Header Ads

প্লাস্টিক মুক্ত অযোধ্যার লক্ষ্যে সেভ অযোধ্যা হিলস গ্রুপের সাফাই অভিযান


কেবল একটা মাস পিছিয়ে যাওয়া যাক। দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল পুরুলিয়ার অন্যতম টুরিস্ট স্পট অযোধ্যা পাহাড়। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দাবদাহে ছারখার হয়ে যায় বহু বছরের প্রাচীন অরণ্য। যে খবরে চিন্তিত হয়ে ওঠেন পরিবেশকর্মীরা। সেদিন পাহাড় বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন গ্রামবাসীরাই। তৈরি করা হয়েছিল একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। আর সেই গ্রুপের সদস্যরাই অযোধ্যার দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনেন। যে গ্রুপটির নাম 'সেভ অযোধ্যা হিলস'। শুধু একটিমাত্র বিপর্যয়ের মোকাবিলাতেই থেমে থাকতে চাননি তাঁরা। সকলেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অযোধ্যার শুশ্রূষার কাজটা। 


অযোধ্যার আগুন 'সেভ অযোধ্যা হিলস' গ্রুপের সকল সদস্যকে এক ছাতার তলায় এনে দাঁড় করিয়েছিল। সেই সুযোগেই তাঁরা সকলে মিলে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার শপথ নিয়েছেন। এই গ্রুপের উদ্যোগে ২ রা এপ্রিল থেকে ৪ ঠা এপ্রিল পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী এক সাফাই অভিযান কর্মসূচি নেওয়া হয়। যার লক্ষ্য ছিল তিনদিনে পাহাড়ের  সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র গুলিকে প্লাস্টিক ও আবর্জনা মুক্ত করে তোলা।   

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান হলো পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়। যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে ছুটে আসেন৷ অযোধ্যা পাহাড়ের নান্দনিক দৃশ্য মন ভরিয়ে দিতে পারে যে-কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষকে। প্রতি বছর পর্যটকেরা এখানে বেড়াতে এলে বিভিন্ন প্লাস্টিকজাতীয় খাবারের প্যাকেট, চিপস বা কুরকুরের প্যাকেট ও মুখরোচক জাতীয় নানান খাবারের প্যাকেট, পলিথিন ও প্লাস্টিক যেখানে সেখানে নিক্ষেপ করেন। আবর্জনা এক জায়গাতে গচ্ছিত রাখার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থাও নেই এখানে৷  


গোটা শীতকাল জুড়ে পর্যটকদের আগমনে ও‌ পিকনিকের ফলে সমগ্র অযোধ্যা জুড়ে প্লাস্টিক, পলিথিন, থার্মোকল, জলের বোতল, মদের বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এগুলো দেখতে যতোটাই দৃষ্টি কটু, পরিবেশের পক্ষে তার থেকেও ক্ষতিকারক। তাই পরিবেশ প্রেমী ও পরিবেশ সচেতন বন্ধু বান্ধব ও ভাইবোনদের নিয়ে পুরোদমে পাহাড়ে লেগে পড়েন 'সেভ অযোধ্যা হিলস' গ্রুপের সকল সদস্য-সদস্যাগণ। তাদের লক্ষ্য আগামী দু বছরের মধ্যে গোটা অযোধ্যা পাহাড়কে প্লাস্টিক মুক্ত বা প্লাস্টিক ফ্রি জোন হিসাবে গড়ে তোলা।  

এপ্রিলের ফুটিফাটা গরম আর চড়া রোদকে উপেক্ষা করে পুরোদমে চলতে থাকে অভিযান। গ্রুপের সকল সদস্য ও সদস্যারা সারা দিন পাহাড়ের কোলে ঘুরে ঘুরে পিকনিক স্পটগুলোতে পড়ে থাকা প্লাস্টিক, থার্মোকল, কাঁচের বোতল কুড়িয়ে বস্তাবন্দি করেন। ময়ুর পাহাড়, আপার ড্যাম, বামনী ফলস্ , মার্বেল লেক সর্বত্র যত্ন সহকারে পরিস্কার করা হয়। সবশেষে প্রায় দুশো বস্তাভর্তি বর্জ্য উদ্ধার হয়। 


এই অভিযানের প্রসঙ্গে 'সেভ অযোধ্যা হিলস' গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেলের অন্যতম সদস্য বাপী মাহাতো লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান "অযোধ্যা পাহাড়ে আগুন নেভানোর কর্মসূচীর পর আমরা ঠিক করেছিলাম আমাদের পরবর্তী আরেকটা ক্যাম্পেইন চালানো হোক অযোধ্যার বুকে। সেইমতো আমরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্লাস্টিক মুক্ত অযোধ্যা নামের একটি ক্যাম্পেইনের ঘোষণা করি৷ যেখানে অসংখ্য মানুষ সাড়া দেন। ক্রাউড ফান্ডিং থেকে এই প্রজেক্টটির জন্য বাজেট নির্ধারণ করা হয়। এই কাজটি করার জন্য আমরা দশটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজের নিজের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। যেখানে একটু বেশি লোকবল লাগবে সেখানে তিনটে করে গ্রুপ কাজ করেছে। তিনদিন- ব্যাপী এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য থাকা-খাওয়ারও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুশো বস্তার মতো আবর্জনা আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এখন এই আবর্জনাগুলোকে যাতে ডিসপোজ করা হয় ও যাতে প্রপার ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা হয় তার জন্য আমরা প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছি। আমরা চাই এখানে একটি ভালো রিসাইকেল হাব গড়ে তোলা হোক তাতে  পুরুলিয়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলো আজীবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে।" 

'সেভ অযোধ্যা হিলস' গ্রুপের অন্যান্য সদস্য আফতাব খান, তরুণ মাহাতো, শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায় ও দুর্গাদাশ মহন্তিদের কথায় "পুরুলিয়া বাদেও অন্যান্য জেলার মানুষ এই কর্মসূচীতে সর্বোতভাবে অংশ নিয়েছেন। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মেচেদা থেকে এক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগাযোগ করেন আমাদের সঙ্গে। উনি ভোরের ট্রেনে পুরুলিয়াতে এসে সারাদিন আমাদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করে গেলেন।" 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments