Header Ads

প্রযুক্তির চাপে হারিয়ে যেতে বসেছে শিল নোড়া শিল্প


বাংলার একটি প্রাচীন কুটির শিল্প হলো শিল নোড়া তৈরির শিল্প। শিল নোড়ার সাথে শিল নোড়ায় নকশারও এককালে জনপ্রিয়তা ছিল। দুই বাংলার পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে এই হস্তশিল্পের প্রসার ঘটেছিল মধ্যযুগ থেকেই। মানভূমের ঘাটশিলা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, হাজারিবাগ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজমহল পাহাড় এইসব অঞ্চলের পাথর থেকে শিল নোড়া তৈরি হতো। 


এককালে গৃহস্থের সব বাড়িতেই শিল-নোড়া বাটনা বাঁটা, হলুদ ভাঙা এসব কাজে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে ঢেঁকির মতো এই শিল্পটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। শিল-নোড়ার ব্যবহার ছিল অনেক বেশি প্রকৃতি-বান্ধব। বর্তমানে ব্যবহৃত মিক্সার গ্রাইন্ডারে যেহেতু ইলেকট্রিক লাগে এবং ইলেকট্রিকের বড় উৎস তাপবিদ্যুৎ তাই বাস্তবিক ভাবে মিক্সার গ্রাইন্ডার পুরোপুরিভাবে প্রকৃতি বান্ধব নয়। তাছাড়া মানুষের পরিশ্রম করার প্রবণতা কমছে যন্ত্রশক্তির ব্যবহারের জন্য যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগ। যদিও যুগের নিয়মে টেকনোলজির ব্যবহার হবে; অনেক শিল্প হারিয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক।

আগেকার সময়ের সাপ্তাহিক হাট, ঝোড় পার্বন, দোল মেলার মতো লৌকিক উৎসবগুলিতে পসরা সাজিয়ে বসতো শিল নোড়ার দোকান। তবে শিল-নোড়া যেসব শিল্পীরা বানাতেন ওনারা বিভিন্ন পাথরের জিনিসও তৈরি করে থাকেন বা করতেন। শিল-নোড়ার ব্যবহার কমলেও পাথরের থালা, মূর্তি, ফুলদানি, লকেট, ঘর সাজাবার দিভিন্ন রকমের দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে যার ফলে এই সমস্ত শিল্পীর জীবিকার টান পড়েনি। 

একদিকে যেমন টেকনোলজি আসার জন্য শিল-নোড়া, যাঁতা এসবের বিক্রি কমিয়েছে তেমন ভাবে পাথর কাটার বিভিন্ন রকম যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ায় অনেক কম সময়ে অনেক বেশি জিনিস তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে যা এই সব শিল্পীদের আয় বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। বর্তমানে মেলার সংখ্যা বেড়েছে সাথে হস্তশিল্পের বিভিন্ন দ্রব্যের চাহিদাও বেড়েছে। শুশুনিয়া, পুরুলিয়ার অযোধ্যা, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, খাতড়া, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম, ঝাঁটিপাহাড়ি এইসব জায়গায় এই কুটির শিল্প বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। বাংলার কুটির শিল্পই বাংলাকে এক কালে বাংলার বানিজ্যকে বিশ্বজোড়া ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। মসলিন, রেশম, লবণ শিল্প, বালুচরি শাড়ি এগুলোই ছিল বাংলার অন্যতম প্রাচীন শিল্প। স্বদেশী আন্দোলনের সময়ও বাংলার ব্যবসা বানিজ্য বেশ সমৃদ্ধ হচ্ছিল।

কুটিরশিল্প বাংলার একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। এই শিল্প সবসময়ই অনেক বেশি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও দূষণহীন শিল্প। পৃথিবীর যে-কোনো জায়গাতেই অত্যধিক ভারী শিল্প এলে সেই জায়গার পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ে, কৃষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, নদীর বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয় উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এককালের ডেট্রয়েট বর্তমানে ডাইং সিটি। বর্তমানে ভারী শিল্পে কর্মী নিয়োগও মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে অটোমেশনের কারণে।

ম্যাকেঞ্জির ৪৬ টি দেশের ওপর সমীক্ষা অনুযায়ী ২০৩০ এর মধ্যে প্রায় ৮০০  মিলিয়ন চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে, যার ফলে জার্মানি এবং আমেরিকার মতো দেশকে অন্যসব চাকরি ক্ষেত্রগুলির কথা ভাবতে হচ্ছে বর্তমানে (তথ্যসূত্র-ম্যাকেঞ্জি ওয়েবসাইট, ২৮ শে নভেম্বর ২০১৭)। তাই কুটির শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, মাঝারি শিল্প, পশুপালন, কৃষিভিত্তিক শিল্পকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments