সত্যজিৎ রায়কে অপমান করলেন জনপ্রিয় স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান নাসিফ আক্তার

যারা নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকেন তারা প্রায় অনেকেই নাম শুনেছেন নাসিফ আক্তারের। বাংলার অন্যতম স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান তিনি। ফেসবুকে এই মুহূর্তে তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৮ হাজার। নানান বিষয়ে স্ট্যান্ড-আপ কমেডি করে লোক হাসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি৷ স্ট্যান্ড-আপ কমেডির মাধ্যমে তিনি বহু মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন। সেই প্রশংসায় এবার খানিকটা ভাটা পড়লো। সত্যজিৎ রায়কে একটি ভিডিও-র মাধ্যমে সরাসরি অপমান করলেন তিনি।

সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বানানো এই ভিডিওতে ঠিক কী ছিল? গত ২ রা ফেব্রুয়ারী নাসিফ আক্তার তাঁর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও আপলোড করেন৷ যে ভিডিওতে প্রথমে তুলে ধরা হয় সত্যজিৎ রায়ের ১৯৮৯ সালে একটি ফ্রেঞ্চ তথ্যচিত্রে দেওয়া তাঁর একটি সাক্ষাৎকারের সামান্য অংশ। যেখানে সত্যজিৎ রায়ের একটি বক্তব্য ছিল যে "We have a fairly backward audience here. I must say inspite of the Film Society movement and all that if you consider the large audience, it's a backward audience, unsophisticated audience". সত্যজিৎ রায়ের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি একটি রোস্টিং ভিডিও তৈরি করেছেন। 

সত্যজিৎ রায় এক শ্রেণির বড় সংখ্যক দর্শক আছেন যারা শিল্পের মান যাচাই না করে ছবি দেখেন এবং যারা একটা ছবির মূল ভাবনা বুঝতে না পেরে অযথা সেই ছবি নিয়ে ভুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, সেইসব দর্শকদের উদ্দেশ্য করে তিনি এটা বলেন। অথচ নাসিফ আক্তার সত্যজিৎ রায়ের বক্তব্যের সঠিক মূল্যায়ন না করে উল্টো যুক্তি দেন এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে৷ তাঁর মতে, "সত্যজিৎ রায় যে স্টেটমেন্টটা দিয়েছেন সেটা তিনি ভুল বলেছেন। এটা তাঁর দেওয়া উচিৎ হয়নি৷ তাঁর ছবি কেউ না দেখলে তিনি তাঁকে ব্যাকওয়ার্ড অডিয়েন্স বলতে পারেন না। একজন গরীব রিক্সাওয়ালা কখনোই গরিবী নিয়ে ছবি দেখতে যাবেন না৷ একজন গরীব লোক কী পড়াশোনা করে গরিবীটা দেখতে যাবেন? তিনি অডিয়েন্সকে ছোটো করেছেন। অডিয়েন্সকে ছোটো করার অধিকার তাঁকে কেউ দেয়নি।"    

নাসিফ আক্তার সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বানানো ভিডিওতে সত্যজিৎ রায়ের বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সত্যজিৎ রায়কে গালি পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন। বহু বাঙালি নাসিফ আক্তারের বিরুদ্ধে কমেন্টে প্রতিবাদও করেছেন। বেশিরভাগ দর্শকরা কমেন্টে জানিয়েছেন যে তিনি সত্যজিৎ রায়কে অপমান করে বাঙালির ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেবী ছবির প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় একশ্রেণির দর্শকদের বিপক্ষে ব্যাকওয়ার্ড অডিয়েন্সের ব্যাপারটা বলেন। সত্যজিৎ রায় কমার্শিয়াল ও আর্ট দুই ঘরানার ছবিকেই সমর্থন করতেন। দর্শকদের মন জয় করা বহু মেইনস্ট্রিম ছবির প্রশংসা করেছেন তিনি৷ আসলে সত্যজিৎ রায়ের মতো বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালকদের কখনোই মূল্যায়ন করা চলে না। সত্যজিৎ রায়ের ছবি বেশিরভাগ বাঙালিই পছন্দ করেন। তিনি বাংলা ছবি বানিয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। অস্কারজয়ী একজন পরিচালক কোনো বক্তব্য রাখলে তার একটা উদ্দেশ্য থাকে৷ সাধারণ পরিচালক আর অস্কারজয়ী পরিচালকদের মধ্যে হাজারো তফাৎ থাকে। নাসিফ আক্তার তাঁর ভিডিওতে এমন কিছু বক্তব্য রেখেছেন, যা শুনলে মনে হবে সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে তাঁর পড়াশোনা প্রচণ্ড কম বা নেই বললেই চলে৷ 

আজকালকার যুগে কয়েকজন বাঙালির মধ্যে একটা ট্রেন্ড এসেছে বাঙালি মনীষীদের ট্রোল করে ভিডিও বানানো। এমনকি সেই ভিডিওগুলো সাধারণ পাবলিকও গোগ্রাসে গিলছেন। যা থেকে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে "বাঙালি সমাজ কী অধঃপতনের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে?" নাসিফ আক্তার যে পেশায় আছেন সেটাকে আলাদা ভাবে ব্যবহার করুক৷ তিনি যেহেতু একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সেহেতু তিনি এহেন কাজ করলে সমাজের কাছে একটা ভুল বার্তা যায়। আমরা সকল বাঙালি চাইবো নাসিফ বাবু তাঁর ভুল স্বীকার করে বাঙালির ভাবাবেগে আঘাত করা বন্ধ করুক৷ এভাবে বিখ্যাত হওয়া বেশিদিন সম্ভব নয়৷ 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা