২ টাকায় চপ বিক্রি করে দশটি পরিবারের খাদ্য জোগাচ্ছেন অভিজিৎ দে
কাজে কীসের লাজ? হোকনা যেমন কাজ৷ কোনো কাজকেই ছোটো করে দেখা উচিৎ নয়। আধুনিক যুগের ইঁদুর দৌড়ে ছুটতে ছুটতে আমরা আজকাল একে অপরের পেশাকে অযথা অপমান করে থাকি৷ আমরা বারবার ভুলে যাই এ সমাজে সকল পেশার মানুষই প্রয়োজন। সকলেই যদি একই পেশার পিছনে ছোটে তাহলে আলাদা আলাদা পেশাগুলোর কী হবে? আমাদের রোজগার জীবনে সকাল থেকে সন্ধ্যার এই যে দিনযাপন তার পিছনেও নানাবিধ পেশার মানুষদের ভূমিকা থাকে। তাই কোনো পেশা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা নিছক বোকামি।
যে-কোনো পেশাকে টার্গেট করেই মানুষ অনেক দূর যেতে পারে। তারকেশ্বরের বাসিন্দা অভিজিৎ দে ঠিক এমনটাই করে দেখাচ্ছেন। তিনি চপশিল্পের মতো এক ক্ষুদ্র পেশাকে আপন করেছেন। তিনি ২ টাকা মূল্যে ফুলুরি ও আলুর চপ বিক্রি করে দশটি পরিবারের রুটি রোজগার জোগাচ্ছেন।
২ টাকাতে সচরাচর এখন কোথাও আর চপ পাওয়া যায়না। সেখানে অভিজিৎ দে ২ টাকায় চপ বিক্রি করছেন। চপপ্রেমী লোকেরা দিব্যি খুশী। কারণ ২ টাকায় তারা এই দোকানে খাঁটি সর্ষের তেলে ভাজা মুচমুচে তেলেভাজা পাচ্ছেন। আট থেকে আশি প্রায় সকলেই অভিজিৎ বাবুর দোকানে তেলেভাজা কিনতে ভিড় করেন৷ দোকানে আয়ের বেশিরভাগটাই তার আসে চপ থেকে।
ধনেখালি সিনেমাতলা মোড়ে রাস্তার পাশে অবস্থিত এই দোকান৷ এখানে ফুলুরি ও আলুর চপ ছাড়াও ক্যাপসিকামের চপ, টম্যাটোর চপ ও আলুরি পাওয়া যায়। এই দোকানের বয়স ৪০ বছর। এই দোকানের মালিক হলেন অভিজিৎ দের বাবা রাধানাথ দে। কিন্তু অভিজিৎ দে দোকানটিকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তিনি ২০১১ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। তারপর একাধিক জায়গাতে তিনি চাকরির চেষ্টা চালান৷ যদিও সেই চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। তাই তিনি পারিবারিক ব্যবসাতেই মন দেন।
সারা বছর অভিজিৎ বাবুর দোকানে চপের মূল্য একই রাখা হয়৷ তারা কখনোই চপের দাম বাড়াতে রাজী নয়।মাঠে চন্দ্রমুখী আলু ওঠার পর ২০০ থেকে ২৫০ বস্তা তিনি হিমঘরে রাখেন। তা দিয়েই বছরভর কেটে যায় তাদের। তারা চাল ক্রয় করে কয়েকটি পরিবারকে দিয়ে দেন মুড়ি ভাজার জন্য৷ কয়েকজনকে তারা পুরানো খবরের কাগজ কিনে দেন, তা দিয়ে তারা ঠোঙা বানিয়ে দেন। এনারা অভিজিৎ বাবুদের দোকানের ওপর নির্ভর করেই বাঁচেন। অভিজিৎ বাবুরা দারিদ্র্যের যন্ত্রণা ভালোভাবেই অনুভব করেছেন সেজন্য প্রতি শুক্রবার তারা দীনদুঃখী মানুষদের বিনামূল্যে চপ-মুড়ি খাওয়ান। এভাবে সততা ও কাজের প্রতি ভালোবাসাকে সাঙ্গ করে তারা সুখে জীবন কাটাচ্ছেন৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment