ঠোঙা বেচে পড়াশোনার খরচ জোগাতেন মা, স্ট্যানফোর্ডের তালিকায় ডাঃ উজ্জ্বল পোদ্দার
আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের তালিকা। যে তালিকায় জ্বলজ্বল করছে বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ উজ্জ্বল পোদ্দারের নাম৷ যিনি শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন৷ তাঁর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পিছনে রয়েছে একটি স্ট্রাগলের গল্প৷ নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়ে সেখান থেকে জীবনে বড় কিছু করতে যাওয়াটা বেশ কঠিন। জীবনপথে অজস্র ত্যাগকে মাথা পেতে সহ্য করা, আর্থিক অনটনের মুখোমুখি হওয়া ও কাঠফাটা পরিশ্রম করে দিন কাটানোর অধ্যায় শেষ করে তার এখন নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের পাতিরাম গ্রামে জন্ম হয় উজ্জ্বল পোদ্দারের। ২০০৮ সালে তিনি পিতৃহারা হন। তাঁর বাবার একটি দোকান ছিল। কিন্তু তাঁর বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক আর্থিক সংকটের জন্য বিক্রি করে দিতে হয় সেই দোকানটিকে। তিনি ও তাঁর ভাই উৎপল পোদ্দারের পড়াশোনা তখন মাঝপথে। এমতাবস্থায় সংসারের হাল ধরলেন তাঁর মা। ঠোঙা ও ঘুঁটে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে থাকেন তাঁর মা। সেই অর্থে তিনি ও তাঁর ভাইয়ের পড়াশোনা চলতে থাকে।
ডাঃ উজ্জ্বল পোদ্দারের শৈশব জীবনটা পাতিরাম গ্রামেই কেটেছে। তিনি আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতোই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এই তিনটি স্তরে পড়াশোনা করেছেন সরকারি স্কুলে৷ এরপর বালুরঘাট কলেজে পড়াশোনা। তারপর লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে মেডিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা করে সেখানেই তিনি চিকিৎসকের কাজ শুরু করেন। সম্প্রতি তাঁর গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
সব মিলিয়ে ১৮০ টি গবেষণাপত্র লিখেছেন তিনি। তার মধ্যেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৫৯ টি যাচাই করেছে। এরপরই ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত তালিকায় নাম উঠে আসে ডাঃ উজ্জ্বল পোদ্দারের। এশিয়ার যে দুজন পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্টের নাম ঐ তালিকায় রয়েছে তার মধ্যে ডাঃ উজ্জ্বল পোদ্দার অন্যতম।
ছেলের এমন সফলতার জন্য গর্বিত তাঁর মা। তবে তিনি এখন অসুস্থ। উজ্জ্বল পোদ্দারের ভাই উৎপল পোদ্দার মোটা মাইনের সরকারি চাকরি করেন। উজ্জ্বল বাবুর গবেষণাপত্রের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কী ছিল সেই বিষয়? প্রধানত আমেরিকার গম থেকে অ্যালার্জির প্রবণতা রয়েছে। ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলেও ছিল এই প্রবণতা। এসব বিষয়ই তিনি বিশদে নিজের গবেষণাপত্রে আলোকপাত করেছেন।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment