Header Ads

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো গগন ঠাকুরের কার্টুনেই ঘুম উড়েছিল ব্রিটিশ পুলিশের!


ঠাকুর পরিবারের আরেক উজ্জ্বল সদস্য ছিলেন তিনি। সম্পর্কে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো। স্থাপত্যচিত্র ও কার্টুনে তিনি রেখেছিলেন বিশেষ পারদর্শীতার ছাপ। ঠাকুর পরিবারে রবির আলোয় অনেকেই খানিকটা ম্লান হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রবি ঠাকুর স্বয়ং লিখেছিলেন 'গগন নহিলে তোমারে ধরিবে কেবা।' বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে ছিলেন প্রচার বিমুখ ও অন্তর্মুখী। তাই বোধহয় তাঁকে নিয়ে চর্চা এত কম হয়।  


ভারতীয় চিত্রকলায় কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্রের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিচিত্রা ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সংগঠক ছিলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। অভিনেতা ও মঞ্চ ডিজাইনার হিসেবেও ক্লাবের থিয়েটার এবং মঞ্চের কর্মকাণ্ডেও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। সেই সঙ্গে তিনি একজন চিত্রশিল্পীও ছিলেন। তাঁর আঁকাআঁকির শুরু ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে। সমসাময়িক বাঙালি সমাজই উঠে এসেছে গগনেন্দ্রনাথের ক্যারিকেচারগুলোতে। এই ব্যঙ্গচিত্রগুলো ছিল মূলত সে সময়ের বাঙালি সমাজ সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধারণার বহিঃপ্রকাশ। 

গগনেন্দ্রনাথ বহু বিচিত্র ছবি এঁকেছেন। কখনো প্রাচ্যধারায় নিসর্গচিত্র। জাপানি ওয়াশ পদ্ধতিতে মিস্টিক চিত্রকলা অথবা পাশ্চাত্য কিউবিক পদ্ধতিতে 'দ্বারোকাপুরী'র মতো স্থাপত্যচিত্র। গগনেন্দ্রনাথ লিখতেন মূলত ছোটদের জন্য। তাঁর লেখা 'ভোঁদড়বাহাদূর' আজও সমান জনপ্রিয়। গগনেন্দ্রনাথ নাটকে অভিনয় করার পাশাপাশি মঞ্চসজ্জা, পোশাক পরিকল্পনা নিজ দায়িত্বে করতেন। জাপানী শিল্পী ওকাকুরার মাধ্যমে জাপানী শিল্পীরীতিতে দীক্ষিত  হয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ। জাপানী কায়দায় জোড়াসাঁকোতে তিনি বাগান তৈরি করেছিলেন। গগনেন্দ্রনাথ ছিলেন দক্ষ সংগঠক, মূলত তাঁর উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল 'ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট'। হস্তশিল্পীদের এবং কুটির শিল্পীদের জন্য তৈরি হয়েছিল 'বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিজ।' 

চিত্রকলার প্রতি প্রথমদিকে তাঁর বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। জ্যেষ্ঠপুত্র গেহেন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যুতে গগনেন্দ্রনাথ ভেঙ্গে পড়েছিলেন। পুত্রশোক ভোলার জন্য তাঁর বাড়িতে কথকতার আয়োজন করা হয়েছিল। কখকের উপাখ্যান শুনতে শুনতে গগনেন্দ্রনাথ মন দেন কথক চূড়ামণির ছবি আঁকায়। এখান থেকেই চিত্রশিল্পের প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়। তারপর দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি নিজেকে ডুবিয়ে দেন একের পর এক সৃষ্টির মধ্যে। গগনেন্দ্রনাথ যে বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যায় ভারত তা হলো ব্যঙ্গচিত্রের রূপায়ণ। 

গগন ঠাকুরের হাতেই ভারতে যথার্থ কার্টুন চিত্রাবলীর সূচনা ঘটে। তিনি ব্যঙ্গচিত্রের মধ্য দিয়ে সরব হয়েছিলেন ঔপনিবেশিক শাসনের বিবিধ অত্যাচারের বিরুদ্ধে। গগন ঠাকুরের কার্টুন দেখে ব্রিটিশরাও ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন স্বদেশী করছেন তিনি। ঠাকুরবাড়িতে এসে তল্লাশিও চালায় ব্রিটিশরা। কিন্তু কিছুই মেলেনি। তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের সময়কাল ও তাঁর ভাব-বিবরণেই স্বচ্ছ ধারণা মেলে গগনেন্দ্রনাথের নিগূঢ় ধ্যান ধারণার। একজন প্রকৃত শিল্পীর মতোই সমসাময়িক সময়কে নিজের শিল্পকর্মে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর অজস্র কার্টুনের মধ্যে নির্বাচিত কিছু ছবি নিয়ে তিনটি সংকলন প্রকাশিত হয়, সেগুলি হলো 'বিরূপ বজ্র', 'অদ্ভুতলোক' ও 'নবহুল্লোড়'। যে সংকলন তিনটি জাতীয়তাবাদের বিকাশে জনমনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার  করেছিল। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে  
 
তথ্যসূত্র- গগনেন্দ্রনাথের প্রহসন আর ক্যারিকেচার, মারুফ হোসেন, টিবিএস নিউজ

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর ব্যঙ্গচিত্র, রিড ডট ইতিহাস

No comments