহরমপুর তো অবশ্যই আছে কারণ ছোটো থেকেই আমি স্টেজ আর্টিস্ট। ছোটোবেলা থেকেই আমি ক্লাসিক্যাল শিখছি। বিভিন্ন স্টেজে গান করছি, পারফর্ম করছি এবং জার্নিটা আমার বহরমপুর থেকেই শুরু৷ এরপর কলকাতায় এসে আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলাম। অনেক আমার পরিচিতি বাড়তে লাগলো যেহেতু আমি টিকিট টু টলিউডের উইনার। সেখান থেকেই অনেকের কাছ থেকে কাজের ডাক পাই। অনেক কাজ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি। আমার জন্য কলকাতা সবসময় স্পেশাল। আমার কাছে কলকাতা সবসময় এগিয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। দুবাইতে আমি লাস্ট দেড় বছরে দু-তিনটে শো করলাম। আগের বছর পুজোয় দুটো শো করেছি আর এই বছর পয়লা বৈশাখ একটা শো করলাম দুবাইতে। সেটা তো কোথাও গিয়ে বিদেশের মাটি এবং বিদেশের মাটি ও দেশের মাটির মধ্যে তো পার্থক্য থাকবেই। তাই আমি সবসময় কলকাতাকেই এগিয়ে রাখবো।
লিটারেসি প্যারাডাইস:- এ বছর আপনি পুজোতে কোথায় থাকছেন?
অ্যানি আহমেদ:- এই বছর পুজোতে কোথায় থাকবো এখনও ঠিক নেই। কথা চলছে আমার যদি দেশের বাইরে শোয়ের ডাক আসে তাহলে অবশ্যই সেখানে হয়তো যাবো। পুজোর আগে আমাদের আর্টিস্টদের কী হয় আমাদের যেখান থেকে পারফর্মের জন্য রিকুয়েষ্ট করা হয় সেটা দেশের অন্য প্রান্তে হতে পারে, বিদেশের মাটিতেও হতে পারে সেখানেই আমাদের যেতে হয়। তবে এ বছর আমার ইচ্ছে রয়েছে আমি কলকাতাতেই থাকবো। কলকাতা ও তার পাশ্ববর্তী এলাকা বা দেশের মধ্যেই শো করবো। কিন্তু এখনও কিছু বলতে পারছি না কারণ পুজোর এখনও দুমাস দেরি। যদি সেরকম কোনো ডাক আসে দুবাই থেকে আগের বছরের মতো তাহলে আশা রাখছি কলকাতা ও দুবাই দুই জায়গার শোই ম্যানেজ করে নেবো।
লিটারেসি প্যারাডাইস:- আগামীদিনে আপনার কী নতুন কাজ আসছে?
অ্যানি আহমেদ:- হ্যাঁ আগামীদিনে নতুন কাজ আসছে। আমি একজন ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্ট। আমি সবসময় ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্টদের সত্ত্বাটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আমি আমার নিজস্ব গান বের করি। নিজস্ব বলতে হয়তো আমি অরিজিনাল গানের ওপর ভয়েস দিলাম বা কখনও কম্পোজ করছি বা লিখছি। অলরেডি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমার ছ'সাত বছর থেকে অনেক রিলিজ হওয়া গান রয়েছে। সেরকমই আমার নতুন কিছু কাজ আসছে। একটা কাজ আসছে মিস্টার বাবু রেকর্ডস থেকে। মেটামরফোস নামে আমার একটা গান আসছে। যেটা একদমই পপ জেনারের ওপর একটা বাংলা গান। নতুন গান, নিজস্ব একটি গান এবং তারপরও আরেকটি গান আসছে। একটা দুটো বেশ কয়েকটা ইনডিপেনডেন্ট নতুন গান আসছে। আমার খুব ইচ্ছে আছে পুজোর গান রিলিজ করার। আগের বছর যেমন পুজোর গান করেছিলাম এ বছরও তেমনই পুজোর গান গাইবো। এগুলো সব আমার নিজস্ব কাজ যেগুলো আগামীদিনে আসছে।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment