Header Ads

বিভাবন-এর ২৬ তম জন্মদিন উপলক্ষে থিয়ে এপেক্সে অনুষ্ঠিত হল নাট্য সন্ধ্যা


বিভাবন-এর শুরু ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের কিছু ছাত্র নাটক করার ইচ্ছায় তৈরি করে এই নাট্যদল। মূলত অন্তরঙ্গ নাটক নিয়ে চর্চা তাদের। এ বছর তাঁরা তাদের চলার ২৫ বছর পূর্ণ করে ২৬ বছরে পড়ল। এই উপলক্ষে গত ১০ ই‌ ডিসেম্বর ২০২১ থিয়ে এপেক্স, দমদমে অনুষ্ঠিত হল এক নাট্য সন্ধে, ছিল গান, আলোচনা ও নাটক। 


বহু বিদগ্ধ মানুষের উপিস্থিতিতে অনুষ্ঠানের  সূচনা হয় রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে। সংবিদা লাহিড়ীর কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান দর্শকদের মোহিত করে রেখেছিল। এরপর ছিল একটি আলোচনা সভা। যার বিষয় ছিল সমকালীন শিল্পচর্চায় থিয়েটারের ভাষা। উক্ত আলোচনায় বক্তা ছিলেন উৎপল ফৌজদার, ইন্দুদীপা সিনহা, সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ। এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুপ্রিয় সমাজদার। সবার প্রথমে বক্তব্য রাখেন উৎপল ফৌজদার। তিনি তার দীর্ঘ থিয়েটার জীবনে যাপনের মধ্যে দিয়ে যে ভাবে দেখছেন বর্তমানে শিল্পচর্চায় থিয়েটারের ভাষাকে তা নিয়ে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করেন। তার কথায় উঠে আসে দেশের ও বিদেশের থিয়েটারের নানান বিদগ্ধ মানুষের প্রসঙ্গ। তারপরে বক্তব্য রাখেন ইন্দুদীপা সিনহা, তিনি  থিয়েটার নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর খোঁজার মধ্যে দিয়ে তার বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন থিয়েটার কেন করব সেই বিষয়টা স্পষ্ট থাকলে থিয়েটারের ভাষা কি হবে তা ধারণা করাটা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়, তিনি বলেন যে থিয়েটার যদি আমার বলতে চাওয়া কথাগুলো হয় তবে এই সময় দাঁড়িয়ে আমার কথা কি এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। 


লকডাউন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ের মাঝের যে ব্যবধান, মানুষের মননের যে পরিবর্তন সেই বিষয়টি বর্তমানে থিয়েটারের ভাষা হয়তো হতে পারে। তারপর বক্তব্য রাখেন সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কিভাবে প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে  থিয়েটারকে ভাবছেন তার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেন। শেষে বক্তব্য রাখেন শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ। তিনি থিয়েটারের দর্শকদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা বলেন। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন আসে বক্তাদের উদ্যেশ্যে। এই আলোচনা কিছু প্রশ্ন আমাদের তুলে ধরে, কেন থিয়েটার, কাদের জন্য থিয়েটার, দর্শক কারা এরকম নানান বিষয়। সঞ্চালক সুপ্রিয় সমাজদার গোটা বিষয়টিকে আরো সহজ করে সকলের সামনে তুলে ধরেন তার মতে দর্শকের প্রতিক্রিয়া একটা নাটক দেখে সঙ্গে সঙ্গে নাও হতে পারে, তিনি বলেন থিয়েটার একজনকে তার অবস্থান থেকে নতুন করে ভাবানোর কাজ করতে পারে।


সমকালীন শিল্প চর্চায় অন্তরঙ্গ নাটক এক ভাষার সন্ধান যা তার আর্থ সামাজিক অবস্থান থেকে উঠে আসে। শেষে উপস্থাপিত হয় বিভাবনের নবতম প্রযোজনা "অন্যপথ"। নাটক ও নির্দেশনা সুপ্রিয় সমাজদার। আলো ও সংগীতের প্রক্ষেপনের দায়িত্বে ছিলেন বিজয়া কর্মকার ও ঈশান কর্মকার। 


নাটকটিতে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয় সমাজদার ও মানসী কুন্ডু। তাদের দুজনের অভিনয় অসামান্য। তারা বেশ কিছু ছোট ছোট মুহূর্তের সৃষ্টি করেন এক মুহূর্তের জন্য দর্শকদের চোখ তাদের উপর থেকে না সরাতে বাধ্য করেছিল। সমকালীন থিয়েটার চর্চার ভাষা কি হতে পারে তার একটা ধারণা এই নাটকটি দেখতে দেখতে পাওয়া যায়। শিল্প ও শিল্পীর সম্পর্ক, থাকা। বিভাবন এর অন্তরঙ্গ নাটক "অন্যপথ" আরো একবার আমাদের নতুন করে ভাবনার মুখে ফেলে দেয় যা আমাদের সময়ের কাছে দাঁড় করায়। 

অনেক শুভেছা রইল বিভাবন এর সবার জন্য এরকম একটি মননশীল সন্ধ্যে আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments