Header Ads

রাজনৈতিক কার্টুন আঁকার জন্য সরকারি চাকরি গিয়েছিল নরেন্দ্রনাথ রায়ের


রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন পরাধীন ভারতবর্ষ থেকে আজকের যুগেও আমরা দেখতে পাই। রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র আঁকার জন্য বহু শিল্পীর কারাবাস হয়েছে। বহু শিল্পীর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে বারবার এদেশে ধর্মের রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতি, রাজ্যভাগের রাজনীতিকে হাতিয়ার করা হয়েছে ভোটের অস্ত্র হিসেবে। 


শিল্পীদের মূল্যকে ধূলোতে মিশিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই। যারা রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন তাদের ওপর শাসকের লাল চোখ পড়েছে প্রতিটি যুগেই। রাজনৈতিক ব্যঙ্গ চিত্রশিল্পীদের ওপর আক্রমণ প্রায় সব দেশের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। 

সেকেলে বহু ব্যঙ্গ চিত্রশিল্পী নির্ভীক ভাবে যেমন রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে কাজ করতেন তেমনই নতুন প্রজন্মের ব্যঙ্গ চিত্রশিল্পীরাও একই ভাবে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে কাজ করে চলেছেন। এই ব্যঙ্গচিত্র আঁকার দায়ে অবিভক্ত বাংলার এক প্রবাদপ্রতিম বাঙালি কার্টুনিস্ট সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। আমরা তাঁকে চিনি 'সুফি' ছদ্মনামে। যার প্রকৃত নাম নরেন্দ্রনাথ রায়। তাঁর অন্য ছদ্মনাম শ্রীমতী, প্রমীলা রায়, সঞ্জয়, শ্রীগুপ্ত, বিরিঞ্চি ইত্যাদি৷ তিনি 'স্বাধীনতা' পত্রিকায় কার্টুন আঁকতেন, তাই হাওড়া স্কুল বোর্ড তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে। 

নরেন্দ্রনাথ রায় কার্টুন এঁকেছেন 'স্বাধীনতা' পত্রিকা ছাড়াও আরো অনেক পত্রিকা যেমন দৈনিক সংবাদপত্র, ছোটদের পত্রিকা, খেলার কাগজ, মহিলা পত্রিকা, যুগান্তর, দৈনিক ও মাসিক বসুমতী, সচিত্র ভারত, যষ্টিমধু, সরস কার্টুন, প্রহরী, সচিত্র তোমার জীবন, গণশক্তি, জলসা, মঞ্চকথা, সংগীতিকা, খেলার মাঠ, স্টেডিয়াম, মেয়েদের কাগজ, সন্দেশ, শুকতারা, কিশোর ভারতী ও শিশুসাথী পত্রিকায়। 'স্বাধীনতা' পত্রিকার তাঁর ধারাবাহিক কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে 'কৌতুকী' শিরোনামে। 

কার্টুনে নিছক রঙ্গ তিনি পছন্দ করতেন না, তিনি চাইতেন সমাজ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আঁকতে। এজন্য তাঁকে সমসাময়িক বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সচেতন থাকতে হতো। দেশ-বিদেশের কার্টুনিস্টদের কাজ নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন তিনি। দারিদ্র্য-অভাব ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী, কিন্তু শিল্পীমানসকে তা ক্ষুণ্ণ করতে পারেনি।

তিনি কার্টুন আঁকা শেখানোর একটি স্কুলও খুলেছিলেন। তাঁর প্রথম কার্টুন প্রকাশিত হয় 'গড়ের মাঠ' নামের এক খেলার কাগজে, সেটা ছিল ইস্টবেঙ্গল- মোহনবাগান নিয়ে মজার কার্টুন। এরপর, 'স্বাধীনতা' পত্রিকায় তাঁর আঁকা ছবি প্রকাশিত হয়৷ প্রথমে কেবল ছোটদের জন্য আঁকতেন তিনি, পরে রবিবাসরীয় পাতার দায়িত্বে থাকা অরুন রায় শিল্পীকে নিয়ে আসেন রবিবারের পাতায়৷ 'সুফি' নামটি অরুন রায়েরই দেওয়া। 'স্বাধীনতা' পত্রিকাতেই তার প্রথম রাজনৈতিক কার্টুন প্রকাশিত হয়। 

হাওড়া জেলা স্কুলে তিনি একটি চাকরি নেন। কিন্তু তাঁর ছদ্মনাম তাঁকে বাঁচাতে পারেনি। 'স্বাধীনতা' পত্রিকায় সরকার-বিরোধী কার্টুন আঁকার কারণেই কর্মচ্যুত হতে হলো তাঁকে। এরপর তিনি কোনও চাকরি নেননি। ব্যঙ্গচিত্রকেই পূর্ণ সময়ের পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি ইলাসট্রেশনের কাজও করেছেন। 

তথ্যসূত্র- কার্টুন-পত্তর, পলিমাটি শারদ সংখ্যা- ১৪১০ 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments