রবীন্দ্র সরোবরে জলজ প্রাণীদের মড়ক ঠেকাতে তরল অক্সিজেন ব্যবহার করবে কেএমডিএ
মাস দুয়েক আগের ঘটনা, কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবরে ভেসে উঠেছিল একঝাঁক মরা মাছ। যদিও এমনটা প্রথমবারই নয়, এর আগেও সরোবরে একাধিক বার মরা মাছ ভেসে উঠেছে। সরোবরকে ঘিরে বারংবার উঠে আসছে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ। পরিবেশবিদদের দাবি, অপরিচ্ছন্নতা ও মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণেই সরোবরের জলে কমছে অক্সিজেনের মাত্রা।
কেএমডিএ-র সিইও অন্তরা আচার্যের মতে, সরোবরে বারবার এই মাছেদের মৃত্যুমিছিলের ঘটনায় একটি এক্সপার্ট কমিটি তৈরি করা হয়৷ তাঁরাই খতিয়ে দেখে জানিয়েছেন, কীভাবে জলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। বহু মাছ ও পাখির বাসস্থান হলো এই সরোবর। একে রক্ষা করা জরুরি।
রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে শুরু করে একাধিক সংস্থার রিপোর্টে জানা যায়, সরোবরের জলে অক্সিজেন মাত্রা কমে যাওয়াই মাছেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। গত নভেম্বরে রবীন্দ্র সরোবরের জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে জলের মধ্যেই 'এরেটর' নামের এক বিশেষ যন্ত্র বসিয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ। এই যন্ত্রে লাগানো আছে এক ধরনের চাকা। যা ঘুরলেই জলের মধ্যে একটি আলোড়ন তৈরি হয়। এর ফলে বাড়তে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। চারটে এরেটরও বসানো হয়৷ এছাড়াও সরোবরের জলে অনবরত স্রোত বজায় রাখতে কয়েকটি ফোয়ারাও বসানো হয়েছিল। তারপরও সমস্যা এতটুকু কমেনি৷ সরোবরের জলে বিভিন্ন ক্লাবের তরফে চলে নৌকা বাইচের প্রশিক্ষণ। হয় প্রতিযোগিতাও৷ এরূপ অবস্থায় এরেটর অথবা ফোয়ারা থাকায় নৌকা বাইচের সমস্যা হতে থাকে। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই সরোবরের জলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে পুনরায় বিকল্প পথের সন্ধান করতে থাকে কেএমডিএ৷
নানান ভাবনাচিন্তা ও আলোচনার পর অবশেষে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পৌর উন্নয়ন সংস্থা। রবীন্দ্র সরোবরের জলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এবার থেকে কৃত্রিমভাবে ব্যবহার করা হবে তরল অক্সিজেন। চলতি মাসেই সম্ভবত কাজ শুরু হবে এই প্রকল্পের। এই তরল অক্সিজেন আসলে কী? তরল অক্সিজেন হলো দ্বি পরমাণু অক্সিজেনের তরল রূপ। এর ব্যবহার দেখা যায় মূলত মহাকাশ, ডুবোজাহাজ ও গ্যাস শিল্পে। তরল অক্সিজেন একটি খুব শক্তিশালী জারকও, জৈব পদার্থ তরল অক্সিজেনে দ্রুত পুড়েও যায়৷
কেবল তরল অক্সিজেনের ব্যবহারের ওপরই জোর দেবেনা কেএমডিএ৷ সরোবরের অন্যান্য বিভিন্ন দিকও খতিয়ে দেখবে তাঁরা। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন সরোবরের পলি সরিয়ে জলস্তর আরও বাড়াতে পারলেও অক্সিজেন লেভেল বাড়বে। অবশ্য কেএমডিএ এ বিষয়ে জানাচ্ছে, "এটি বহু পুরানো একটি জলাশয়। বহু বছর ধরে এখানে পলি পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে এখানে নিজস্ব বাস্তুতন্ত্রও গড়ে উঠেছে। কোনও কিছুই এখানে রাতারাতি নিক্ষেপ করা যাবে না।"
রবীন্দ্র সরোবরের নীচে পলির স্তর প্রায় ২০ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছে। কলকাতা পৌর উন্নয়ন সংস্থার কর্তাদের মতে, এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে টিকে থাকা একটি সরোবরে পলির স্তর উঁচু হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment