Header Ads

এক বাঘবিধবার পুরো সংসারের দায়িত্ব নিল 'পথের সাথী কলকাতা'


অঞ্জলি বৈদ্যের ছোটো সংসার সুখে শান্তিতে বেশ ভালোই চলছিল। তিনি ও তার স্বামী রতন বৈদ্য এবং ছেলে অপূর্ব ও মেয়ে অনন্যা মোট চারজনের ছোটো পরিবার ছিল তার। গত ফেব্রুয়ারিতে সেই পরিবারের বুকে নেমে আসে দুর্যোগ। অঞ্জলি বৈদ্যের স্বামী রতন বৈদ্য বাঘের আক্রমণে মারা যান৷ স্বাভাবিক ভাবেই অঞ্জলি দেবীর সংসারে আর্থিক অনটন শুরু হয়৷ তার সুখী পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে৷  


অঞ্জলি দেবীর কপালে চিন্তার ভাঁজ লক্ষ্য করা যায়। তার ছেলেমেয়ের বয়স একেবারেই কম, তারা দুজনেই শিশু।  নিজের ছেলেমেয়েকে তিনি কীভাবে বড় করবেন কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার কঠিন সময়ে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে পথের সাথী কলকাতা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই ভেসে যাওয়া পরিবারের পাশে প্রথম থেকেই উজ্জ্বল সরদারের সহায়তায় পথের সাথী কলকাতা যথাসাধ্য ভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। 

ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে মোট দুবার তাদের এক মাসের করে রেশন দেওয়া হয়। যদিও এটাকে স্থায়ী সমাধান বলে মনে হয়নি সংস্থাটির। তাঁরা চেয়েছিলেন একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি। এরপরই অঞ্জলি দেবী পথের সাথী কলকাতার সম্পাদিকা সুমিতা মুখোপাধ্যায়কে জানান যে তিনি আর ওখানে থাকতে পারছেন না। ভাঙা দরজা দিয়ে রাত্রিবেলায় নানাভাবে তাকে উত্যক্ত করা হচ্ছে। প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। তিনি তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্রচণ্ড দিশেহারা। এমতাবস্থায় পথের সাথী কলকাতার তরফ থেকে সুমিতা মুখোপাধ্যায় ও উজ্জ্বল সরদার পরিস্থিতির সামাল দিতে এগিয়ে আসেন। পথের সাথী কলকাতার এক সদস্য বন্ধু তাদের নিউ টাউন রামকৃষ্ণ সেবা মিশনে খবর দেন। সেই সূত্র ধরেই তারা ওখানে একাধিকবার গিয়ে মহারাজের সঙ্গে কথাবার্তা বলে অঞ্জলি দেবীর ছেলেকে আবাসিক মিশনে রাখার ব্যবস্থা করেন। গত ১৫-ই নভেম্বর অঞ্জলি দেবী সুমিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে উঠে এসেছেন। এরপর ১৭ ই নভেম্বর সুমিতা মুখোপাধ্যায় ও শিল্পী দেবী অঞ্জলি দেবীর ছেলেকে মিশনে ভর্তি করে দেন। 

পথের সাথী কলকাতার তরফে জানা গেছে, অঞ্জলি বৈদ্যের ছেলে অপূর্ব ওখানে বেশ আনন্দেই রয়েছে। এমনকি স্বামী হরিময়ানন্দ মহারাজ খুবই স্নেহশীল একজন মানুষ। উনিই নিয়মিত অঞ্জলি দেবীকে খবর দিচ্ছেন। সামনের জানুয়ারিতে মিশন থেকেই অপূর্বকে সরকারি স্কুলে ক্লাস ওয়ান এ ভর্তি করা হবে। অঞ্জলি দেবী সুমিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে আছেন। তার জন্য হোম ডেলিভারির একটা ব্যবসার কথা মাথায় রেখেছেন সুমিতা মুখোপাধ্যায়। অঞ্জলি দেবীর মেয়েটিও সুমিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে আছেন। তাকেও একটু তৈরি করে আগামী জানুয়ারি মাসে কোন একটি মিশন বা orphan house এ দেবার চেষ্টা করছেন তিনি। 

সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথমবার কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একজন বাঘবিধবার সংসারের পুরো দায়িত্ব নিয়ে তাকে ভবিষ্যতের একটা আশার আলো দেখালো। পথের সাথী কলকাতার এই মহৎ কাজের জন্য খুশী বহু শুভানুধ্যায়ী মানুষ। এভাবে প্রতিটি সামাজিক সংগঠন, এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এক একজন অসহায় মানুষের দায়িত্ব নিলে সমাজ থেকে মুছে যাবে দারিদ্র্যতা ও জ্বরা ভয়৷ পথের সাথী কলকাতা যা করে দেখালো তা এক বৃহত্তর মানবিক দৃষ্টান্ত। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments