Header Ads

পাবলিক লটারির টাকায় বানানো হয়েছিল কলকাতা টাউন হল


কলকাতা টাউন হল যা ছিল উনিশ শতকে কলকাতার বৃহত্তম ভবন। দর্শনার্থীদের কাছে এক নান্দনিক স্থান হলো টাউন হল। কলকাতার এই টাউন হল রোমান ডেরিক স্থাপত্যের নিদর্শন। অনেকে হয়তো জানেন না যে কলকাতা টাউন হল পাবলিক লটারির টাকায় বানানো। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই ঠিক। ইউরোপীয়ানদের সামাজিক জমায়েতের জন্য লটারি থেকে তোলা ৭০,০০০ টাকাতে ভবনটি নির্মিত হয়। ১৮১৩ সালে স্থপতি ও বাস্ত্তশিল্পী মেজর জেনেরাল জন গারস্টিন নির্মাণ করেন এই ভবন। দুই শতাব্দী ধরে অক্ষত অবস্থায় থেকে গেছে এই ভবন। কলকাতা টাউন হল বাংলার অনেক জানা-অজানা ইতিহাসের সাক্ষী।
 

কলকাতা ৪, এসপ্লানেড রোডের পশ্চিমে অবস্থিত কলকাতা টাউন হল। ১৮০৭ সালের ১ লা ডিসেম্বর শুরু হয়ে এই ভবনটি ১৮১৪ সালে নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে টাউন হল অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থেকে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্বাধীনতার পরেও বহু বছর অবহেলিত থাকে এই হলঘরটি। একসময় এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালে আবার এই ভবনটি সারানো শুরু হয়। এখানেই আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর তৈরি বেতার যন্ত্র ১৮৯৮ সালে জনসাধারণকে দেখান। এখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়েছে অতীতে। আর বর্তমানেও নানান গুরুত্বপূর্ণ সভাতে ব্যস্ত আছে এই ভবন।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সি.ভি রমন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার নীলরতন সরকার, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব টাউন হলে মিলিত হতেন এবং সেখানকার সভা-সমাবেশের শোভাবর্ধন করতেন। তবু এ কথা সত্যি যে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উত্তাপ থেকে বঞ্চিত হয়ে এবং আপন সমৃদ্ধ  ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একদা মহিমান্বিত কলকাতা টাউন হল অবশেষে কলকাতা কর্পোরেশনের নিষ্প্রভ অঙ্গ হিসেবে আরেকটি অফিস ভবনে পর্যবসিত হয়।  

কলকাতা টাউন হলে রাজেন্দ্রলাল মিত্র প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। উনিশ শতকের শুরু থেকে শেষাবধি রাজা রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর, রমানাথ ঠাকুর, মতিলাল শীল, শেখ লাল মুহম্মদ, আগা মির্জা শিরাজীর মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিরা কলকাতা টাউন হলে সভা করেন। ১৮৭৮ সালের ১৫ ই মে টাউন হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় 'সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ' আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯০৫ সালের ৭ ই আগস্ট টাউন হলে স্বদেশী আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।১৯১৯ সালে দ্বৈত শাসন প্রবর্তনের পর 'বেঙ্গল লেজিস্লেটিভ কাউন্সিল' - এর কাউন্সিল চেম্বার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে কলকাতা টাউন হল। 
 
১৭৯১ সালে এক সভাতে কয়েকজন ব্রিটিশ ব্যক্তি ইংরেজ বসতির বিনোদনের জন্য একটি সরকারি ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে চাঁদা তোলা হবে বলে স্থির করেন। পরবর্তীকালে ১৮০৪ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত আরেকটি সভায় নাগরিকবৃন্দ   একটি টাউন হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সভা অনুষ্ঠান ও অভ্যর্থনা প্রদান এবং গণ্যমান্য ইংরেজদের দুর্লভ একটি টাউন হল সামগ্রী প্রদর্শন করা ছিল এ  টাউন হল নির্মাণের উদ্দেশ্য। যদিও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি টাউন হল নির্মাণের জন্য একটা টাকা-কড়িও ব্যয় করতে রাজী ছিলনা। অতএব শেষমেশ পাবলিক লটারির মাধ্যমে টাউন হল নির্মাণের পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ হয়। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments