Header Ads

দন্ত চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড পেলেন সুমিতা মিত্র


বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালি বার বার চমৎকৃত করেছে বিশ্বকে। পার্টিক্যাল ফিজিক্স বা রসায়ন বা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা জীববিজ্ঞান বা চিকিৎসাবিজ্ঞান বা গণিত বা পরিসংখ্যানবিদ্যা বা ভূগোল এরকম যে-কোনো বিভাগেই বাঙালির আবিষ্কার বিজ্ঞানচর্চাকে বারে বারে সমাদৃত করেছে। বর্তমান সময়ও তার ব্যতিক্রম নয়।


বর্তমানের বিশ্ববিখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী ড. সুমিতা মিত্রের একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার দন্ত চিকিৎসাকে করে তুলেছে আধুনিকতর। যেখানে আমেরিকার একটি প্যাটেন্ট পেতেই কালঘাম ছুটে যায় সবার সেখানে আমেরিকায় ১০০ টি প্যাটেন্ট রয়েছে ড. সুমিতা মিত্রের নামে। বিভিন্ন রকমের ন্যানোকম্পোসাইট, রেসিন মডিফায়েড আয়োনোমার এবং ডেন্টাল অ্যাডেসিভ তিনি আবিষ্কার করেছেন। ওনার আবিষ্কারের ফলাফল হিসেবে তৈরি হয়েছে ভিটেরিমিটার, ভিট্রেবন্ড রেসিন মডিফায়েড গ্লাস আয়োনোমার, রেলিক্স লুটিং সিমেন্ট, স্কচবন্ড মাল্টিপারপাস অ্যাঢেসিভ, এ.পি.সি, অর্থোডন্টিক ব্র্যাকেট অ্যাঢেসিভ। এককথায় দাঁত ফিলিং টেকনোলজির এর জননী তিনি।

তিনি রসায়নে স্নাতক হন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। তারপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর লাভ করেন। আমেরিকার মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন অরগ্যানিক এবং পলিমার কেমিস্ট্রিতে। তিনি ৩০ বছর গবেষণা করেছেন আমেরিকার বিখ্যাত কোম্পানি থ্রিএম ডট ওরাল কেয়ার থেতে। ২০১০ থেকে তিনি নিজের কোম্পানি মিত্র কেমিক্যাল কনসাল্টিং এল.এল.সি. পরিচালনা করেন যে কোম্পানির রয়েছে ১৩৫ টি অ্যামেরিকান প্যাটেন্ট।  

এই সব বিখ্যাত আবিষ্কারের জন্য তিনি জিতেছেন বিভিন্ন পুরস্কার। ২০০৯ সালে তিনি অ্যামেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির 'হিরোস অফ ক্যামিস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড' জিতেছেন, ২০১৮ তে তিনি ন্যাশানাল ইনভেন্টরস হল অফ ফেম হন। ২০২০ তে জিতে নেন হলেনব্যাক মেমোরিয়াল প্রাইজ। এ বছর তিনি জিতলেন ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড। দাঁত ফিলিং এর জন্য ওনার বিখ্যাত আবিষ্কার হলো ফিলটেক সুপ্রিম আলট্রা ইউনিভার্সাল। ফিলটেক সুপ্রিম আলট্রা ইউনিভার্সাল যাতে শেডিং সিস্টেমের ব্যবহার হয়ে ওঠে অনেক সহজ। ডেন্টিন, বডি, এনামেল এবং ট্রান্সলুকেন্ট এই চার রকমের শেডিং সিস্টেম হয়ে থাকে যেখানে এনামেলের ওপাসিটি একদম দাঁতের এনামেলের মতো এক হয়ে থাকে। যার ফলে একদম দাঁতের যা রং ঠিক সেরকম রং দাঁত ফিলারেরও রাখতে পারে ফিলটেক সুপ্রিম আলট্রা ইউনিভার্সাল। এটি আগের বস্তুগুলির চেয়ে অনেক বেশি শক্ত, চকচকে এবং ক্ষয়ও কম হয়। ফিলটেক সুপ্রিম আলট্রা ইউনিভার্সালের মোট তিনটি প্রজন্মে উন্নিত হয়েছে। ২০০২ তে প্রথম প্রজন্ম, ২০০৫ এ দ্বিতীয় প্রজন্ম এবং ২০১২ তে তৃতীয় প্রজন্মের ফিলটেক সুপ্রিম আলট্রা ইউনিভার্সাল বাজারে আসে। সারা বিশ্বে ৬০০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬০ কোটি দাঁতের পুনরুদ্ধারে ব্যবহৃত হয়েছে এই বস্তু। ওনার একার এবং অন্য কারো সাথে যৌথভাবে করা ১৩৫ টি আবিষ্কার রসায়ন বিজ্ঞানের আমূল পরিবর্তনে সাহায্য করছে যা বাঙালির কাছে গর্বের।

প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতো মাপের রসায়ন বিজ্ঞানী হলেন ড. সুমিতা মিত্র কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাঙালি ওনার সম্পর্কে অবগত নয়। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ওনার ছবি দেখা যায় কিন্তু বাঙালি ওনাকে প্রাপ্য সম্মান দেয়নি যা আমাদের কাছে বেশ লজ্জার।


তথ্যসূত্র- ন্যাশানাল ইনভেস্টর হল অফ ফেম অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, থ্রি এম ডট কম, মিত্র কেমিক্যাল কনসাল্টিং ডট কম।

No comments