Header Ads

মধ্যযুগের বাংলা ভাষা সৈনিক কবি আবদুল হাকিমকে ভুলে গেছে বাঙালি


বাংলা ভাষা ধ্বংসের চক্রান্ত হয়েছে বার বার। মধ্যযুগও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ১৬০০ থেকে ১৭০০ সালে আরবি ফারসীর আগ্রাসনে বাংলা ভাষা ধ্বংসের উপক্রম হলে প্রতিবাদ করেন বাঙালি কবি আবদুল হাকিমের মতো মানুষ। তিনি বাঙালি বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবাণী কবিতায় লেখেন - "যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।/সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।"


আজ বাংলা ভাষার শত্রুর যেমন অভাব নেই অতীত ও যে তার ব্যতিক্রম ছিলনা সেটা বোঝা যায় কবি আব্দুল হাকিমের লেখায়। তিনি বাঙালির ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলেন যে শুধু মাত্র আরবী ফার্সী নয় নিজ মাতৃভাষাতেও আল্লাহ ও নবীর বন্দনা সম্ভব। তিনি লেখেন- "আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।/দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।।/আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত।/যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত। / যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।/ সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।।"

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে কবি আবদুল হাকিমের অবদান অনস্বীকার্য। ওনার লেখা 'লালমতী ও শয়ফুলক' কাব্যগ্রন্থটি সারা বাংলাতেই সাড়া ফেলে দেয়। ওনার লেখা অন্যতম জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ গুলি হলো 'ইউসুফ জলিখা', 'কারবালা ও শহরনামা', 'শিহাবুদ্দীন নামা', 'চারি মোকাম ভেদ', 'নূরনামা', 'দূররে মজলিস' ইত্যাদি।
 

যুগে যুগে বিদ্যাসাগরের মতো মানুষ বাংলায় এসেছেন ও বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন। কাকতালীয় ভাবে বিদ্যাসাগর যেমন ১৮২০ থেকে ১৮৯১ পর্যন্ত ছিলেন একইভাবে কবি আবদুল হাকিম ১৬২০ থেকে ১৬৯০ পর্যন্ত বাংলা ভাষার রক্ষাকর্তা ছিলেন। আরবী, ফারসী ও সংস্কৃতে সুপন্ডিত ছিলেন কবি আবদুল হাকিম। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেমন বাঙালি হিন্দুর গোঁড়ামি নিয়ে কাজ করে গেছেন একইভাবে কবি আবদুল হাকিম বাঙালি মুসলিমদের ধর্মান্ধতা নিয়ে কাজ করে গেছেন।

পুরন্দর ভাট যেমন বলতেন 'বাঙালির তরে বাঙালি যদি না কাঁদে চুতিয়া বলে ডাকো তারে ভীমনাদে' একইভাবে কবি আবদুল হাকিম বলতেন "বাঙালি হয়ে যারা বাংলা ভাষার হিংসে করেন তাদের জন্মের ঠিক নেই।" দুর্ভাগ্যের বিষয় বাঙালি এই মহান মানুষটিকে ভুলতে বসেছে। বাঙালির উত্তরন ঘটাতে এই মহান মানুষদের স্মরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments