Header Ads

তরুণীর ছদ্মবেশে দিল্লিতে বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা ছুঁড়েছিলেন বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস


অগ্নিযুগের বীর বঙ্গসন্তান ছিলেন বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস। নদীয়ার পোড়গাছাতে নীল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে তোলা নীল বিদ্রোহের নায়ক দিগম্বর বিশ্বাস হলেন বসন্ত কুমার বিশ্বাসের খুল্ল পিতামহ। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 


ছাত্রাবস্থায় তাঁর শিক্ষক ছিলেন ক্ষীরোদচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। যার প্রভাবে মূলত বসন্ত বিশ্বাস বিপ্লবী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন৷ যুগান্তর দলের কর্মী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর পরিচয় এবং সেই সূত্র ধরে ১৯১১ সালের শেষের দিকে রাসবিহারী বসুর সাথে 'বিশে দাস' ছদ্মনাম নিয়ে তিনি উত্তর ভারত চলে যান, রাসবিহারী বসুর বৃহৎ বৈপ্লবিক পরিকল্পনা সফল করার ব্রত নিয়ে।  

১৯১১ সালে বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস যুগান্তর দলে নাম লিখিয়েছিলেন। এই দলের অন্যতম নেতা রাসবিহারী বসুর নিকট তিনি সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে দীক্ষা নেন। দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য বসন্ত বিশ্বাসকে নিয়ে রাসবিহারী বসু চন্দননগর থেকে দেরাদুনে উঠেছিলেন। তাঁরা বেশ কিছুদিন দেরাদুনে ছিলেন। সেখানে বসন্ত বিশ্বাসকে বোমা ছোঁড়ার কলাকৌশল ও প্রশিক্ষণ রপ্ত করিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু।  

১৯১২ সালের ডিসেম্বর মাস৷ রাসবিহারী বসু ও বসন্ত কুমার বিশ্বাস দিল্লি পৌঁছলেন। ২৩ শে ডিসেম্বর, বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ তখনকার প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করেন। শোভাযাত্রাটি দিল্লির কিইন্স গার্ডেন হয়ে চাঁদনীচক দিয়ে দেওয়ান-ই-আমের দিকে অগ্রসর হয়। বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ সস্ত্রীক হাতির পিঠে বসে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিল। সেই সময় পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নির্দেশে লীলাবতী নাম নিয়ে এক তরুণীর ছদ্মবেশে বসন্ত কুমার বিশ্বাস মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ভবন থেকে বড়লাটকে লক্ষ্য করে এক পাউন্ড এগারো আউন্সের একটি বোমা নিক্ষেপ করেন৷ ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বড়লাট, মারা যান তাঁর একজন চৌকিদার। 

পুলিশ দোষীকে খোঁজার জন্য হন্য হয়ে ওঠে। রাসবিহারী বসু ও বসন্ত বিশ্বাস গা ঢাকা দিতে  দেরাদুন পালিয়ে যান। এই দেরাদুনে ব্রিটিশ পুলিশেরা যাতে তাঁকে সন্দেহ না করে তাই তাদের বিভ্রান্ত করতে বসন্ত কুমার বিশ্বাস এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। দেরাদুনে দিল্লিতে বোমা নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদে এক প্রতিবাদী সভার আয়োজন করা হয়, সেই প্রতিবাদী সভাতে বসন্ত বিশ্বাস ঘটনাটির নিন্দা করে এক বক্তব্য রাখলেন। বিপ্লবীদের বিরুদ্ধেও সুর চড়ালেন তিনি। তাঁর বক্তব্য শুনে ব্রিটিশ পুলিশ বন্ধ করলো তাঁর প্রতি সন্দেহ করা। 

বসন্ত কুমার বিশ্বাস মনীন্দ্রনাথ নায়েক ও আমিরচাঁদের মতো কিছু বিপ্লবীকে নিয়ে দেরাদুনে বসে লাহোরের নৈশ ক্লাবে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেন। যদিও তা কার্যকর হয়নি। লাহোরের নৈশক্লাবে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা সফল হয়নি৷ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই আমিরচাঁদ ও অন্যান্য বিপ্লবীরা ধরা পড়লেন। বসন্ত কুমার বিশ্বাস ততদিনে নিজের গ্রাম পোড়গাছাতে ফিরে গেছেন। 

গ্রামে বসে দুটো বছর শান্তিতে কাটিয়ে দিলেন কোনোরকম অসুবিধে ছাড়াই৷ মাঝে আবার তাঁর পিতৃবিয়োগ হলো। এমতাবস্থায় তিনি এক বিশ্বাসঘাতকের পাল্লায় পড়ে গেলেন। পিতার শ্রাদ্ধের দিন এক জ্ঞাতিভাইয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি ধরা পড়ে গেলেন। তিনি ধরা পড়ার পর ব্রিটিশ পুলিশ কিছুটা অবাক হয়েছিল। যে তরুণ যুবকটি দেরাদুনে এতো বিক্ষোভ দেখাল, সেই কিনা মূল দোষী। বসন্ত কুমার বিশ্বাস ধরা পড়ার পর দিল্লির দায়রা আদালতে দিল্লি-লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায়  তাঁর বিচার শুরু হয়। যে বিচারে বসন্ত কুমার বিশ্বাসের মৃত্যুদণ্ড হয়।। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments