Header Ads

প্রথম ভারতীয় হিসেবে উপমহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির প্রস্তাবনা রাখেন এক বাঙালি


ভারতীয় উপমহাদেশে নালন্দা, তক্ষশীলার মতো বিশ্ববিদ্যালয় এককালে ভারতের খ্যাতি ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে ভারতের বিজ্ঞান ও গণিত চর্চা এককালে গ্রীস, রোম, আরবের মতো দেশের মানুষদের সাথে একত্রে গবেষণার একটা মাধ্যম তৈরি হয়েছিল। যদিও বৈদেশিক আক্রমণে ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় গ্রীক, রোম, আরব, ভারত, জাভা উপদ্বীপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। ভারতীয় উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন বৈদেশিক আক্রমণে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় ঠিক সেই সময়েই দশম থেকে চতুর্দশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নির্মিত হয়। যদিও তারপর থেকে চোল সাম্রাজ্য, সেন সাম্রাজ্য, মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিন্তু এই সময় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হয়নি। তারপর থেকে ইউরোপীয়ানদের মধ্যে পর্তুগীজ, ফ্রেঞ্চ, ডাচ, ব্রিটিশদের আক্রমণ ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানচর্চাকে দুর্বল করে দেয়।


ইউরোপিয়ানরা এই সময়টিকে ভারতের মধ্যযুগ বলে দাবী করে থাকেন। ইউরোপিয়ানদের তৈরি ইতিহাস অনুযায়ী ইউরোপিয়ানরা দাবী করেন যে তারা এসে উপমহাদেশের উন্নতি ঘটায় এটা একদম মিথ্যাভাবে দেখানো হচ্ছে। ইতিহাস পুনঃর্নিমাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তারপর ম্যাকাউলি যাকে ভারতের শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কান্ডারী বলে দাবী করা হয়। তিনি বাস্তবে ভারতীয় রীতিটিকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

ম্যাকাউলির প্রকাশিত রিপোর্ট পড়লে এই ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক। ১৫০০ শতকে ব্রিটেন এতটাও সভ্য জাতি ছিলনা বাস্তবে তারা বিভিন্ন দেশকে কলোনী বানানোর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ বা আফ্রিকা পিছিয়ে পড়ে। এশিয়া, আফ্রিকার শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত করে ইউরোপিয়ানরা। তারপর থেকে ভাষা, ধর্ম ইত্যাদিকে গুলিয়ে দিয়ে ভারতীয়দের শাসনের প্রজেক্ট হিসেবে এশিয়াটিক সোসাইটি, ফোর্ট উইলিয়াম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গবেষণা কেন্দ্রগুলি ভারত শাসনের বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি আবিষ্কার করার কাজ চালাতো।

এই জায়গাগুলোকে রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগররা ব্যবহার করেছেন যাতে জাতিকে শিক্ষিত করা যায়। যদিও এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে ব্রিটিশরা ভারতীয় বুদ্ধিকে নিজেদের ঔপনিবেশিক গবেষণায় কিভাবে কাজে লাগিয়েছে সেটা তখনের অনেকেই বুঝতে পারেননি। যদিও ১৮০০ সালের দিকে বাংলার বিভিন্ন মানুষ সমাজসংস্কারের কাজ শুরু করেন। রাজা রামমোহন রায়, রাণী রাসমণি, দ্বারকানাথ ঠাকুর, রামগোপাল ঘোষ, ডিরোজিও এরকম প্রচুর মানুষ এগিয়ে আসেন ও নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটে। এই সময়টাকে নবজাগরণ বলা হবে কিনা এ নিয়ে বিউপনিবেশায়ণ নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। এই সময় থেকে সারা বাংলা এবং ভারতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়।

রামগোপাল ঘোষ ও দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন তখনকার অন্যতম বাঙালি ব্যবসায়ী। আগে ভারতীয়দের সরকারি চাকরিতে নেওয়া হতনা এ নিয়ে বিরোধিতা করেন ওনারা দুজনেই। ১৮৫৩ সালে রামগোপাল ঘোষ সরকারি চাকরিতে ভারতীয়দের নিয়োগের দাবী তোলেন। প্রাচীন কাল বাদ দিলে আধুনিক ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির প্রস্তাব রাখেন রামগোপাল ঘোষ ১৮৫৪ সালে, যা দ্বারকানাথ ঠাকুর সমর্থন করেন।

প্রতিবেদন- অমিত দে 

তথ্যসূত্র- ফেমিনিজম ইন্ডিয়া, জি.এন.ই. বাংলা


No comments