Header Ads

সরস্বতীর বরপুত্র বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার সরস্বতী পুজো


সালটা ১৯৫৪। 

সামনে সরস্বতী পুজো। তাই পাড়ার ছোট ছোট ছেলেরা এসেছে এক মহান বিজ্ঞানীর বাড়িতে পুজোর চাঁদা সংগ্রহ করতে। স্বনামধন্য বিজ্ঞানী মহাশয় ওই খোকার দলকে জিজ্ঞেস করলেন, "আচ্ছা, তোমরা কিভাবে সরস্বতীর পুজো কর?" ছেলেদের তো আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। এত বড়ো পণ্ডিত এ কি জিজ্ঞেস করছেন! তিনি তো বিলক্ষণ জানেন কিভাবে সরস্বতী পুজো করতে হয়। যাইহোক, ওরা সবিস্ময়ে চেষ্টা করল সরস্বতী পুজোর পদ্ধতির কথা জানাতে। ওরা বললো, "আমরা সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তি নিয়ে আসব আর পুরুত মশাই এসে মন্ত্র বলে পুজো করবেন। তা ছাড়া সন্ধ্যাবেলায় আমাদের গান আর নাটকের অনুষ্ঠানও আছে। এই ভাবেই আমরা সরস্বতী পুজো করবো।" বিজ্ঞানীবাবু এ কথা শুনে ওইসব ছেলের দলকে বললেন, "আমার সাথে দোতলায় চলো। আমি তোমাদের দেখাব কিভাবে আমি সরস্বতী পুজো করি।"


ছেলেরা কৌতূহল নিয়ে তখনই বিজ্ঞানীবাবুর সাথে তাঁর দোতলার ঘরে এলো। তারা সেই ঘরে যা দেখলো তা দেখে তাদের তাক লেগে গেল। সারা ঘর ভর্তি বই। কয়েক হাজার বই হবে যা আলমারিতে রাখা আছে। বেশ কিছু বই পড়ার টেবিলের ওপর ছড়ানো রয়েছে। টেবিলে বইয়ের সাথে রয়েছে খাতা, পেন, পেন্সিল ইত্যাদি। বই যে কত রকমের ও কত বিষয়ের তার ইওত্তা নেই। বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি সংস্কৃত, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষার বইও রয়েছে। উনি বিজ্ঞান সাধক তাই বেশিরভাগ বই বিজ্ঞানের। কিন্তু বিজ্ঞানের পাশাপাশি ধর্ম, ইতিহাস, দর্শন, অর্থবিদ‍্যা সহ বিভিন্ন বিষয়ের বইও রয়েছে। 

আসলে এই ঘরটি বিজ্ঞানী মহাশয়ের গবেষণা ও অধ‍্যয়নের ঘর। ছেলেরা যখন কৌতূহলে সবকিছু দেখছে তখন বিজ্ঞানী মহাশয় তাদের কৌতূহল ভঙ্গ করে বললেন, "দেখো, এইভাবে আমি সরস্বতীর পুজো করি। আর তোমরা যদি সত্যি কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করো তবে সেটাই হবে বিদ্যার দেবীর অর্থাৎ সরস্বতীর সর্বশ্ৰেষ্ঠ পুজো।"

অসাধারণ উক্তি। বিজ্ঞানীবাবুও এভাবেই সারা বছর সারস্বত সাধনায় মগ্ন থাকতেন। কিন্তু এই স্বনামধন্য বিজ্ঞানী মহাশয়ের নাম কি? তাঁর নাম ড. মেঘনাদ সাহা। বিশ্ববন্দিত এই বিজ্ঞানীর নাম বিজ্ঞান জগতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তাঁর জ‍্যোর্তিপদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার জন্যে। দেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর ভূমিকা যথেষ্ট উল্লেখযোগ‍্য। স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান 'সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স' সহ তিনি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। এই বিজ্ঞানী কাজ করেছেন ডিভিসি প্রকল্প নিয়েও। ভারতের নদী পরিকল্পনা, হিন্দু বর্ষপঞ্জি সংস্কার নিয়েও উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। সামাজিক কাজকর্মেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। আরও অনেক বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক অবদান তাঁর রয়েছে। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত এ দেশের উন্নতির জন্যে তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। এফআরএস (ফেলো অফ দ্য রয়েল সোসাইটি) এই মহান বিজ্ঞানী লোকসভার সাংসদও হয়েছিলেন। 

১৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬। দিল্লিতে তাঁর কর্মস্থল ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিকল্পনা কমিশনের দিকে যাওয়ার পথে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়ে এই মহান বিজ্ঞান অধ‍্যাপক ও গবেষকের মৃত্যু হয়। প্রসঙ্গত, ৬৫ বছর আগের ওই দিনটিতেও ছিল সরস্বতী পুজো। সরস্বতী পুজোর দিনই আমাদের ছেড়ে চলে যান মা সরস্বতীর এই বরপুত্র। 

এবছরও কাকতালীয়ভাবে সরস্বতী পুজো পড়েছিল ১৬ই ফেব্রুয়ারী। 

প্রতিবেদন- ইন্দ্রনীল মজুমদার  

তথ‍্যসূত্রঃ- The Life and Work of Meghnad Saha by Kamalesh Ray


No comments