Header Ads

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের শীর্ষে কী এবার বঙ্গসন্তান নীল বসু? জল্পনা তুঙ্গে


২০১৭ সালের ৩ রা জুন লন্ডন ব্রিজে একটি ভয়ার্ত সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল। ঐ দিন রাত দশটার সময় কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা ভ্যানে করে রুদ্ধশ্বাস গতিতে ব্রিজের ওপর উঠে গিয়ে পিষে মারে লন্ডনের নিরীহ মানুষদের। প্রায় একই সময়ে লন্ডন ব্রিজ পাশ্ববর্তী বারবাজার এলাকায় সন্ত্রাসবাদীরা ছুরি নিয়ে জনসাধারণের ওপর হামলা চালায়। যে ঘটনায় এগারো জন নিহত ও আটচল্লিশ জন আহত হন। এই ঘটনার পুরো তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় নীল বসুর হাতে। তিনি দায়িত্ব সহকারে তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের হত্যার ব্যবস্থা করেন। সন্ত্রাসবাদকে তিনি প্রবলভাবে ঘৃণা করেন। সাথে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতারও তিনি ঘোর বিরোধী। 


পঞ্চাশ বছর বয়সী নীল বসুর জন্ম হয় ব্রিটেনে। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। তাঁর বাবার বাড়ি ছিল কলকাতাতে। কর্মসূত্রে যিনি পাড়ি দেন ব্রিটেনে। সেখানে ওয়েলসের একজন নার্সকে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন। তারপর ব্রিটেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে স্থায়ীভাবে ব্রিটেনে বসবাস স্থাপন করেন। 

নীল বসুর গায়ের রঙ তামাটে হওয়ার জন্য তাঁকে একাধিকবার বর্ণবিদ্বেষের স্বীকার হতে হয়েছিল। তিনি হাজার অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতেন শৈশব থেকেই। তবুও দুর্বলতা তাঁকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি। দুর্বলতাকে তিনি কখনো প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি প্রচণ্ড সবল মানসিকতার মানুষ। বাবা-মা পেশায় চিকিৎসক হলেও তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে ততটা আগ্রহ ছিলনা। বাবা-মা চাইতেন তাদের সন্তান একজন মহান আইনজীবী হোক৷ কিন্তু নীল বসু নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পূর্ণ করেছিলেন। এরপর বার্কলেস ব্যাঙ্কে ম্যানেজার শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন৷ তারপর একটি ব্রিটিশ কোম্পানিতে সেলসম্যানের কাজ করেন। যদিও সেলসম্যানের চাকরি কিছুদিনের মধ্যে ছেড়েও দিয়েছিলেন। 

১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডের মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগ দেন। 'ব্যাটারসিয়া' এলাকায় প্রথমে তিনি টহলদারির কাজ পান। কখনও সাইকেলে বা কখনও পায়ে হেঁটে তিনি সততার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতেন। হঠাৎ করে ঝড়ের গতিতে তাঁর একটার পর একটা পদোন্নতি হতে থাকে। ২০১৩ সালে পুলিশ বাহিনীর কমান্ডার ইনচার্জ করা হয় তাঁকে। এরপর ২০১৮ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সন্ত্রাসবাদী দমন শাখার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। 

নীল বসুর সংবিধানে অপরাধ কখনো ঠাঁই পায়না। শহরের অলিতে-গলিতে ধরে ধরে তিনি সন্ত্রাসবাদী ও অপরাধীদের হত্যা করেন। সন্ত্রাস দমনে তাঁর দল বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তিনি অদম্য সাহস নিয়ে বীরের মতো কাজ করেন। 

শার্লক হোমস প্রায় সব বাঙালিই কম-বেশি পড়েছেন৷ স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস গোয়েন্দা সিরিজের সমস্ত গল্পে আমরা দেখেছি যে-কোনো জটিল রহস্য উন্মোচনে শার্লক হোমসকে বারংবার সাহায্য করেছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। ১৮২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত লন্ডনের এই প্রাচীন পুলিশ বাহিনীর শীর্ষে এবার বঙ্গসন্তান নীল বসুর আসার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ওরফে মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিসের শীর্ষকর্তা ডেম ক্রেসিডা ডিক গতকাল ইস্তফা  দিয়েছেন। তাঁর জায়গায় নীল বসু আসতে পারেন বলে জল্পনা ইতিমধ্যে তুঙ্গে।  

সম্প্রতি চারিং ক্রস পুলিশ স্টেশনের ১৪ জন পুলিশকর্মীর নিজেদের মধ্যে হোয়াটস অ্যাপে ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা, বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য দেওয়া-নেওয়া করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে বাড়তে থাকে ক্ষোভের পারদ। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান কমিশনার ক্রেসিডার কাছে তার সম্ভাব্য সমাধানের কথা জানতে চেয়েছিলেন। যদিও ক্রেসিডার জবাবে সন্তুষ্ট হননি সাদিক। তিনি ক্রেসিডার ওপর আর ভরসা করতে পারছেন না। বিশেষ সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, পরবর্তী কমিশনার হিসেবে বিভিন্ন মহলে নীল বসুর নামই উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উদ্যোগী হয়েছেন। সাদিকের সঙ্গে আলোচনার পরই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  
 
প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments