Header Ads

সুন্দরবনের লবণাক্ত জলে বাসা বাঁধছে স্ত্রীরোগ


করোনার দাপট শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেই নয় সাথে সাথে প্রভাব ফেলেছে ভারতীয় অর্থনীতিতেও। গত বছর থেকে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ পেটের দায়ে তারা অন্য পরিকল্পনাও বেছে নিয়েছেন। সেইসঙ্গে জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া এর মত আম্ফান এর ভয়াবহতা। নষ্ট করেছে একাধিক গাছ। সুন্দরবন অঞ্চলের যেসব মানুষ কাঠ, মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা ভাবছেন উপার্জনের অন্যপথ, অবশ্য সংসার চালাতে সঙ্গী হয়েছেন পরিবারের মহিলারাও। সুন্দরবনের বিভিন্ন মানুষ নদীর মাছ কাঁকড়া ও বাগদার মিন ধরে উপার্জন করেন, এবার মহিলারাও কোমর অব্দি নোনা জলে নেমে সংগ্রহ করছে বাগদার মীন।


ঘন্টার পর ঘন্টা নোংরা ঘোলাটে নোনা জলে থাকার কারণে শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ সহ জরায়ু সংক্রান্ত রোগ, যা ওদের ভাষায় 'নোনা ধরেছে'। ইউটেরাস বা জরায়ু মায়ের সন্তান ধারণের অন্যতম অঙ্গ, এই স্থানে প্রতিবন্ধকতা থাকলে সন্তান ধারণের সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে জলে ভেজা এবং অপরিষ্কার থাকলে দাদ হাজা চুলকানির মতো চর্ম রোগের সৃষ্টি হয় এবং এগুলি দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে ক্যান্সারের আকার ধারণ করে। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারাই যে এই রোগের আক্রান্ত হয় তা কিন্তু নয় যেকোনো বয়সের মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে এমনকি ৫০ উর্ধেও সম্ভাবনা থেকে যায়। জরায়ু ক্যানসারকে 'সাইলেন্ট কিলার' বলা হয়ে থাকে। কারণ, এই অসুখ দেখা দিলে অনেক মহিলারাই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি বুঝতে পারেন না বা লক্ষণ দেখা দিলেও বিশেষ গুরুত্ব দেন না। সাধারণত লজ্জার কারণেই। 

সম্প্রতি ভারতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মহিলা জরায়ু ও স্ত্রীরোগের নানা সমস্যায় ভুগছেন।

সুন্দরবনের নদীতে জাল টানা বারণ, জলজ প্রাণী কে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই এই বিধি নিষেধ। তাই ঘন্টার পর ঘন্টা ধৈর্য্য ধরে ছোটো মশারি কিংবা হাতেই মীন সংগ্রহ করতে হয়। দিন যত যাচ্ছে ততই বেড়ে যাচ্ছে জলদূষণ। বাড়ছে জলের নুনের পরিমাণ।

অসংখ্য নদীতে ঘেরা সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ ভরপুর এই সুন্দরবন মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার ২৯ টি ব্লক নিয়ে গঠিত। শুধুমাত্র সুন্দরবন ই নয় রায়মঙ্গল, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এর হাজার হাজার মহিলারা ভোর হলে নেমে পড়েন মীন সংগ্রহে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জোয়ারের সময় একটু জিরিয়ে নিতে নিতেই অপেক্ষা করেন ভাটার, আবার জলে নামতে হবে পেটের জ্বালায়। পেট যে বড় বালাই।

প্রতিবেদন- পৌলমী হালদার


No comments