নদীর ভাঙন রহস্য উন্মোচন করে বিরল আন্তর্জাতিক সম্মান পাচ্ছেন বিজ্ঞানী শুভাশিস দে
"ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বলো কোথায় তোমার দেশ, তোমার নেই কি চলার শেষ।" নদীর কথা বললে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কলমে রচিত ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ধ্বনিত এ গানটার কথা স্মরণে আসে। নদী বড়ই বিচিত্র। মানুষ নদীকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। মানুষ নদীর ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল। নদী নানান কাজে মানুষকে সাহায্য করে। কিন্তু এই নদীই বর্ষাকালে কিংবা প্রচণ্ড বৃষ্টিতে হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। তারপর ভাসিয়ে নিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। নদীকে ঘিরে আমাদের বিস্ময়ের অন্ত নেই। কোন নদীর কোথায় উৎস আমরা জানি না কেউ। কেন নদীর ভাঙন হয়? কেন বন্যার ফলে নদীর ব্রীজ ভেঙে যায়? কীভাবে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব? এসব জলঘোলা রহস্য আমাদের আজও অজানা। বিজ্ঞান জগতও এখনও পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন রহস্যের দ্বার উদঘাটন করতে পারেনি৷ নদীর নানান রহস্যের পুনরুদ্ধার করে নদীকে কীভাবে মানসভ্যতার অগ্রগতির কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে বিস্তর গবেষণা চলছে। এই গবেষণার কাজেই নিজের দক্ষতা রাখলেন খড়্গপুর আইআইটির এক বাঙালি অধ্যাপক শুভাশিস দে। নদীর ভাঙন রহস্য উন্মোচন করে আন্তর্জাতিক সম্মান পাচ্ছেন তিনি৷
নদীর গতি রহস্যময়তার বিষয়ে তাঁকে বিশ্ববন্দিত হান্স আলবার্ট আইনস্টাইন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করছে আমেরিকার সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। দীর্ঘ ৩০ বছর পর কোনো ভারতীয় এই সম্মানে ভূষিত হতে চলেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে গবেষণার জন্য যে বিপুল পরিমাণ পরিকাঠামো ও অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তার ছিঁটেফোঁটা সুযোগ মেলেনা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। যে কারণে এসব প্রতিযোগিতা থেকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সরে দাঁড়াতে হয় ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। তবুও বিজ্ঞানী শুভাশিস দে অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায় এক বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্মান এনে দিলেন দেশের মাটিতে।
নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদী ভাঙন, বন্যায় সেতু ভেঙে যাওয়া বর্তমানে এক চিরাচরিত সমস্যা। যার রহস্য কেবলমাত্র নদীতে নয়, নদী যেখান দিয়ে বয়ে যায় তার ভূ বৈচিত্র্যেরও অঙ্গ। কোথাও দেখা যায় নদী নিজে থেকে ভাঙছে। আবার কোথাও দেখা যায় বর্ষার সময় নদীর পাড় থেকে উঁচু জায়গার জমা জল নদীতে উপচে পড়ে নদীতে ভাঙন সৃষ্টি করছে। এই বিভিন্ন রহস্যকে উদঘাটন করেই কীভাবে পরিকাঠামো উন্নত করা যায়, সড়ক গড়া যায়, নদী গড়া যায় এই নিয়ে তিন দশক ধরে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শুভাশিস বাবু৷ যার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি এই আন্তর্জাতিক সম্মানটি পাচ্ছেন।
চলতি বছরের ৫ ই জুন থেকে ৯ ই জুন পর্যন্ত মার্কিন মুলুকের আটলান্টা মহানগরে সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উদ্যোগে আয়োজিত হতে চলেছে বিশ্ব পরিবেশ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন কংগ্রেস। সেখানে সশরীরে উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শুভাশিস দে'কে। গত ৮ ই ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment