Header Ads

সুন্দরবনের ইতিহাসে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব


গত ২রা এপ্রিল 'ফিল্ম ও কাহিনী প্রোডাকশন প্রাইভেট লিমিটেড' এর উদ্যোগে 'সুন্দরবন গ্রিন এনভাইরনমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন' এর সহযোগিতায় সুন্দরবনের কুমিরমারি দ্বীপে অনুষ্ঠিত হলো 'সুন্দরবন আর্ন্তজাতিক চলচিত্র উৎসব' এর প্রথম একদিনের অনুষ্ঠান। 'সাউথ কুমিরমারি নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলে'র প্রদর্শন কক্ষে দেশ বিদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী ছবির মধ্যে থেকে কিছু বাছাই করা ছবির প্রদর্শন হয়। স্কুলের তরফ থেকে মাননীয় বিনয় কৃষ্ণ কয়াল, এস.জি.ই.এ এর প্রণবেশ মাইতি এবং ফিল্ম ও কাহিনীর তরফ থেকে অনির্বাণ মাল, দেব গোপাল মণ্ডল ও শুভজিৎ নস্কর এই অনুষ্ঠানের সুচনা করেন। 


এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক সুচনা করে মাননীয় বিনয় কৃষ্ণ বাবু বলেন "আমি আনন্দিত এই অনুষ্ঠানের অংশিদারিত্ব নিতে পেরে, এই উৎসব আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দেশ বিদেশের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আগামীতেও তাঁরা এই ধরনের অনুষ্ঠানের ভাগ নিতে ও সব রকম সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকবো।' পাশাপাশি তিনি স্কুলের সকল শিক্ষক ও অন্যান কর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলে তাঁদের সবার সমর্থন ও উৎসাহ ছাড়া এই অনুষ্ঠান সম্ভব হতো না।

সুন্দরবন গ্রীন এনভায়রনমেন্ট অ্যাসোশিয়েশন এর তরফে প্রণবেশ মাইতি জানান, "কিছুদিন আগেই আমরা গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছিলাম সেখানে নানা রকম সাংস্কৃতিক আদান প্রদান প্রতি বছর হয় কিন্তু এই চলচ্চিত্র উৎসব আরেক ধরনের সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ঘটানোর সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি তাঁদের উদ্বুদ্ধ করবে আগামীতে নিজেদের এলাকার নিজেদের পরিচিত এই ধরনের গল্প বলতে।" 

ফিল্ম ও কাহিনীর তরফ থেকে দেব গোপাল মণ্ডল বলেন "এখন দেশ বিদেশে অনেক চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে, যার বেশিরভাগই শহর কেন্দ্রিক, তাই আমাদের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল ছবির উৎসবকে শহরের বাইরে বার করে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানকার মানুষের কাছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ছবিকে পৌঁছে দেওয়া আর সেই যাত্রা আমরা সুন্দরবন থেকেই শুরু করলাম।" তাঁর সাথে আরেকটু যোগ করে অনির্বাণ মাল বলেন "সুন্দরবন বলতে শুধু নদী বাঘ কুমীর আর পিকনিক নয়, সেখানের মানুষ ও তাঁদের জীবনযাপন আমাদের ছক ভাঙা এই উৎসব। সুন্দরবনের প্রতিটি মানুষ, গাছপালা, নদী, খাঁড়ি ও প্রতিটি জীব ও জীবনকে নিবেদিত।"

"এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা যেমন বিভিন্ন প্রান্তের ছবি দেখিয়ে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান করছি তেমনই কিছু বাছাই করা ছবির মাধ্যমে তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তোলার কাজও করছি" বলেন ফিল্ম ও কাহিনীর আরেক সদস্য শুভজিৎ নস্কর।  


বিভিন্ন বিষয়ে ছবির প্রদর্শন ও ছাত্রছাত্রীদের ভালো লাগা খারাপ লাগা উপলব্ধি, চিন্তাভাবনার ভাগ করে নেবার মধ্যে দিয়ে সফলভাবে এগিয়ে যায় সারাদিনের অনুষ্ঠান। এদিন অনুষ্ঠান শেষে ফিল্ম ও কাহিনী এবং এস.জি.ই.এ-র যৌথ উদ্যোগে 'চেঞ্জ থ্র্যু লেন্স' নামের কর্মশালার সুচনা করেন। এক বছর ধরে এই কর্মশালায় মোবাইল ফটোগ্রাফি ও ফিল্ম মেকিং এর ট্রেনিং দেওয়া হবে, এবং বছর শেষে অংশগ্রহণকারীরা একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের মোবাইল ছবি তৈরি  করবেন যার ভিত্তিতে তাঁদের শংসাপত্র প্রদান করা হবে। পাশাপাশি তাঁদের কাজকে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক উৎসবের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এই প্রসঙ্গে দেব গোপাল বাবু বলেন, "আমি তখন চেঞ্জলুমার, ২০১৪ তে 'প্যাকস', 'ইউ.কে.এইড', 'সি.ওয়াই.সি', 'প্রভা'র তত্বাবধানে ফেলোশিপ করছি, তখন 'প্রান্তকথা'র ফাউন্ডার ডিরেক্টর বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় আমার ক্যাম্পেইনিং এর নাম দেন 'চেঞ্জ থ্র্যু লেন্স' যার মাধ্যমে আমি গ্রাম কেন্দ্রিক ক্যুইয়ার মানুষের লড়াই ও যাপনকে তুলে ধরি একটি কাহিনী মূলক তথ্যচিত্রের মাধ্যমে, যা স্থানীয় স্তরে ও আমার কর্মজীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে। তার পরেই 'ইউ.এন.এফ.পি.এ' ও 'প্রভা'র সহযোগিতায় 'আনমেনিফেস্টো' তে 'চেঞ্জ থ্র্যু লেন্স' কে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে করতে থাকি যাতে বেশ ফল পাই। এ বছরের মার্চেই এই ওয়ার্কশপ কলকাতার রাজাবারের 'রোশনি' গ্রুপের সাথে করি এবং বেশ কিছু গল্প বেরিয়ে আসে যা নিয়ে আমরা আগামীতে এগিয়ে যাবো। তাছাড়াও এই কর্মশালা খুব তাড়াতাড়ি জামশেদপুর সহ ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু জায়গায় করতে চলেছি।"

প্রনবেশ মাইতি বলেন "ঠিকঠাক গাইড পেলে এই বাচ্চারাই আগামীতে তাঁদের বঞ্চনা, অধিকার ও দাবির পাশাপাশি নানা রকম ঘটনাকে বহিঃর্বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে আমাদের কমিউনিটি ভয়েস আরো এমপাওয়ার্ড হবে। যা পরিবর্তনের প্রথম ধাপ। পাশাপাশি তাঁদের মোবাইল অ্যাডিকশন থেকেও বার হতে সাহায্য করবে এই কর্মশালা।" "তাছাড়া এই কর্মশালার মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার গুলো নিয়েও বিভিন্ন স্তরে অ্যাডভোকেসি করবো" বলেন শুভজিৎ নস্কর। 

অনির্বাণ বাবু বলেন "আর্টের কাজ তো শুধু বিনোদন নয় সময় ও সমাজকে তুলে ধরা এই মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু অজানা, বাস্তব গল্পের অপেক্ষায় রইলাম, পাশাপাশি এখানকার বাচ্চাদের ভেতরকার প্রতিভাগুলোকেও বের করে আনা এবং ওদের নিজেদের নিয়ে ভাবতে শেখানো।" 

'চেঞ্জ থ্র্যু লেন্স' কর্মশালায় মোট সাতাশজন অংশগ্রহণ করেছে যাঁদের সবাই শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ও এদের বেশিরভাগই সাউথ কুমিরমারি নগেন্দ্রনাথ হাই স্কুলের এইট নাইন ও টেনের ছাত্র-ছাত্রী। স্কুলের শিক্ষকরা মনে করছেন এটা শুধু তাঁদের কাছে নতুন কিছু শেখার সুযোগ নয়, নিজেদের চেনা ও জানার পথও। তাঁরা উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি তাঁদের ছাত্রছাত্রীদেরও আগামীর জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আগামীতে সব রকম ভাবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments