Header Ads

দৃষ্টিহীন হয়েও কৃষ্ণচন্দ্র দে হয়ে উঠেছিলেন দেশের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুরসাধক


দৃষ্টিহীন এক কিশোর হয়ে উঠেছিলেন দেশের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুরসাধক। পড়াশোনায় মেধাবী কৃষ্ণচন্দ্র এক বিকেলে ছাদ থেকে ঘুড়ি উড়িয়ে নীচে এসেছেন, মাকে দেখে বললেন মা দেখো আমার চোখটা কীরকম জ্বালা করছে, কেমন যেন সব অন্ধকার, কিছুই ভাল করে দেখতে পারছেন না।


পুত্রের কাতরতায় মা সন্তানের যন্ত্রণা অনুভব করছেন, বিলম্ব হল না চিকিৎসার৷ কলকাতা মেডিকেল কলেজের এক বড় সার্জেন কিশোর কৃষ্ণচন্দ্র দে'র চোখের পরীক্ষা করলেন, কিন্তু তিনি আশার কথা শোনাতে পারেন নি৷ শুধু এটুকু বলেছিলেন কিশোর কৃষ্ণচন্দ্রের চোখের যা অবস্থা এর সম্ভাব্য পরিণতি অন্ধ হয়ে যাওয়া৷ তবুও ডাক্তার একটা শেষ চেষ্টা করলেন এবং দিলেন একটা চোখের ড্রপ, রাতে শোওয়ার আগে চোখে দেওয়ার কথা বলা হল, সম্ভাব্য পরিণতির কথা জানিয়েও ডাক্তারবাবু বলেছিলেন যদি একটু ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকে তবে ওই চোখের ড্রপে ভালো হবে৷ না ভালো কিছু হয় নি,বরং ডাক্তারবাবু যে সম্ভাব্য পরিণতির কথা বলেছিলেন ঘটল ঠিক সেটাই, কিশোর কৃষ্ণচন্দ্র শোওয়ার আগে চোখের ড্রপ দেওয়ার পরে আর দেখতে পেলেন না, হয়ে গেলেন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন৷

এইটুকু ছেলে সামনে অনন্ত জীবন অথচ দৃষ্টিহীন হয়ে গিয়েছে সে কি করবে ভবিষ্যতে, কেমন ভাবে দাঁড়াবে নিজের পায়ে, কেমন ভাবেই বা সে লোকের অনুগ্রহ ছাড়া জীবনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করবে, মাতা রত্নমালা দেবীর মনে শুধু সেই চিন্তা, লুকিয়ে চোখের জল ফেলেন অথচ সেই যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিব্যক্তি কিছুতেই প্রকাশ করেন না, ববং তাঁর কথায় থাকে অন্ধত্ব কে হারিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ের কথা, মায়ের কথায় ছেলে কৃষ্ণচন্দ্র অনুপ্রেরণা পান৷ মা যে শুধু মা'ই হন, রত্নমালা দেবী লক্ষ করেছিলেন কীর্তনীয়া বাড়ি বাড়ি খঞ্জরী বাজিয়ে কীর্তন শোনায় তারা চলে যাওয়ার পর ছোট ছেলে বাবু গানগুলো হুবহু গেয়ে দেয়, সুর, কথা একদম ঠিকঠাক কোনও ভুল হয় না৷

মায়ের চোখ বলে কথা, তাঁঁর পর্যবেক্ষণ ছেলে দৃষ্টিশক্তি হারাবার পর তাঁর অন্য ইন্দ্রিয়গুলো যেন আরও সজাগ হয়েছে, ধারালো হয়েছে, তীক্ষ্ণ হয়েছে৷ এরপর তিনি আর দ্বিধা করেন নি ছেলেকে গান শেখানোর সিদ্ধান্ত নিতে৷ নিজের সংকল্পে দৃঢ় মা খোঁজ পেয়েছিলেন জোড়াসাঁকোর কাছে এক বিত্তশালী ভদ্রলোক থাকেন, তিনি নিজেও খুব চমৎকার সুরবাহার বাজান৷ কৃষ্ণচন্দ্র কে সেই ভদ্রলোকের কাছে নিয়ে গেলেন মা, ভদ্রলোকের নাম হরেন্দ্রনাথ শীল, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রে ভদ্রলোকের যতেষ্ট অবদান আছে৷ মান্না দে'র ঠাকুমা দৃষ্টিহীন ছোট ছেলেকে হীরুবাবুর বাড়িতে বসিয়ে আসতেন, সারাদিন সেই বাড়িতে গান শুনতেন কিশোর কৃষ্ণচন্দ্র, তারপর মা তাঁকে বাড়ি নিয়ে এলে তিনি সেই গান নিখুঁতভাবে গাইতেন৷ সেই দৃষ্টিহীন কিশোরই হয়ে উঠেছিলেন দেশের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুরসাধক।

সত্যি কথা বলতে কি কৃষ্ণচন্দ্র দে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুরসাধক হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তাঁর মায়ের জন্য, এমন কি মান্না দে বোধহয় কোনওদিন বিখ্যাত মান্না দে হতে পারতেন না যদি কৃষ্ণচন্দ্র দে তাঁর কাকা না হতেন৷ 

প্রতিবেদন- অরুণাভ সেন

তথ্যসূত্র- জীবনের জলসাঘর, মান্না দে


No comments