Header Ads

ইতিহাসের আড়ালে সুন্দরবন নিয়ে দু'চার কথা


আজ সুন্দরবনের ইতিহাস সম্পর্কে দু'চার কথা এই প্রতিবেদনে লিখব। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক এই বিশাল বনাঞ্চলের নাম 'সুন্দরবন' কেন হলো? অন্য কিছুও তো হতে পারত। সুন্দরবনে যে গাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হল সুন্দরী গাছ। আর এই সুন্দরী গাছ থেকেই মনে হয় এই বনটির নাম সুন্দরবন হয়েছে। বেশিরভাগ লোকেই তাই বলেন। তবে কেউ কেউ বলেন যে আগে এই বনের নাম ছিল ‘সমুদ্রবন’ যেহেতু দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আর এই 'সমুদ্রবন' থেকেই হয়তো পরবর্তীকালে ‘সুন্দরবন' নামটি হয়ে গেছে বা লোকমুখে তৈরি হয়েছে। আবার অনেকেই বলেন যে এই বনটিকে স্থানীয় আদিবাসীরা ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে ডাকত। আর এই ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামটাই হয়তো বিকৃত হতে হতে হয়ে গেছে ‘সুন্দরবন’। তাই সুন্দরবনের নামের ইতিবৃত্তটি নিয়ে বেশ বিতর্কই আছে। যাইহোক, এবার আসা যাক সুন্দরবনের মানুষের ইতিহাস প্রসঙ্গে। এই বনাঞ্চলের ইতিহাস ২০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দে মানে অত বছর আগেও খুঁজে পাওয়া যায়।


বাঘমারা ফরেস্ট ব্লকে প্রাচীন বাংলাতে বিখ্যাত বণিক চাঁদ সদাগরের নির্মিত তৎকালীন যুগের একটি শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। মুঘল আমলে খুব সম্ভবত ১২০৩ সালে প্রথম কোনো এক স্থানীয় রাজা এই পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। আর তখনই এই বনাঞ্চলটি মুঘল রাজাদের অধীনে চলে যায়।  এর বহুকাল পর ১৭৫৭ সালে ইতিহাসের এক বড়ো পালাবদল হয়, যার নাম ‘পলাশীর যুদ্ধ’। আর এই পলাশীর যুদ্ধে হেরে যান নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। আর এর সাথে মুঘল সম্রাটও দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই দুর্বল সরকারের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার ইজারা নিয়ে নেয়। আর বাংলার ইজারার সাথেই তারা সুন্দরবনেরও ইজারা নেয়। এই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম সুন্দরবনের একটা মানচিত্র তৈরি করেছিল। যাঃ, নিঃসন্দেহে সমগ্র বিপদ পেরিয়ে মহৎ একটি কাজ। জানা যায় যে, সমগ্র বঙ্গদেশ ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে অনেক আগেই ১৮২৮ সালে সুন্দরবন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে গিয়েছিল। আর ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ১৮২৯ সালে এল টি হজেস নামের এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক প্রথম এই বনটিতে জরিপের কাজ চালান। তবে সুন্দরবনে জরিপের কাজ করা কিন্তু খুবই কঠিন কাজ। কেননা এই বন যে ভয়ানক সমস্ত জীবজন্তুতে ভরা। ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমি। এছাড়াও আছে অজগর সাপ, কামট মাছ সহ আরও কত কি ভয়ঙ্কর জীব। এত কিছু বিপদ এড়িয়েও যে সাহসিকতার সাথে জরিপের কাজগুলো হয়েছিল তাতে জানা গিয়েছিল যে এই বনের সীমানা পশ্চিমে হুগলী নদী থেকে পূর্বে মেঘনা নদী পর্যন্ত। আর এই বনের মোট আয়তন যা হিসেব করা হয়েছিল তা হলো ১৬ হাজার ৯০২ বর্গ কিলোমিটার। কত বড়ো ছিল এ বনাঞ্চল! ১৮৬০ সালে দেশের ব্রিটিশ সরকার বাংলায় বন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। আর তখন থেকেই বনটি বন বিভাগের দায়িত্বে যায়। কিন্তু অত বড়ো বন হাতের মুঠোয় বা কর্তৃত্বে আনা কি চাট্টিখানি কথা। আর তাই, এই অঞ্চলে বন বিভাগের পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত লেগে যায়। তখনও কিন্তু সুন্দরবন সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষিত হয়নি।এর ফলে বন বিভাগও ঠিকমতো দেখ-ভাল করতে পারছিল না। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে 'সংরক্ষিত বন' হিসেবে ঘোষিত করা হয়। আর এই ঘোষণার পরের বছর থেকেই সুন্দরবন শুধুই বন বিভাগের অধীনে চলে যায়।

দুঃখের বিষয় যে, দেশভাগের সাথে সাথেই সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক স্থানকেও ভাগ করা হয়। বড়ো একটি অংশ চলে যায় পূর্ব-পাকিস্থানে আর কিছু অংশ থেকে যায় ভারতের মাটিতে। আজকের দিনে মানচিত্রে তাকালে বা ভূগোলের বইয়ে দেখা যাবে যে সুন্দরবনের প্রায় মোট ১০,০০০ বর্গকিমির মধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে আছে প্রায় ৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার আর পশ্চিমবাংলার তথা ভারতের মাটিতে আছে প্রায় ৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ,এপার বাংলায় রয়েছে সুন্দরবনের ৪০% আর ওপার বাংলায় রয়েছে সুন্দরবনের ৬০%। 

তাহলে সবাই এই সুন্দরবনকে বাঁচাবার এক প্রচাষ্টা চালাই। সুন্দরবনের প্রকৃতি ও সমগ্র জীব-বৈচিত্র্যকে বাঁচানোই আমাদের এক সংকল্প হয়ে উঠুক।







No comments