শুধু ক্ষীরাই নয়, বাংলার আরেকটি ফুলের উপত্যকা নদীয়ার 'চাপড়া'
ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কাজ। ফুলের সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করে তোলে। ফুলের নেশায় উন্মাদ হয়ে আমরা ছুটে চলি আসমুদ্র হিমাচল থেকে কাশ্মীর, কিন্তু আমাদের ঘরের কাছেই যে কত ফুলের উপত্যকা আছে তা জীবনপথে আমরা ভুলে যাই। পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাই যাকে বাংলার ফুলের উপত্যকা বলা হয়। বিঘার পর বিঘা কত রকমারি ফুলের চাষ হয় এখানে। ক্ষীরাইয়ের কথা আমরা বাঙালিরা কম-বেশি সবাই জানি তবে একথা হয়তো জানিনা যে নদীয়ার রানাঘাটের অদূরে অবস্থিত 'চাপড়া'র কথা, যাকে বলা চলে দ্বিতীয় ক্ষীরাই। চাপড়াও হলো বাংলার আরেকটি ফুলের উপত্যকা।
চাপড়াতে মাইলের পর মাইল ফুলের সমাহার লক্ষ্য করা যায়। ফুলের গন্ধে ম ম করে সেখানকার চতুর্দিক। রজনীগন্ধা, মোরগঝুটি, গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, বেবি ফুল, সর্ষে ফুল, এস্টার, গন্ধরাজ ও আরো অনেক রঙবাহারি ফুলের সম্ভার রয়েছে এখানে। মাঠের পর মাঠ এখানে চোখ রাখলে দেখা যাবে শুধু ফুল আর ফুল। যেন এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পীঠস্থান। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রজনীগন্ধা ফুল চাষে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই চাপড়া। প্রায় সারা বছর ধরে রজনীগন্ধা ও গাঁদার চাষ হয় চাপড়াতে। এক বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা চাষ করলে গড়ে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় চাপড়াতে আর গাঁদার ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বিঘা প্রতি নূন্যতম ৫০ হাজার টাকা।
চাপড়াতে ফুলের ফলন আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যহ হু হু করে এখানে বাড়ছে গোলাপ চাষের জমি। নদীয়ার সবচেয়ে ভালো মানের গোলাপ এখানেই পাওয়া যায়৷ এই গোলাপ 'মিনি কুইন' নামে পরিচিত। কারণ এই ফুলের আকৃতি কিছুটা ছোটো কিন্তু ফুটে পড়ছে লাল রঙ। আভিজাত্যে ভিন রাজ্যের গোলাপকে টেক্কা দেয় মিনি কুইন। অন্য গোলাপের থেকে এর দামও কিছুটা কম।
চাষীরা অত্যন্ত পরিশ্রম করে চাপড়াতে ফুল ফলাচ্ছেন। উৎসব-অনুষ্ঠান বিশেষ করে পুজো এবং বিয়ের মরসুমে আকাশছোঁয়া চাহিদা থাকে এখানকার ফুলের। তবে ক্ষীরাইয়ের সাথে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য আছে চাপড়ার যেমন ক্ষীরাইয়ের তুলনায় চাপড়ার ফুলগুলো আকারে অনেক বড়ো। চাপড়াতে ফুল চাষের জমি ক্ষীরাইয়ের থেকে কম। উন্নত প্রযুক্তিতে ক্ষীরাই চাপড়ার থেকে এগিয়ে। ফলনেও ক্ষীরাই চাপড়ার থেকে এগিয়ে। ক্ষীরাইয়ের তুলনায় চাপড়াতে ফুলের দাম একটু বেশি। শুধু সাদৃশ্য বলতে উভয় জায়গাতেই সারাবছর ধরে ফুলের চাষ হয়।
রানাঘাট স্টেশন থেকে টোটো ভাড়া করে সোজা পৌঁছে যাওয়া যায় চাপড়াতে। আজকাল বহু লোকজন এখানে আসছেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ৷ চাপড়া নিয়ে খুব একটা প্রচার হয়নি বলে লোকে ক্ষীরাইকেই চাপড়ার তুলনায় বেশি চেনে। ক্ষীরাইয়ের মতো খুব একটা ভিড় হয়না চাপড়াতে, তবে ইদানীং কিছু ইউটিউবার ও ফেসবুক পেজের দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়াতে মোটামুটি প্রচার হচ্ছে চাপড়াকে নিয়ে।
চাপড়াতে ফুলের দেশ দেখতে গেলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয় তা হলো ফুল গাছে হাত দেওয়া চলবে না। বিনা অনুমতিতে ফুল তোলা বা ছেঁড়া চলবে না। কারণ চাষীরা হাড়খাটা পরিশ্রম করে ফুলগুলোর চাষ করেন। আপনার যদি এখানে কোনো ফুল তোলার ইচ্ছে হয় তাহলে তা চাষীদের কাছে দাম দিয়ে নিন। এগুলো এনাদের জীবিকা। অতএব এখানে ভ্রমণ করার সময় সকলের একটু উচিৎ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। যারা রঙিন ফুলের শোভা প্রাণভরে অনুভব করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে ক্ষীরাইয়ের মতো চাপড়াও নিখাদ আনন্দ প্রদান করবে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
লিটারেসি প্যারাডাইস এখন ইউটিউবেও। ভিডিও দেখার জন্য নীচের ছবিটি ক্লিক করুন।
Post a Comment