এক মেয়েকে বাঁচাতে মঞ্চে প্রাণের জন্য গান গাইলেন নচিকেতা
এক মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বছর কুড়ির অংশিতা রায় নামে একটি মেয়ের জীবন বাঁচাতে গত ৭ ই ফেব্রুয়ারী দমদমের রবীন্দ্র ভবনে কনসার্ট করলেন তিনি৷ পুরো কনসার্টটির পরিকল্পনা ছিল তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত৷ তিনি এই কনসার্টের নামকরণ করেন "প্রাণের জন্য গান"। অংশিতা রায়ের স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকারের পদক্ষেপ নিয়ে তিনি মাইক হাতে গানে-গল্পে মঞ্চে মেতে উঠলেন একক অনুষ্ঠানে।
অংশিতা রায়, মেয়েটি আর পাঁচটা বাঙালি বাড়ির মেয়ের মতোই। শুধু শারীরিক কিছু সমস্যার জন্য তার জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তার দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। সপ্তাহে তিনদিন করে তার ডায়ালিসিস করাতে হয়। মেয়েটির জন্ম এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাই তার চিকিৎসার খরচ বহন করতে তার পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। তার পরিবার নিজেদের মেয়েকে বাঁচাতে যত রকমের চেষ্টা করা যায় ঠিক তত রকমের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
অংশিতার পিছনে মাসে ৭০,০০০ টাকা খরচ করতে হতো তার পরিবারকে। লকডাউনে তাদের টালমাটাল অবস্থা হয়ে যায়। অংশিতার পরিবারের লোকেরা অংশিতার খরচের টাকা জোগাতে না পেরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেই সময় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের সাহায্যের হাত বাড়ায়। তাঁরা নচিকেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি কনসার্টের প্রস্তাব দেয়। নচিকেতা তাতে রাজিও হয়ে যান৷
নচিকেতা ঠিক করেন "প্রাণের জন্য গান" শীর্ষক একক সঙ্গীতানুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত সকল অর্থ তুলে দেবেন অংশিতার পরিবারের হাতে, তার কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসা জনিত খরচের ভার বহন করার জন্য। অবশেষে নচিকেতা কথা রাখলেন। তিনি একরাশ আবেগে ভাসলেন সমগ্র অনুষ্ঠানে। ৭ ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় দমদম রবীন্দ্র ভবনে তিনি প্রাণের জন্য গান গাইলেন। তার জীবনমুখী গান শুনতে গুণমুগ্ধ স্রোতারা ভিড় করলেন। প্রবল জনস্রোত দেখে নচিকেতার মন কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল।
নচিকেতা চক্রবর্তী নামক সঙ্গীতশিল্পী মানুষটা এমনই। তাঁর প্রতিটি গানই বলে দেয় তিনি ঠিক কতটা মহান মানুষ। এমন শিল্পী সমাজে সচরাচর মেলে না। তিনি সমাজের কথা অদ্ভুতভাবে যেমন গানে বিশ্লেষণ করে তেমনই অদ্ভুদভাবে সেই সমাজের উন্নয়নের কথাও চিন্তা করেন। তিনি অংশিতার জন্য যা করলেন তার পরিবারের লোকেরা আজীবন তার কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবেন। আজ ৯ ই ফেব্রুয়ারী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অংশিতার ডায়ালিসিসের পর তার ব্লাডার অপারেশন হবে। এই অপারেশন সফল হওয়ার পর খুব শীঘ্রই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। তারপর অংশিতা এক সুস্থ-সুন্দর জীবনলাভ করবে। নচিকেতার এরকম একটি মানবিক উদ্যোগই বলে দিচ্ছে "বসতি আবার উঠবে গড়ে, আকাশ আলোয় উঠবে ভরে, জীর্ণ মতবাদ সব, ইতিহাস হবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment