Header Ads

পরাধীন ভারতবর্ষের কয়েকজন বঙ্গসন্তানের কলকাতা থেকে সাইকেলে কাশ্মীর অভিযানের কাহিনী || শেষ পর্ব



স্পিডি স্টারস' সংঘের সদস্য পাঁচ বঙ্গসন্তান অতুল্যকুমার বন্দোপাধ্যায়, নীরেন ঘোষ, শিশির বসু, রমণী মিত্র ও কৃষ্ণ দাস ১১ ই এপ্রিল দিল্লি ত্যাগ করলেন। তাঁরা যাত্রা শুরু করলেন লাহোরের দিকে। প্রায় একটানা একাত্তর মাইল অতিক্রম করে পানিপথের যুদ্ধ প্রান্তরে প্রবেশ করলেন। এখানেই ঠিক হলো আশ্রয়স্থল। তারপর তাঁরা একদিন আম্বালা ও লুধিয়ানাতে আশ্রয় নিলেন৷ তাঁরা একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিতে জানানো হয় যে তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ ও আনন্দের সহিত অভিযান করছেন৷  


সুস্থতার সাথে তাঁরা ১৮ ই এপ্রিল পৌঁছালেন লাহারে। কিন্তু এখানে সামান্য সমস্যার সম্মুখীন হলেন তাঁরা। বৃষ্টির জন্য দুই থেকে তিনদিনের মতো লাহারে তাঁরা আটকে পড়লেন লাহোরে। প্রফেসর এস.এন দাশগুপ্ত তাদের নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিলেন। তাঁরা সকলে কিছুটা অবসর নেওয়ার পর আবারো অভিযান শুরু করে দিলেন। ২০ ই এপ্রিল তাঁরা লাহোর ছাড়িয়ে ২১ শে এপ্রিল সন্ধ্যায় ওয়াজিরাবাদে থামলেন। পরবর্তী গন্তব্যের জন্য বেছে নেওয়া হলো ধামপুর। 

২৩ শে এপ্রিল জম্মুর ধামপুরে সকল অভিযাত্রী খানিক বিশ্রামের বন্দোবস্ত করলো। বিশ্রামকালীন সময়ে সকলে মিলে আলোচনা করে স্থির করলেন ২৪ শে এপ্রিল ক্রমাগত অভিযান শুরু হবে। যা একদম গিয়ে শেষ হবে তাদের আসল গন্তব্যস্থান কাশ্মীরে। এবার আর বিশ্রাম না নিয়ে তাঁরা এগিয়ে চললেন কাশ্মীরের দিকে। সহস্র বাঁধা অতিক্রম করে তাঁরা সকল ভয় বিসর্জন দিয়ে ভূস্বর্গের দিকে এগিয়ে গেলেন। 

সৌন্দর্যের মহীমা ছড়িয়ে অপেক্ষায় রয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর। তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কাশ্মীর যেন সেজে উঠছে গর্বিত বঙ্গসন্তানদের বিজয় শুভেচ্ছা জানাতে৷ কাশ্মীর যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের জয়মাল্য গলায় পরিয়ে দিতে। গোটা রাজ্য তথা দেশ মুখিয়ে রয়েছে একটা বড় সাফল্যের দিকে। সকল অভিযাত্রী অবশেষে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলেন। সৃষ্টি হলো একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের। কলকাতা থেকে কাশ্মীর সাইকেলে অভিযান করে জয়ের মুখ দেখলো পাঁচ বঙ্গসন্তান। 

সেদিনের ঐতিহাসিক জয়ের পর কেটে গেছে অনেক বছর। বাঙালি সমাজ বর্তমানে ভুলে গেছে এই অভিযানের কথা। আমরা কেউই মনে রাখিনি এই পাঁচ বঙ্গসন্তানের নাম। মুছে গেছে এই ঐতিহাসিক ঘটনা। কেউ কখনো চেষ্টা করেনি লিখতে পাঁচ বঙ্গসন্তানের সাইকেলে করে কলকাতা থেকে কাশ্মীর যাত্রার কথা। বাঙালির অগোচরে এরকম হাজারো ঘটনা লুপ্ত হয়ে গেছে। কেউ কখনো সংরক্ষণের প্রয়োজনটুকুও বোধ করেনি। তাই এই অভিযানের গল্পটা পড়ার পর সকল বাঙালি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোক বাঙালির ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে। 

পরাধীন ভারতে বীরের মতো দুঃসাহসিক অভিযান মোটেও সোজা ছিলনা। এমন অভিযানের জন্য যেমন মনের জোর প্রয়োজন তেমনই শারীরিক ক্ষমতারও দারুণ প্রয়োজন। লৌহসম হৃদপিণ্ড, দূর্দান্ত পায়ের বল ও শরীরের সমস্ত শক্তি ক্ষয় করে ইতিহাস লেখা একজন বীরের দ্বারাই সম্ভব হয়। সেদিন পাঁচ বঙ্গসন্তান নিজেদের বীর হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছিল৷ তাদের নাম কেউ মনে না রাখলেও বাঙালি অভিযান ভুলে যায়নি। বর্তমানে সত্যরূপ সিদ্ধান্ত সপ্তশৃঙ্গ জয় করেছেন, অনিন্দ্য মুখার্জি সাইকেলে করে সাহারা অভিযান করেছেন। তাই প্রতিটি অভিযাত্রীর ইতিহাস সংরক্ষিত রাখা দরকার। বাঙালি যে কোনো অংশে দুর্বল নয় সেটা বারবার প্রমাণ করে যেতে হবে।

[প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য নীচের লিঙ্কটি ক্লিক করুন https://www.literacyparadise.com/2019/11/blog-post_90.html]

No comments