Header Ads

সত্যি হলো বাঙালি গবেষক অনুভব দত্তের মঙ্গলের বুকে হেলিকপ্টার ওড়ানোর স্বপ্ন


মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোডাইনেমিক্স গবেষক অনুভব দত্ত ছোটোবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন মঙ্গলের বুকে হেলিকপ্টার ওড়ানোর। সেই স্বপ্ন এবার সত্যি হলো। মঙ্গলের বুকে ঘটে গেলো এক মহাজাগতিক দৃশ্য। মানুষহীন রোবোটিক যান 'পার্সিভারেন্স' গত ৭ মাসে ৪৭ কোটি মাইল পাড়ি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় রাত ২ টো ২৩ মিনিটে মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করেছে। এই পুরো মিশনটি সম্পন্ন হয়েছে নাসার তত্ত্বাবধানে। এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আরেক বাঙালি গবেষক সৌম্য দত্ত এবং ব্যাঙ্গালোরের দুই গবেষক স্বাতী মোহন ও বব বলরাম৷ 


মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা অনুসন্ধান চালাবে পার্সিভারেন্স। মঙ্গলের আকাশে এই যানটি থেকে ইনজেনুইটি নামের একটি হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। ইনজেনুইটির মাধ্যমে ধারণ করা লাল গ্রহের প্রথম ছবি এরই মধ্যে নাসা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। ইনজেনুইটির ব্লু প্রিন্ট বানিয়েছিলেন সৌম্য দত্ত এবং ইনজেনুইটি ওড়ানোর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা অনুভব দত্তের। ২০২০ সালের ৩০ শে জুলাই পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ইনজেনুইটি। অবশেষে ১৯ শে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলে অবতরণ করেছে ইনজেনুইটি।

মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করার মুহূর্তে নাসার কন্ট্রোল রুমে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দুই বিজ্ঞানী অনুভব দত্ত ও সৌম্য দত্তের চোখ-মুখ হাসিতে ভরে ওঠে। নাসার এই নতুন অভিযানে তাঁরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাদের এই অভিযান সফল হওয়ার দিকে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। এই অভিযান সফল হলে বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। এই মহাকাশ যানটি মঙ্গলের বুকে যে স্থানে নেমেছে সেই স্থানটির নাম জেযেরো ক্রেটার৷ একসময় এই গহ্বরে বৃহৎ একটি হ্রদ থাকার লক্ষণ কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি থেকে পাওয়া গিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই হ্রদটিতে প্রচুর জল ছিল এবং সম্ভবত সেখানে জীবনও ছিল। অতএব এ অভিযান নিয়ে বড় কিছু আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। 

পার্সিভারেন্সের নেভিগেশন, গাইডেন্স ও কন্ট্রোল অপারেশনের প্রধান ছিলেন স্বাতী মোহন। এই প্রজেক্টটির মধ্যে ইনজেনুইটির চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব সামলেছেন বব বলরাম৷ ইনজেনুইটির ওজন ১.৮ কিলোগ্রাম। যার মধ্যে রয়েছে ২ টি রোটর। যেটি মঙ্গলের পৃষ্টদেশ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ৩০ হাজার ফুট ওপরে উড়তে পারা আর মঙ্গলের আকাশে উড়তে পারা উড়ানের মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্য নেই। যদিও এর জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করে রেখেছেন বাঙালি গবেষকরা। ভেতরে জোড়া হয়েছে একটি ভ্যাকিউম চেম্বার। যা আসমানে হেলিকপ্টারটিকে ভাসতে সাহায্য করছে৷  

মার্চের পর থেকে টানা  একমাস ইনজেনুইটি মঙ্গলের আকাশে চক্কর কাটবে। যা তৈরি করছে নতুন ইতিহাস। আগামী ২ বছর ধরে পার্সিভারেন্স রোভারটি খুঁটিনাটি পরীক্ষা করবে৷ মঙ্গলে বসতি গড়ার লক্ষ্যে রোভারটি প্রয়োজনে অক্সিজেন ও জলেরও সন্ধান চালাবে। মঙ্গল গ্রহ ৯৬ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিপূর্ণ। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন বের করা। যা করা হবে লাল মাটিতে দাঁড়িয়েই। এই অক্সিজেন হয়ে উঠবে বিকল্প জ্বালানি।    

অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের সূত্র জানা যাচ্ছে অভিযানে পাঠানো হেলিকপ্টার সফল হলে ২০৩২ সালে শনির উপগ্রহ টাইটানে পাঠানো হবে আরো বড়ো আকারের হেলিকপ্টার। যার নাম 'ড্রাগনফ্লাই'। ইতিমধ্যেই এর মডেল, নামকরণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা হয়ে গেছে। 

ইনজেনুইটি নামে যে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে মঙ্গলে, স্বপ্ন দেখার শুরুতে সেই হেলিকপ্টারের আকার ও  ওজন অনেকটাই কম ভাবা হয়েছিল। কারণ মঙ্গলে বায়ুমণ্ডল প্রায় নেই বললেই চলে। সেখানকার বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব আমাদের বায়ুমণ্ডলের মাত্র ১ শতাংশ। বেশি ভারী ও আকার প্রকাণ্ড হলে মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলে সাঁতার কেটে ওড়ার প্রযুক্তি নাসার কাছে ছিলনা। তাই ভাবা হয়েছিল হেলিকপ্টারটির আকার হবে সর্বোচ্চ আমাদের এক টাকার কয়েনের মতো। 
  
প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments