Header Ads

বাঙালিরা একদিনের হুজুগে বাঙালি হতে বেশ পারে!


বাঙালি নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিলেও বেশিরভাগ বাঙালি একদিনের বাঙালি হতেই বেশি ভালোবাসে। বাঙালি পারে বটে। ভিন রাজ্যের ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ দিন দিন এ রাজ্যে ভিড় জমাচ্ছে। তাদের জনবিস্ফোরণের চাপ আজকে বদলে ফেলছে পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসকে। চাকরি, পুঁজি, টেন্ডার ও হকারির দখল নিচ্ছে তারা। বাঙালি সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখছে। যারা আমাদের পায়ের মাটি কেড়ে নিতে চাই তাদের বাঙালি নিজের ঘর আলো করে পুষে রাখছে।
 

সব রাজ্যের লোকেরই সব রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার অধিকার অবশ্যই আছে কিন্তু জোরপূর্বক বাইরের রাজ্যের মানুষজন যদি বাঙালির জমিজমা, ঘরবাড়ি দখল করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে। তারা যদি তাদের ভাষা বাঙালির ওপর চাপাতে চায় তবে অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললে দেখা যায় হিন্দি ভাষাভাষী কিছু মানুষ দিনরাত বাঙালিদের নিয়ে জঘন্য থেকে জঘন্যতর ট্রোল বানাচ্ছে। তারপরও বাঙালি কেবল দেখেই চলেছে। প্রতিবাদ করবার প্রয়োজনটুকুও বাঙালি ভুলতে বসেছে।  

বাঙালি আজও দলীয় রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বলেই আজকে ভিন রাজ্যের লোকেরাও এ রাজ্যের ভোটব্যাঙ্ক হয়ে উঠছে। আর বাঙালির মাথার ওপর চড়ে সম্পূর্ণ বাংলা দখলের স্বপ্নে তারা বিভোর। বাঙালির সবরকম অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাঙালিকে সর্বক্ষেত্রে কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে। তবুও বাঙালি নিশ্চুপ হয়েই দিন কাটাচ্ছে। এ জাতি লম্বা ঘুম থেকে জেগে উঠতে আর পারলো না।  

বাঙালির আরেকটি বদভ্যাস হলো হীনমন্যতায় ভোগা। বাঙালি ভাবে আমাদের কিছুই নেই। বাঙালি মাঝে মধ্যে চিন্তা করে বোধহয় বাঙালি না হয়ে অন্য কোনো জাতিতে জন্মালে ভালো হতো। স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বাঙালির প্রসঙ্গে বলেছেন "অনেকে দুঃখ করে থাকেন, বাঙালি মাড়োয়ারি বা ভাটিয়া হলো না কেন? আমি কিন্তু প্রার্থনা করি, বাঙালি যেন চিরকাল বাঙালিই থাকে।" নেতাজীর মতো মহান ব্যক্তিরাও সারাজীবনের প্রত্যেকটা দিন যেখানে বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করতেন সেখানে আমরা নিজেদের বিশ্বমানব ভেবে নিয়ে হয়ে উঠছি একদিনের বাঙালি। 

নিজের ভালো পাগলেও বোঝে তবু বাঙালি বোঝে না। বাংলা ভাষা চুলোয় যাক অথবা মরে যাক সে নিয়ে বাঙালির মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই। শুধু এ নিয়েই বাঙালি পুরুষের মাথাব্যথা যে বিয়েতে বাঙালির কুর্তা ও পাঞ্জাবির বদলে শেরওয়ানি হলে হয়তো ভালো হতো। বাঙালি নারীদেরও একই মাথাব্যথা যে বিয়েতে বেনারসির বদলে লেহেঙ্গা হলে বেশ স্বচ্ছন্দ হতো। কোনো কোনো বাঙালি তো বলেই বসে যে মাতৃভাষা কেবল ঘরে থাক এবং ঘরের বাইরে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও মাঠে অন্য ভাষা থাকুক। কেউ কেউ বলে থাকেন বাংলা সাহিত্যের বই পড়লে নাকি মডার্ন হওয়া যায়না! 

বাঙালি একদিনের বাঙালি হতে বড্ড পারে। সারা বছর বাংলা ভাষার ভুঁড়ি বের করে দিয়ে শুধু একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালি শহীদদের জন্য মরাকান্না করে বাঙালির কী লাভ? মাতৃভাষা দিবসে শুধু ভাষা শহীদদের একদিনের জন্য শ্রদ্ধা জানালেই বাঙালির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। এই দিনটি হলো বাংলা ভাষার অস্মিতা রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দিন। বাঙালিকে সারা বছর ধরে বাঙালির কথা ভাবতে হবে। বাঙালিকে বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব সত্য ইতিহাস জানতে হবে। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয়ে সচেতন হতে হবে৷ বাংলা ভাষাকে যাতে কেউ ধ্বংস করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

বাঙালি আজকে এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে যে আজকে বাঙালি যদি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চায় তাহলে বাঙালিকে লড়াই করতে হবে। অযথা আধুনিকতার পিছনে দৌড়ে সময় নষ্ট করবার মতো সময় বাঙালির কাছে এখন আর নেই বললেই চলে। বাঙালির যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না 'শেষ নাই যার, বাংলায় তার সার।' অতএব একদিনের হুজুগে বাঙালি হলে কয়েক বছর পর হয়তো ডাইনোসরের মতো বাঙালিরও জীবাশ্ম খুঁজে বেড়াতে হবে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

 

No comments