Header Ads

স্ব-মহীমায় প্রত্যাবর্তন শতবর্ষ প্রাচীন বাঙালি প্রযোজনা সংস্থা অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের


আবারো প্রযোজনার দায়িত্ব নিয়ে স্ব-মহীমায় হাজির হয়েছে প্রখ্যাত বাঙালি প্রযোজনা সংস্থা 'অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন'৷ তাঁদের প্রযোজিত যে ছবি নিয়ে কয়েকমাস ধরেই আলোচনা চলছে, তা হলো পরিচালক রাজদীপ পাল ও শর্মিষ্ঠা মাইতি পরিচালিত ছবি 'কালকক্ষ'। বিভিন্ন কলাকুশলীর একনিষ্ঠ প্রয়াসে কালকক্ষ বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত এবং সম্মানিত হয়েছে। ২৬ তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৪ টি প্রতিযোগিতা মূলক বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিল এই ছবি। সপ্তম ক্যালাইডোস্কোপ ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব, বোস্টনে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে নর্থ আমেরিকাতে প্রিমিয়ার হওয়ার পর ৫২ তম  আন্তর্জাতিক ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব, গোয়াতে ইন্ডিয়ান প্যানোরমার সম্মান জিতে নেয় এই ছবি। 


অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। বাংলার শতবর্ষ প্রাচীন এক প্রযোজনা সংস্থা হলো অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন। যার বয়স বর্তমানে ১১৫ বছর। দীর্ঘ ৪৫ বছর তাঁদের প্রযোজনায় মুক্তি  পেতে চলেছে কোনো ছবি। 'কালকক্ষ'র মাধ্যমেই প্রযোজনার কাজ পুনরায় আরম্ভ করেছে এই সংস্থা। তাঁদের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর 'ময়না তদন্ত'। 

১৯০৬ সালে অনাদিনাথ বসু প্রতিষ্ঠা করলেন 'ম্যাজিক থিয়েট্রিকাল কোম্পানি'। পরবর্তীকালে যার নামকরণ হয় 'অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন'। কোম্পানিটি সে সময়ে বাংলার বিভিন্ন স্থানে চলচ্চিত্র, জাদু ও নাটক দেখাতো। কোম্পানিটি কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের নির্বাক চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছিল, সেগুলোতে নারী নৃত্যশিল্পীরা অভিনয় করেছিল এবং হস্ত-ক্যামেরা দিয়ে চিত্রধারণ করা হয়েছিল। এছাড়াও কোম্পানিটি নিউজ রিল তৈরি শুরু করে এবং বিদেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানি শুরু করে।

তথ্যচিত্রের প্রতি প্রায়শই আলাদা আগ্রহ ছিল অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের। বিভিন্ন মেলা, উৎসব ও জমিদার বাড়িতে অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের বানানো তথ্যচিত্রগুলো দেখানো হতো।  তাঁদের প্রথম কাহিনীচিত্র 'রত্নাকর'। যা প্রদর্শিত হয়েছিল ভবানীপুরের রসা থিয়েটারে। তারপর একে একে 'কেলোর কীর্তি', 'কৃষ্ণকান্তের উইল', 'নিয়তি'র মতো কাহিনীচিত্র নির্মাণ করে এই সংস্থা। কেবল বাংলা ছবিই নয়, তামিল, তেলুগু, ওড়িয়া ও উর্দু ছবি প্রযোজনারও ইতিহাস রয়েছে  অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের। 

তাঁদের নির্মিত 'প্রহ্লাদ' ছবিটির মেকিং সেসময় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। 'অযান্ত্রিক', 'জলসাঘর', 'হরিশ্চন্দ্র', 'ভগিনী নিবেদিতা', 'রাজা রামমোহন' ও 'আরোগ্য নিকেতন'-এর মতো একগুচ্ছ ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছে অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন। তাঁদের প্রযোজিত ছবি 'ভগিনী নিবেদিতা'র শুটিং হয়েছিল বিলেতে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা হলো, অনেকে হয়তো মনে করেন একবিংশ শতকের গোড়ার দিকেই বাংলা ছবি বিদেশে শুটিং শুরু করেছে। কিন্তু না, সাদাকালো ছবির যুগেও বহু বাংলা ছবির শুটিং হয়েছে বিদেশে। 

অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের ছবি তৈরির ইতিহাসে এমন কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত আছে যা বাঁধিয়ে রাখার মতো যেমন- ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন ও সত্যজিৎ রায়ের মতো বিশ্ববরেণ্য পরিচালকেরা তাঁদের ব্যানারে ছবি বানিয়েছেন। অরোরা কর্পোরেশনের ছবি 'রাজা রামমোহন' ও 'আরোগ্য নিকেতন' জাতীয় পুরস্কার জিতেছিল। তাঁদের প্রযোজিত ও পরিবেশিত একাধিক বাংলা ছবি মাইলফলক অর্জন করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'পথের পাঁচালী' ও 'অপরাজিত'।

১২৫ এ, লেনিন সরণী হলো অরোরার অফিসের ঠিকানা। 'ময়নাতদন্ত' ছবির ৪৫ বছর পর এই প্রযোজনা সংস্থার নতুন ছবি 'কালকক্ষ' মুক্তি পেতে চলেছে। যে ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়, জনার্দন ঘোষ এবং তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। এ ছবির জন্য সপ্তম ক্যালাইডোস্কোপ ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব বোস্টনে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জুরি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। 

অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের বর্তমান কর্ণধার হলেন অঞ্জন বসু। তিনি মনে করেন ভালো চলচ্চিত্র তৈরি করতে হলে প্রয়োজন উন্নতমানের স্টুডিও। তাই বিধাননগরে এক একর জমিতে তিনি এক অত্যাধুনিক স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। তাঁর প্রযোজিত ছবি 'কলকক্ষ' একটি আন্তর্জাতিকমানের ছবি হতে চলেছে। যে ছবিকে ঘিরে তিনি স্বপ্নের জালবুনন করছেন। তাঁর কোম্পানির হাত ধরে নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মনে করেন, তাঁর ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হলে হোক, কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ তাঁরা ফিরিয়েই আনবেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন এবার থেকে নিয়মিত ছবি তৈরি করবে।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments