চর্চার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন বিশ্বের প্রথম বেদনাহীন সার্জারির প্রবক্তা ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত
সারা বিশ্বের কাছে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন বহু বাঙালি। আজও সেই ধারা অব্যাহত। আজকাল বিভিন্ন সংবাদপত্রে চোখ মেললেই শুধুই রাজনৈতিক খবরের ভিড়। যার ফলে চাপা পড়ে যাচ্ছে বাংলা ও বাঙালির গর্বের কিছু মুহূর্তের খবর৷ বাংলার গর্ব সুখ্যাত চিকিৎসক প্রকর দাশগুপ্ত, যার নামে দুনিয়ার প্রথম বেদনাহীন সার্জারির নামকরণ হয়েছে। তাঁর দেখানো পথেই সারা বিশ্বে চালু হয়ে হয়েছে বেদনাহীন সার্জারি। অথচ এতো বড়ো একটি সংবাদ নিয়ে খুব বেশি চর্চা হলো না।
প্রায় বছর তিরিশ আগে লিসম্যানিয়াসিস নামে প্যারাসাইটিক অসুখ নিয়ে গবেষণার কেরিয়ার আরম্ভ করেছিলেন ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত। ইংল্যান্ডের কিংস হাসপাতালে প্রথম রোবোটিক সার্জারির প্রফেসর হিসাবে যোগ দেন। রোবোটিক সার্জারি এবং প্রস্টেট ক্যানসার নিয়ে তাঁর গবেষণা বহু মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে৷ ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বা প্রস্রাব ধারণে অক্ষমতার জন্য ব্লাডারের সমস্যা সমাধানের জন্য বোটক্সের ব্যবহার করা শুরু করেন। তাঁর আবিষ্কৃত সেই সফল পদ্ধতির নাম হলো 'দাশগুপ্ত টেকনিক'। যা বিশ্বের প্রথম বেদনাহীন সার্জারি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বহু রোগী সুস্থ হয়ে জীবন ফিরে পেয়েছেন। ২০০৫ সালে একটি চিকিৎসক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমেই কিডনি পুনরুদ্ধার ও প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রায় ৬০০ এর বেশি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে এই চিকিৎসকের।
চলতি বছরে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত। কেবল বেদনাহীন সার্জারিই নয়, প্রকর দাশগুপ্তের নামে রয়েছে মূত্রাশয়ের রোগের চিকিৎসার একটি বিশেষ পদ্ধতিও। লখনৌ শহরের বাঙালি পরিবারে জন্ম প্রকর দাশগুপ্তের। চিকিৎসা শিক্ষার জন্য তিনি চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৮৯ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর পাড়ি দেন তিনি লন্ডনে। সেখানে ১৯৯৪ সালে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের ফেলো নির্বাচিত হন৷ ২০০০ সালে এফআরসিএস ও ২০০১ সালে এমডি ডিগ্রি অর্জনের পর সেখানেই অনুশীলন করেন।
ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত তাঁর কৃতিত্বের জন্য লাভ করেছেন অসংখ্য সম্মাননা। ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউরোলজিক্যাল সার্জনস ২০০৬ সালে তাঁকে কার্ল স্টোরজ হ্যারল্ড হপকিন্স গোল্ডেন টেলিস্কোপ প্রদান করে। ২০১৭ সালে লিনিয়ান সোসাইটি ও ২০১৮ সালে কিংস কলেজের ফেলোশিপ পান। এরপর ২০২০ সালে সেন্ট পিটারস মেডেল পান তিনি।
ডাঃ দাশগুপ্ত বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত। কিংস কলেজের প্রস্টেট ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে প্রস্টেট ক্যানসার চিকিৎসার উন্নতি করা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ম্যালকম কপটকোট এর ট্রাস্টি হিসেবেও যুক্ত। এছাড়াও ৯০ বছরের প্রাচীন ব্রিটিশ জার্নাল অফ ইউরোলজি ইন্টারন্যাশনাল-এর এডিটর ইন চিফ হিসাবেও কাজ করেছেন।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment