বালি দ্বীপের প্রকৃতি প্রেমিকদের উদ্যোগে কুমিরমারি সহ কয়েকটি গ্রামে চলছে কমিউনিটি কিচেন
ইয়াসের ধাক্কায় উপকূলীয় সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি দ্বীপ ক্ষতিগ্রস্ত। তার মধ্যে অন্যতম গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত কুমিরমারি দ্বীপ। একদিকে ভরা কোটাল তো অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের ফলে কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে, কোথাও বাঁধের জল উপচে এই দ্বীপের ৭০ শতাংশ জলমগ্ন হয়ে গেছে।
কুমিরমারি দ্বীপের লোকসংখ্যা ১৮,০০০ এর থেকে একটু বেশি৷ ইয়াসের ফলে কুমিরমারির প্রায় ১৪,০০০ জন মানুষ বিপর্যস্ত। কুমিরমারির লোকেদের বিপদমুক্ত করতে শহর থেকে অনেক সংগঠন ও সংস্থা চিঁড়ে, গুড়, পাটালি, ছাতু ও বিস্কুট প্রভৃতি ত্রাণ পাঠায়। কিন্তু দ্বীপের মানুষ ভালোভাবেই জানেন যে চিঁড়ে-গুড় খেয়ে দুদিন হয়তো লড়াই করা যাবে। এমতাবস্থায় এই বিপদগ্রস্ত মানুষদের দু'বেলা দুমুঠো গরম ভাতের খুব দরকার। তাই 'বালি নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কন্সারভেসন সোসাইটি'র উদ্যোগে কুমিরমারিতে শুরু হয়েছে কমিউনিটি কিচেন।
কুমিরমারিতে 'বালি নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কন্সারভেসন সোসাইটি'র কমিউনিটি কিচেন গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে। কুমিরমারির পাশাপাশি সোনাগাঁ, ছোট মোল্লাখালি ও তারানগরের মত গ্রাম গুলিতেও তাঁদেরই পরিচালিত কমিউনিটি কিচেন। সমস্ত কমিউনিটি কিচেন মিলিয়ে মোট ৩০০০ জন মানুষকে দু'বেলা পাত পেড়ে পেট ভরে ভাত, ডাল, তরকারি খাওয়ানো হচ্ছে। তরকারির মধ্যে কখনো থাকছে সোয়াবিন, কখনো থাকছে ডিম।
জলের তোড়ে দ্বীপের অনেক জনমানবদের কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। অনেক মানুষের বাড়ির উঠোন ও রান্নাচালাতেও জল জমে থাকার জন্য রান্না করতে গিয়ে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁদের। সেজন্য কমিউনিটি কিচেনে বাড়ির মেয়েরা মশলা বাটছেন ও ছেলেরা রান্না বসাচ্ছেন৷
'বালি নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কন্সারভেসন সোসাইটি' নামের এই সংগঠনটি সাত বছর ধরে নানান সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। অসংখ্য মহৎ কাজের সাথে এই সংগঠন যুক্ত থাকলেও টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের প্রচারের আড়ালেই তাঁদের থেকে যেতে হয়েছে। এই সংগঠনের সেক্রেটারি হলেন অনিল মিস্ত্রি। এছাড়াও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক ভলেন্টিয়ার। সুবল, মহাদেব, বাপি, সঞ্জয় হলেন সংগঠনের মূল স্তম্ভ। এনারা ছাড়াও আরো অনেক সক্রিয় ভলেন্টিয়ার রয়েছে সংগঠনে।
এই সংগঠনের প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে সুন্দরবনের বালি দ্বীপের কয়েকজন বাসিন্দা মিলে তৈরি করেছেন 'বালি নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কন্সারভেসন সোসাইটি'। তাঁরা শহরের লোকেদের মতো গুছিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন না, তাঁরা ফেসবুকে লাইভও করতে জানেন না। কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখাও এদের পক্ষে সম্ভব নয়। এনারা কেবল কাজকে ভালোবেসেই এগিয়েছেন। তাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সুষ্ঠুতার সাথে কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করছেন। তাঁরা যথেষ্ট মানসম্পন্ন পরিষেবা প্রদান করছেন কুমিরমারির মানুষজনকে।
দ্বীপের মানুষদের জন্য চলা কমিউনিটি কিচেনকে সাহায্যের জন্য ওখানকার স্থানীয় প্রশাসনও হাত বাড়িয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে কমিউনিটি কিচেনের জন্য চাল, জল, জায়গা ও বিদ্যুৎ সব রকমের পরিষেবা প্রদান করছে।
![]() |
কমিউনিটি কিচেনে যারা সাহায্য করতে চান তাদের সুবিধার্থে ব্যাঙ্ক ডিটেলস দেওয়া হল |
স্থানীয় লোকেদের সাথে কুমিরমারির পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলা জানা গেছে, "মরা কোটালের জন্য গত ছয়-সাতদিনে জল অনেকটাই নেমে যাচ্ছে। কিন্তু আবার সামনে জোয়ারের জল ঢোকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ আসল সমস্যা হচ্ছে জমা জলাগুলোতে পচন ধরছে। ফলে ছোটো ছোটো মশারা জন্ম নিচ্ছে৷ এতে জলবাহিত বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনাও বেড়ে চলেছে।"
কমিউনিটি কিচেনের কাজ যাতে আরো অনেকদিন পর্যন্ত চালানো যায় তার জন্য 'বালি নেচার এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ কন্সারভেসন সোসাইটি'র তরফে সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। যোগাযোগের নাম্বার ৯৭৩২৫৩২৭৪৭ (অনিল মিস্ত্রি)।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment