Header Ads

কলকাতার পুতুল বাড়ি যাকে মহানগরের বিখ্যাত হন্টেড হাউসও বলা হয়


শোভাবাজার হরচন্দ্র লেনের ২২ নম্বর বাড়ি যে বাড়িটি 'পুতুল বাড়ি' নামে খ্যাত৷ এই বাড়িটিকে কলকাতার ভূতের বাড়িও বলা হয়। যারা ভূতে বিশ্বাস করেন তারা নাকি বলেন এই বাড়ির ওপরের তলায় নাকি অতৃপ্ত আত্মাদের আনাগোনা চলে। তবে এই বাড়ির ভূতের গল্পের সঙ্গে মিশে বঞ্চনার ইতিহাসও। কথিত আছে, এই বাড়িতে নাকি আগেকার দিনে জমিদাররা মহিলাদের নিয়ে এসে শারীরিক নির্যাতন চালাত। অনেক সময় তাদের খুনও করতো। সেই খুন হওয়া নারীদের প্রেতাত্মারাই এই বাড়িতে বসবাস করে। 


প্রায় শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়ি। ঘিঞ্জি শহর কলকাতায় যেখানে একটুকরো ফাঁকা জায়গা মেলা দুষ্কর সেখানে ভূতের বাড়ি বলে লোকে এই বাড়িটিকে অবজ্ঞা করেন৷ ইউটিউবে হন্টিং হাউস লিখে সার্চ করলেই নাকি টপ লিস্টে উঠে আসছে শোভাবাজার ফেরিঘাটের কাছে হরচন্দ্র স্ট্রিটের পুতুলবাড়ির নাম৷ বার্ধক্যপ্রাপ্ত এই বাড়িটি সংস্কার করা না হলেও এখনও এখানে মানুষ থাকেন৷  

বর্তমানে এই বাড়ির বেশিরভাগটাই ভাড়াটিয়াদের দখলে চলে গেছে। কিন্তু বাড়িতে তাদের শান্তি নেই। ভূতে বিশ্বাসী লোকেরা বলছেন এখানে ভূতে-মানুষ একসাথে বসবাস করে। দিনে-দুপুরে লোকে বাড়িটি দেখতে ভিড় করেন৷ বাড়িকে ঘিরে নানান গুজব কেউ না কেউ রটাতেই থাকেন। আর ভূতের গুজব রটলেই ব্যাস, ওমনি লোকেরা ভূতের খবর পেয়ে রাত-বিরেতে দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন। 

অনেক দিনের পুরানো বাড়ি বলে দেওয়ালের ইট খসে খসে পড়ছে। দেওয়ালের নক্সাগুলো চিত্রপ্রেমী মানুষদের মন ভরিয়ে দেবে৷ বাড়ির সামনেই বৃহদাকার একটা দরজা খোলা, ঠিক দরজার পাশেই একটি অস্পষ্ট বিজ্ঞপ্তি, তাতে লেখা, "কঠোর ভাবে প্রবেশ নিষেধ।" ভূত নিয়ে গুজবের জন্য লোক এখানে উৎপাত করেন বলেই এই বিজ্ঞপ্তি দরজার পাশে সাঁটানো হয়েছে। বাড়ির প্রত্যেক তলার ঘরগুলো দিনের বেলা বলুন আর রাতের বেলা সবসময় আঁধারে ঢেকে থাকে৷ কেউ যদি বাড়ির ভেতর দর্শন করতে চান তাহলে ভাড়াটিয়াদের অনুমতি নিতে হবে৷ যদিও সেই অনুমতি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।  
 
বাড়ির একেবারে মাথায় একটা পুতুল দাঁড়িয়ে আছে, এই সমস্ত পুতুল দ্বারা তৈরী বলেই বাড়িটির নামকরণ করা হয়েছে 'পুতুল বাড়ি'৷ বাড়ির দেওয়াল থেকে উঠোন আগাছাতে ছেঁয়ে গেছে৷ বর্তমানে মালিকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাড়িটির পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো কলকাতার এতো ভালো স্থাপত্যগুলো কালের নিয়মে অবহেলায় ভেঙ্গে পড়ছে। অনেক ইতিহাস অজানায় থেকে যাচ্ছে। এই বাড়িটিকে ভূতের বাড়ি বলে বলে অনেক অপপ্রচার চালিয়ে হেরিটেজ তকমা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

 

No comments