Header Ads

ভাগীরথী গ্রাস করছে সিরাজের প্রাণের হীরাঝিলকে, যা বাঁচাতে লড়ছে 'হীরাঝিল বাঁচাও কমিটি'


মুর্শিদাবাদের ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন। যার মধ্যে কিছু আছে যত্নে, আবার কিছু আছে অযত্নে। ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের একদিকে যেমন আছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধিক্ষেত্র তেমনই অপরদিকে আছে সিরাজের প্রাণের হীরাঝিল প্রাসাদ। যা আজকে অযত্নে অবলীলায় লুপ্তপ্রায়। প্রত্যহ ভাগীরথীর করালগ্রাস তাকে একটু একটু করে লুপ্ত করে চলেছে। এই প্রাসাদকে বাঁচানোর জন্য কখনো কোনো প্রয়াস চোখে পড়েনি। কিন্তু মুর্শিদাবাদের মানুষজন আজকে জেগে উঠেছেন৷ হীরাঝিল প্রাসাদকে বাঁচাতে তাঁরা মরীয়া। 


প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ  সিরাজউদ্দৌলার প্রিয় হীরাঝিল দেখতে মুর্শিদাবাদে ভিড় করেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে তাঁরা সিরাজের সেই প্রাসাদ দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। কারণ পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার মসনদে বসা বিশ্বাসঘাতক উত্তরসূরিদের অবহেলার জন্য  সিরাজের অনেক স্মৃতিই উধাও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সেই তালিকাতেই রয়েছে হীরাঝিল প্রাসাদ। যা বাঁচাতে গণআন্দোলনে সামিল মুর্শিদাবাদের মানুষ, গড়ে উঠেছে 'হীরাঝিল বাঁচাও  কমিটি'। এলাকার মানুষ একত্রিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাধের হীরাঝিল প্রাসাদের সংরক্ষণের দাবিতে। এই আন্দোলনের সঙ্গী হয়েছেন অভিনেত্রী সমর্পিতা দত্ত। শুধু এপার বাংলা নয়, এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বাংলাদেশের খুলনাতে বসবাসকারী নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধরেরাও। 

কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ হীরাঝিল প্রাসাদ সংরক্ষণের দাবিতে জনমত গঠনের চেষ্টা শুরু করেছিলেন। গত বর্ষায় ভগ্নস্তুপের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ে। এরপর আপামর মুর্শিদাবাদের পর্যটনের স্বার্থে, স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় এই ভয়ানক দিন দেখার আগে বেশ কিছু আগ্রহী মানুষ একত্রিত হয়ে তৈরি করেন 'হীরাঝিল বাঁচাও কমিটি'। শুরু হয়, সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে হীরাঝিল বাঁচানোর দাবিতে আবেদনের পালা। এর পাশাপাশি আরম্ভ হয় নিজেদের উদ্যোগে হীরাঝিল সংরক্ষণের প্রয়াসও। পরিস্কার করা হয় হীরাঝিলকে ঘিরে থাকা আগাছার জঙ্গল৷ গত ৫ ই ডিসেম্বর 'হীরাঝিল বাঁচাও কমিটি'র সদস্যবৃন্দরা সকলে মিলে লালবাগ সদরঘাট পশ্চিম পাড়ে জমায়েত করে হীরাঝিলে পৌঁছান। সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করে হীরাঝিল সংরক্ষণের জন্য সরকারি পদক্ষেপের দাবি করা হয়। এরপর আয়োজন করা হয় একটি অঙ্কন ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার। অঙ্কন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল 'তোমার কল্পনায় হীরাঝিল'। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল 'হীরাঝিল প্রাসাদ সংরক্ষণ করা হলে মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার পর্যটনে কতটা উন্নয়ন হবে'।   


হীরাঝিল প্রাসাদ মুর্শিদাবাদের মুকুন্দবাগ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বাঁশ বাগানের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও নবাবের সেই প্রাসাদ। ইতিহাসকে বাঁচানোর জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মতো সংস্থার কাছে আবেদন জানাচ্ছে 'হীরাঝিল বাঁচাও কমিটি'। এমনকি দুই বাংলার নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগে 'অনলাইন পিটিশন'-এরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ সই করেছেন। সমর্পিতা দত্ত বলেন, "মুর্শিদাবাদের ইতিহাস রক্ষার স্বার্থে ও পর্যটকদের কথা ভেবে হীরাঝিল প্রাসাদ সংলগ্ন  ভাগীরথীর পাড় বাঁধাই করে সংরক্ষণ করা দরকার। সে ক্ষেত্রে আশেপাশের গ্রামগুলিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচবে।"

যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ হীরাঝিল প্রাসাদ বাঁচাতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন তাতে সমর্পিতাদের আশ্বাস হীরাঝিল প্রাসাদ আর ভাঙবে না, এবার শুধু গড়বে। মুর্শিদাবাদবাসীদের একাংশের মুখে এখন একটাই স্লোগান "ইতিমাসে গরমিল, জেগে উঠুক হীরাঝিল"। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা 

তথ্যসূত্র- মানস বাংলা, সেভ হীরাঝিল ডট নেট।

লিটারেসি প্যারাডাইস এখন ইউটিউবেও। ভিডিও দেখার জন্য নীচের ছবিটি ক্লিক করুন।







No comments