চিন্তামণি কর অভয়ারণ্যে পাখি ফেরাতে কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ করছে বনবিভাগ
দক্ষিণ কলকাতার নরেন্দ্রপুরে অবস্থিত চিন্তামণি কর অভয়ারণ্য। যেখানে রয়েছে একটি বিশালাকার পাখিরালয়। যা গোটা ভারতবর্ষে বিখ্যাত। দেশ-বিদেশ থেকে বহু ফটোগ্রাফার আসেন এখানকার ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে। ১৭ একর জমির ওপর তৈরি এই অভয়ারণ্য। আগে এই অভয়ারণ্যের নাম ছিল 'কয়ালের বাগানে'। পরবর্তীকালে বিশিষ্ট স্থপতি চিন্তামণি করের নামানুসারে এই অভয়ারণ্যের নামকরণ হয় 'চিন্তামণি কর অভয়ারণ্য'।
বিভিন্ন প্রজাতির দেশী-বিদেশী পাখিদের দেখা মেলে এখানে। এশীয় কোকিল, কালো ফিঙে, দোয়েল, গো বক, ছোট বগা, তিলা মুনিয়া, হুতোম প্যাঁচা, ভুতূম প্যাঁচা, পানকৌড়ি, পাতি শিকরে, সাদা খঞ্চন, সবুজ ঘুঘু, তিলা ঘুঘু, বেনেবউ, কাঠ শালিক, বুলবুল, মাছরাঙা, খয়েরি হাঁড়িচাচা, কাঠঠোকরা এরকম হাজার হাজার প্রজাতির পাখির বাস এখানে।
কংক্রিটে মোড়া শহুরে জীবন থেকে দূরে সরে মৃদুমন্দ বাতাসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এক দূর্দান্ত দ্রষ্টব্য স্থান হলো চিন্তামণি কর অভয়ারণ্য। গতবছর আমফানের পর এই অভয়ারণ্যের চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আমফানে ব্যাপক ভাবে ক্ষতি হয়েছে এই অভয়ারণ্যের। বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে। তারপর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখানে এখন বহু জলাশয় শুকিয়ে গেছে। যার ফলে পাখিদের আনাগোনা একেবারে কমে গেছে। জলের অভাবের জন্য এখানে আর একেবারেই আসছে না পরিযায়ী পাখির দল। স্বভাবতই পক্ষীপ্রেমী মানুষেরা যথেষ্ট মনমরা এই অবস্থার জন্য।
জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বনবিভাগ দাবী করছে যে জলাশয়ের নীচে থাকা বালি জলাশয়ের সমস্ত জল শুষে নিচ্ছে। তাই বেশিরভাগ জলাশয়ের জল শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই বনবিভাগ এই অভয়ারণ্যে একটি বৃহৎ কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ করবে। একটি ৫০ ফুট লম্বা ও ৯ ফুট গভীর জলাশয় বানানো হবে। ইতিমধ্যে শুরুও হয়ে গিয়েছে জলাশয় নির্মাণের কাজ। এখন পর্যন্ত যতটা মাটি খনন করা হয়েছে, নীচ থেকে ঠিক ততই বালি উঠে এসেছে। এজন্য এবার কৃত্রিম জলাশয়ের ভেতরটা কংক্রিটে মুড়ে ফেলা হবে। এতে করে জল শুকিয়ে যাওয়ার ভয় দূরীকরণ হবে।
জলাশয় নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হলে পাখিদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে। বৃহৎ জলাশয়ের পাশাপাশি বৃষ্টির জল সংরক্ষণেরও বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে এখানে। এছাড়াও অভয়ারণ্যের সৌন্দর্যায়নেও এবার অনেকটা জোর দেওয়া হবে। যেসব প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে সেখানে এক বিশেষ পন্থা অবলম্বন করা হবে। সেখানে কচুরিপানা ও কাদা মাটি এনে রাখা হবে। এই কাদা মাটি দিয়ে ধাপে ধাপে প্রলেপ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জল একেবারে শুকোবে না। পুরো কাজ সম্পূর্ণ হতে বেশ কয়েকমাস লাগতে পারে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment