Header Ads

কেন্দ্রীয় সরকারি সকল পরীক্ষা বাংলায় নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা


ভারতের মতো স্বাধীন দেশে সকল মানুষের তার মাতৃভাষার অধিকার আছে। অথচ আমরা আজও মাতৃভাষার সকল অধিকার পাইনি। বাঙালির বাংলা ভাষার প্রতি অতিরিক্ত অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে বিশেষ রাজনৈতিক দলগুলো বাঙালিকে বারংবার কোণঠাসা করছে। বাংলা পক্ষ চাকরি, টেন্ডার ও হকার সর্বক্ষেত্রে ভূমিপুত্র সংরক্ষণ নিয়ে একনাগাড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সমস্ত কেন্দ্র সরকারি চাকরির পরীক্ষা বাংলায় সকল বাঙালিকে সুযোগ করে দেওয়ার দাবিতে গত তিন বছর ধরে মাঠে নেমে লড়াই করছে ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন বাংলা পক্ষ। এবার বাংলা পক্ষের এই দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন সমাজের বহু বিশিষ্টজনেরা। 


তালিকায় রয়েছেন বাংলার স্বনামধন্য লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং সঙ্গীতশিল্পীরা। তাঁরা ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে তাঁদের কথা জানিয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন প্রখ্যাত কবি জয় গোস্বামী, প্রখ্যাত লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত গায়ক সিধু (ক্যাকটাস), বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ও অন্যান্যরা। এছাড়াও বার্তা দেবেন সুবোধ সরকারের মতো ব্যক্তিত্বও। বিশিষ্ট গায়ক ইমন সেন ও বিশিষ্ট গায়িকা উজ্জয়িনী ভট্টাচার্যর মতো শিল্পীরাও এগিয়ে আসছেন।

বাংলা পক্ষের প্রতিনিধি কৌশিক মাইতি জানান "ভারতে কেন্দ্র সরকারি চাকরির অধিকাংশ পরীক্ষা শুধুমাত্র হিন্দি ও ইংরেজিতে দেওয়া যায়। অর্থাৎ হিন্দি ভাষীরা মাতৃভাষায় দেয়, বাঙালিরা ইংরেজিতে দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই বঞ্চিত হয় বাঙালি ছেলেমেয়েরা। বাংলা পক্ষ এই ইস্যুতে দীর্ঘ লড়াই করছে। ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই লড়াইকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে আমরা বাংলার গুণী মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সমস্ত কেন্দ্র সরকারি চাকরির পরীক্ষা বাংলায় দেওয়ার সুযোগ চাই- এই দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন বাংলার শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক সহ বিশিষ্টজনেরা। বাংলা পক্ষের তরফে ওনাদের ধন্যবাদ জানাই। এই দাবি পূরণ হলে বাংলার লাখ লাখ ছেলেমেয়ের কাছে কেন্দ্র সরকারি চাকরির দরজা খুলে যাবে। বাঙালির ভবিষ্যতের স্বার্থে আমরা এই লড়াই শেষ পর্যন্ত লড়বো।"

কবি জয় গোস্বামী ভিডিও বার্তায় বলেন "কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে চাকরির পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয় তা মাতৃভাষাতে হওয়াটাই জরুরী কারণ আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। তেমনই যার মাতৃভাষা তেলেগু, যার মাতৃভাষা তামিল ও যার মাতৃভাষা মালয়ালম তাঁদেরও মাতৃভাষায় সরকারি চাকরি দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিৎ। তা না হলে মাতৃভাষার প্রতি অবিচার ও অমর্যাদা করা হয়। আজকে মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে এই দাবির সমর্থনে আমার প্রস্তাব যে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি পরীক্ষা যার যার যা মাতৃভাষা সেই ভাষাতে পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার চাকুরী প্রার্থীদের দেওয়া হোক।" 

লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন "আমি নিজের রাজ্য বাংলাকে ভালোবাসি। বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতিকে আমি ভালোবাসি। বাংলাতে বাংলা ও বাঙালির অধিকার কায়েম করতে হবে সর্বত্র সেটা শিক্ষা হোক বা চাকরি হোক সবার আগে বাঙালি সেই অধিকার পাবে। বাংলায় থেকে আজকে দেখতে পাচ্ছি বাঙালিরা সর্বত্র বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। কলকাতার পরিসংখ্যানে দেখাচ্ছে আজকে কলকাতার ৫১ শতাংশ লোক অবাঙালি। বাংলার প্রাণকেন্দ্র কলকাতায় দাঁড়িয়েও আমাকে হিন্দি বলতে হয়। আমি মনে করি, বাংলার বুকে বাঙালিকে বঞ্চিত রেখে বহিরাগতদের সুযোগ করে দেওয়া সবার আগে বন্ধ হওয়া দরকার। বাঙালিকে এগিয়ে যেতে হলে, বাঙালিকে জাগাতে হলে প্রথমে বাঙালির জন্য দরজা সবসময় খোলা রাখতে হবে। আর বাঙালির অধিকার বুঝে নিতে হলে বাঙালিকে লড়াই করতে হবে।" 

লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন "কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যারা চাকুরিপ্রার্থী তারা দুটো ভাষাতে পরীক্ষা দিতে পারেন হিন্দি ও ইংরেজিতে। আমার এটাকে খুব একটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়না। কারণ যারা হিন্দি ভাষাভাষী তারা তাদের মাতৃভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। অথচ অন্যান্য ক্যান্ডিডেটরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। এটা আমার কাছে অবিচার বলে মনে হয়। শুধু যদি ইংরেজিতেও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাও ঠিক আছে, তাতেও সকলের প্রতি সমান সুবিচার করা হবে। কিন্তু সব ভাষাতে যদি পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয় তাহলে তা সকলের জন্য সুবিধাজনক। আমার মনে হয়, কেন্দ্র সরকারের উচিৎ অবিলম্বে হিন্দি ও ইংরেজির বদলে ইংরেজিতে পরীক্ষা নেওয়া হোক নতুবা সব ভাষাতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। কিছু মানুষ বাড়তি সুবিধা পেলে এই আমাদের বেকারত্ব যেখানে প্রখর ও বিশাল সেখানে কিছু মানুষ বঞ্চিত হবেন। এটা আমার কাছে অন্যায় বলেই মনে হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। যেটা একদম হওয়া উচিৎ নয়।" 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন "আর একটা দিন পেরোলেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনটি যে শুধু বাংলা ভাষার জন্য গৌরবের তা নয়, ইউনেস্কোর নির্দেশে এটা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মাতৃভাষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। মাতৃভাষাকে রক্ষা করবার সংকল্প ও প্রতিজ্ঞার সঙ্গে তার যোগসূত্র তৈরি হয়ে গেছে। ফলে এই দিনটিতে আমরা অবশ্যই নানান অঞ্চলের ভাষা শহীদদের কথা স্মরণ করবো। পূর্ববঙ্গের শহীদদের কথা, শিলচরের শহীদদের কথা, পুরুলিয়ার শহীদদের কথা বা তামিলনাড়ুর শহীদদের কথা যারা প্রাণ দিয়ে আমাদের ভাষাগুলোকে গৌরবান্বিত করেছেন। কিছু কিছু কাজের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। আমরা চাইবো কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত পরীক্ষা,  প্রাদেশিক ছাত্ররা যে সমস্ত পরীক্ষা দেয় সেই পরীক্ষা তাদের মাতৃভাষাতে হোক বিশেষ করে যে বৃহৎ ভাষাগুলো আছে আমাদের অষ্টম তফসিলে যে ২২ টি ভাষা আছে সেই ভাষাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষার সুযোগ তৈরি হওয়া দরকার। এবার সেই মাতৃভাষাতে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের করা দরকার। কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে হতেই পারে। এখন এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যে দাবিটা আমাদের করা একান্ত প্রয়োজন তা হলো কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা ভারতের প্রধান ২২ টি  ভাষাতেই নেওয়া হোক। এই একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে এটা আমাদের সকলের সংযতবদ্ধ দাবি।"

বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ক্যাকটাস ব্যান্ডের সিধু বলেন "একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটিকে মাথায় রেখে বাংলা পক্ষের তরফে একটা আবেদন জানানো হচ্ছে যে আবেদনটি আমিও ব্যক্তিগত ভাবে সমর্থন করি। আবেদনটি এরকম যে ভারতের সরকারি চাকরির যাবতীয় পরীক্ষার যে ইন্ট্রান্স এক্সামিনেশনগুলো হয় সেগুলো যেন যে যার মাতৃভাষাতে দিতে পারে।  এখন এই পরীক্ষা হিন্দি ও ইংরেজিতে উত্তরপত্র লেখা যায়। আমরা বাঙালিরা হিন্দিতে উত্তর দিতে পারি না, আমাদের ইংরেজিতে উত্তর দিতে হয়। আর ইংরেজিতে দুর্বল থাকাটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই এই পরীক্ষাগুলোতে অটোমেটিক্যালি পারফরম্যান্স খুব খারাপ বা দুর্বল হয়। তাই ভারত সরকারের কাছে একান্তই আবেদন যে সমস্ত চাকরির পরীক্ষা বা প্রবেশিকা পরীক্ষা তা যেন মাতৃভাষাতে গ্রাহ্য করা হয়৷ তবেই আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের তাৎপর্য।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments