আমফানে বিপর্যস্ত এক কিশোরীর ছবিকে ২০২১-এর শ্রেষ্ঠ ছবির মর্যাদা দিল ইউনিসেফ
সুন্দরবন এলাকায় সামুদ্রিক ঝড় আমফানে বিপর্যস্ত এক কিশোরীর ছবিকে ২০২১ সালে বছরের শ্রেষ্ঠ ছবির মর্যাদা দিল ইউনিসেফ। সুপ্রতিম ভট্টাচার্য নামের এক জনৈক বাঙালি ফটোগ্রাফার তুলেছেন এই ছবিটি৷ আমফান বিপর্যয়ের পর তিনি ছবি তোলার জন্য এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর সময় এক অসহায় মেয়েকে লক্ষ্য করেন। যে মেয়েটি তার ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত চায়ের দোকান ও ঘরের দিকে হতাশাজনক ভাবে বুকের মধ্যে কান্না লুকিয়ে তাকিয়ে আছে। চোখে-মুখে তার একটা অস্থির রাগ বিরাজমান। এই দুঃখময় মুহূর্তকে নিজের ক্যামেরায় বন্দী করেন সুপ্রতিম বাবু।
সুপ্রতিম বাবু বলেন, "ছবির বছর এগারোর মেয়েটির নাম পল্লবী পাড়ুয়া। ঝড়ে ওদের চায়ের দোকান, নামখানা দ্বীপের বাড়ি ভেসে গিয়েছে। ওর মুখে রাগ স্পষ্ট। সেই শক্তিশালী মুখই আমাকে তার ছবি তুলতে বাধ্য করেছে।"
প্রধানত বিশ্বজুড়ে জটিল পরিস্থিতি ও সমস্যার মধ্যে লড়াই করা শিশুরাই এই ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার মূল বিষয়বস্তু। এটাকে নিছকই প্রতিযোগিতা ভাবলে ভুল হবে। এই ছবিগুলোর হাত ধরে উঠে আসে বিশ্বের কাছে নাম না জানা স্থানের দুর্দশার গল্প। সেখানে অসহায় শিশুদের দুরাবস্থার কথা নজরে আসে ইউনিসেফ তথা গোটা বিশ্বের। তাই ফটো-জার্নালিজম, ফটোগ্রাফি এবং সমাজসেবা, তিনটি দিক থেকেই এই প্রতিযোগিতা তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০০ সাল থেকে এটি প্রতি বছর আয়োজিত হচ্ছে।ইউনিসেফ সারা বিশ্ব থেকে মোট তিনজন ফটোগ্রাফারকে পুরস্কৃত করে।
ইউনিসেফের তরফে ২০২১-এর শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি অর্জন করে ফেললেন সুপ্রতিম ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সৌরভ দাস নামের আরেক বাঙালি ফটোগ্রাফার। করোনা পরিস্থিতিতে কুঁড়েঘরে বসে আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনার এক অদ্ভুত ছবির জন্য তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। জামুড়িয়ার একটি রাস্তার পাশে কুঁড়েঘরের সামনে বসে পড়াশোনা করছে একদল শিশু। তাদের সকলের মুখে মাস্ক। দূরত্ব বিধি বজায় রেখে শিশুগুলি নিজেদের আসনে বসে আছে। জামুড়িয়ার বিখ্যাত 'রাস্তার মাস্টার' দ্বীপনারায়ণ নায়েকের সেই অভিনব শিক্ষাদানের ছবিই তোলেন তিনি৷
সুপ্রতিম ভট্টাচার্য ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দুই দশক ধরে তিনি যুক্ত রয়েছেন ফটোগ্রাফির সঙ্গে। তাঁর কাজের ফোকাস সর্বদা থাকে পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ের ওপর। তিনি বাংলাদেশ ও নেপালে মাঠে নেমে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তবে তাঁর প্রধান উদ্বেগ নিজ দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, যেখানে তিনি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলি নিবেদন করে থাকেন।
ফটোগ্রাফির জন্য ইউনিসেফ থেকে তাঁর সম্মান অর্জন এই প্রথমবারই নয়, এর আগে ২০২০ সালে ইউনিসেফের ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ২০২০ তে তিনি এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা খনি ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়াতে ফটোগ্রাফির কাজে যান। ঝরিয়ার কয়লাখাদান অঞ্চলে বসবাসকারী অসহায় বাচ্চাদের একটি ছবির জন্য এই পুরস্কার জিতে নেন তিনি। আর ২০২১ সালে প্রথম পুরস্কার, সব মিলিয়ে ইউনিসেফ থেকে দু-দুবার ফটোগ্রাফির জন্য সম্মানিত হলেন তিনি৷ এই সম্মান তাঁর ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment