বাঁকুড়ার সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি লীলাময় মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান
বাংলার সংস্কৃতি জগতে ইন্দ্রপতন। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাঁকুড়ার সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল মুখ অধ্যাপক লীলাময় মুখোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার বহু সংখ্যক মানুষের অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি৷ বাঁকুড়ার মানুষ তাঁকে একনাম একডাকে জানেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
বাঁকুড়ার খ্রিশ্চান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নামকরা অধ্যাপক হিসেবে লীলাময় মুখোপাধ্যায়ের নাম সবার প্রথমে উঠে আসে। তাঁর পাঠদানের সম্পূর্ণ ধারাই ছিল পৃথক। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ ছিল। তিনি বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সুবক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। নানা সভা-সমিতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁকে বারবার বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। তাঁর বক্তব্য শুনতে বিভিন্ন মানুষ ভিড় জমাতেন।
লীলাময় মুখোপাধ্যায় বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীতগুণীদের নিয়ে নানান গবেষণামূলক একাধিক বই উপহার দিয়েছেন পাঠক সমাজকে। এছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেছেন 'বাঁকুড়া হিতৈষী'র মতো সাহিত্য পত্রিকা। বাঁকুড়ার মনীষীদের জীবনী সংগ্রহে আজীবন কাজ করে গেছেন তিনি৷ বাঁকুড়ার মনীষীদের নিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি খণ্ডে নিজের হাতে 'স্মরণীয় বাঁকুড়ার বরণীয় মানুষ', 'সুরতীর্থ বিষ্ণুপুরের দশ সঙ্গীতগুণী' প্রভৃতি বইয়ের জন্ম দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, যামিনী রায় ও মা সারদার বাঁকুড়ার শিষ্যদের জীবন নিয়েও তিনি বই লিখেছেন। এছাড়াও বই লিখেছেন যামিনী রায় ও মা সারদার বাঁকুড়ার শিষ্যদের জীবন নিয়েও।
লীলাময় মুখোপাধ্যায়ের লেখা বই পাঠক সমাজকে বিখ্যাত অধ্যাপক ও ভাষাযোদ্ধা ক্ষুদিরাম দাস, ডা. রামদুলাল চট্টোপাধ্যায়, আইনশাস্ত্রের কিংবদন্তি দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায়, বিজ্ঞান সাধক শিবদাস মিশ্র, অভিনয় জগতের মানুষ অনাদি বসু ও আলোক চিত্রশিল্পী অজিত মিশ্রদের মতো ব্যক্তিত্বদের পরিচয় করিয়ে দেয়।
জীবনের শেষ বয়স পর্যন্ত তিনি লেখার কাজ চালিয়ে গেছেন। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সমস্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্য ডাক পেতেন। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কিছু সমস্যার জন্য সব অনুষ্ঠানে যেতে পারতেন না, তবে কিছু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে যেতেন। তাঁর শরীরে বয়সের ছাপ পড়লেও তিনি কোনোদিনই সেকথা স্বীকার করতেন না। ৮১ বছর বয়সে পা দিয়েও নিয়মিত পড়ার অভ্যাস তিনি চালিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর গত শনিবার বেলা তিনটের সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকাগত বাঁকুড়ার সংস্কৃতিমহল।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment