Header Ads

দুই বাঙালি ভাই-বোনের হাত ধরে ফুচকা ব্যবসাতেও আসছে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া


"ইঞ্জিনিয়ার ছেলেমেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ফুচকা ব্যবসা করছে। এদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না। আজকালকার ছেলেমেয়েগুলো এভাবেই গোল্লায় যাচ্ছে।" আমাদের সমাজের চারপাশে এই ধরণের কটুকথা সর্বদা শোনা যায়৷ অধিকাংশ মানুষজন ভুলে যান পৃথিবীতে কোনো কাজই ছোটো নয়। ভালোবেসে সেই কাজকে গ্রহণ করতে পারলেই সফলতা পাওয়া যাবে।  


খড়দহের ছেলে দেবজ্যোতি সাহা ও তার বোন জ্যোতির্ময়ী সাহার উদ্যোগে খড়দহে খুলেছে একটি ফুচকা পার্লার। যা বেশ রমরমিয়ে চলছে। এই ফুচকা পার্লারের নাম রাখা হয়েছে 'ফুচকাওয়ালা'। বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় ফুচকার মতো এক মুখরোচক খাবারকে নিয়েও কতরকম এক্সপেরিমেন্ট করে ব্যবসা করা যায় সেই রাস্তা দেখাচ্ছে তারা। তাদের ফুচকা পার্লারে পাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকায় ৮ টা ফুচকা। সঙ্গে থাকছে চিকেন ফুচকা, আইসক্রিম ফুচকা, চকলেট ফুচকা, কর্নচিজ ফুচকা ও চিংড়ি ফুচকা। 'ফুচকাওয়ালা' তে এসেও যেমন আপনি ফুচকা খেতে পারবেন তেমনই আপনার একটা কলে বাড়িতেও পৌঁছে যাবে 'ফুচকাওয়ালা'র ফুচকা। জোমেটোতেও অর্ডার করা যাচ্ছে এখানকার ফুচকা। 

কীভাবে তৈরি হলো 'ফুচকাওয়ালা' নামক এই ফুচকা পার্লারটি? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে একটা বছর আগে৷ দেবজ্যোতি সাহা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন যুবক৷ সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছে। দেবজ্যোতি সাহার বোন জ্যোতির্ময়ী সাহা প্রাইভেট কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করছে। জ্যোতির্ময়ীর স্বপ্ন সে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি. টেক করে একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করবে। ২০২০ সালে মে মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবের জন্য দেবজ্যোতির মাইনে অর্ধেক হয়ে যায়। যার ফলে তাদের পরিবারে টান পড়তে থাকে। 

দেবজ্যোতিদের শেষ সম্বল বলতে ছিল বাবার একটি মুদিখানার দোকান৷ যা ১০ বছর ধরে বন্ধ। তারা কোনরকম দু-তিনমাস চালানোর পর ভাবতে বসে কী করে তাদের পরিবারের অভাবমোচন করা যায়। শেষমেশ ফুচকা ব্যবসাকেই তারা বেছে নেয় নিজেদের ভবিষ্যৎ হিসেবে। তৈরি হলো 'ফুচকাওয়ালা' নামক এক ফুচকা পার্লার। 

তারা ফুচকা ব্যবসা শুরু করার পর নানাজনের কাছে তাদের নানান কটুক্তি সইতে হয়েছে। কথায় আছে 'যে সয় সে রয়', তাই তারা কোনোরকম কটুক্তিকে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের কাজেই ব্যস্ত থাকে। আজ তারা বহুদূর  এগিয়েছে। তাদের ফুচকা পার্লারের সুনাম এখন লোকেদের মুখে মুখে ঘুরছে। তারা অল্প সময়ে বহুদূর এগিয়েছে। জ্যোতির্ময়ী সাহা এখন আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারছে বি.টেক পড়তে যাওয়ার। তারা ভবিষ্যতে 'ফুচকাওয়ালা' কে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। 

এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে 'ফুচকাওয়ালা' নিয়ে তুমুল চর্চা হচ্ছে। সকলে তাদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। মানুষের প্রচণ্ড ভালোবাসায় ভরে উঠছে 'ফুচকাওয়ালা'। দুই ইঞ্জিনিয়ার ভাই-বোন গর্বের সাথে নিজেদের ফুচকাওয়ালা মনে করে৷ এ কাজে তারা ভয় পায় না। বরং উল্টে অনেক শক্তি খুঁজে পায়৷  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments