Header Ads

মহারাণীর শাসনকালে কলকাতায় চালু হয় ভারতের প্রথম বায়ুদূষণ বিরোধী আইন


লকডাউনের পরবর্তী সময় কলকাতায় বেড়ে গেছে বায়ুদূষণের মাত্রা। কলকাতার বহু জায়গা ঢেকে থাকছে ধোঁয়াশাতে। এই শীতেও নিস্তার নেই শহরবাসীদের। আমফানে শহরে প্রচুর পরিমাণ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। লকডাউনের পর বিভিন্ন কলকারখানা চালু হয়েছে। যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। তাই বায়ুদূষণ অনেকটা বেড়ে গেছে। 


কলকাতায় বায়ুদূষণ বৃদ্ধি অনেকের নজরেও এসেছে। একাধিক পদক্ষেপ নিয়েও তা হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছেনা এই মুহূর্তে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় কলকাতায় বায়ুদূষণ কিছুটা চিন্তা বাড়িয়েছে। শীতকালে বায়ুদূষণ মাত্রাতিরক্ত বেড়েছে। কলকাতায় বায়ুদূষণের সূচক ২৫০ এর আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই খারাপ। এর কারণ হলো শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য বাতাসে ধুলোর কণা অনেক বেশি উড়তে থাকে। 

অবাক করা বিষয় হলো এই কলকাতা শহরেই ভারতের প্রথম বায়ুদূষণ বিরোধী আইন চালু হয়েছিল। সারা বিশ্বের নিরিখে যা দ্বিতীয়। অনেক কাল আগেকার কথা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন বিদায় নিয়েছে। শুরু হয়েছে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার সময়কাল। ব্রিটিশরা কলকাতার বুকে অনাবিল আনন্দের সুখ অনুভবের জন্য কলকাতা শহরটাকে নিজেদের মতো করে সাজাতে চেয়েছিল। সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনামাফিক একাধিক উদ্যোগ নিতে থাকে ব্রিটিশরা। 

ইংল্যান্ড সবে শিল্পবিপ্লবের সূচনা করে এক দশক এগিয়েছে। দেশে-বিদেশে শিল্পের প্রতিযোগিতা চলছে। সেই প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের ধারে কাছে কেউ পৌঁছাতে পারলো না। শিল্পবিপ্লবের সাফল্যের কথা মাথায় রেখে ব্রিটিশরা ইংল্যান্ডের ধাচে কলকাতায় বেশ কিছু কারখানা গড়ে তুললো। গঙ্গার দুইপাড়ে বসানো হলো পাটকল। ১৮৫৫ সালে কলকাতা থেকে রাণীগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন পাতা হলো পাটকলে ব্যবহৃত কয়লা বহনের জন্য। 

মহানগরের শৈল্পিক পরিকাঠামোর পরিবর্তন এলো। সাধারণ জ্বালানির পরিবর্তে কয়লার ব্যবহার বাড়ানো হলো। এই কয়লার ধোঁয়া থেকেই কলকাতায় অতিরিক্ত বায়ুদূষণ লক্ষ্য করা যায়। দিনের আলো ভূষোকালির ন্যায় কালো ধোঁয়াতে ঢেকে যায়। দূষণের অত্যাচারে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। সকলের প্রায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। সকল মানুষ চাইছেন বায়ুদূষণ রোধ করে আলোকিত রৌদ্রজ্বল দিনকে ফিরিয়ে আনতে। 

কলকাতার এলিট শ্রেণীর ইংরেজ ও ধনী বাঙালিরা সরকারের দ্বারস্থ হলেন। ১৮৬৩ সালে পাশ হলো 'The Calcutta & Howrah Smoke-Nuisances Act' নামের একটি আইন। এর বছর দশেক আগে লন্ডনে এই সম-আইন নিয়ে আসা হয়েছিল। বায়ুদূষণ রোধের জন্য কয়েকটি সরকারি নির্দেশাবলি তৈরি করা হয়। যে নির্দেশাবলি অমান্য করলেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হতো। মাঝেমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের দ্বারা চিমনি ও চিমনির ধোঁয়া পরীক্ষা করা হতো। কারখানার বয়লারেও নজরদারি চালানো হতো। এতোকিছুর পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। ১৮৯৯ সালে কলকাতার অবস্থা বর্তমান দিল্লির থেকেও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গোটা কলকাতার প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। অবশেষে বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের তত্বাবধানে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে কলকাতার বুকে পাস করলো 'The Bengal Smoke Nuisances Act' নামক বায়ুদূষণ বিরোধী আইন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments