কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক লতিকা সরকার
অধ্যাপিকা লতিকা সরকার যিনি ১৯৭৫ থেকে ২০০৫ এই সময়কালে লিঙ্গ ন্যায়বিচার এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করেন। তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁকে বলা হয় বাংলায় মানবীবিদ্যার পথিকৃৎ। মহিলা অধিকার আন্দোলনের আন্দোলনকারী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন লতিকাদি নামে। স্ত্রী শিক্ষা প্রসারেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
লতিকা সরকার ১৯৩৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা স্যার ধীরেন মিত্র ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী। লতিকা সরকার কেমব্রিজের নিউনহাম কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় নারী হিসেবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। পরে তিনি ১৯৫১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পিএইচডি লেখেন। যার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানিত হন। এরপর ১৯৬০ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন অধ্যয়ন করেন। তারপর ১৯৬১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৫৩ সালে লতিকা সরকার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনিই হলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম মহিলা অধ্যাপিকা। আইন তখন মহিলাদের কাছে একটি নতুন ক্ষেত্র ছিল। প্রাথমিকভাবে এই কোর্সে মাত্র দশজন ছাত্রী ছিল। ১৯৬০ সালের দিকে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ থেকে ১০০ জন। তিনি ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এখানে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও আইনজীবিদের শিক্ষা দান করেছিলেন। অবশেষে তিনি আইন অনুষদের প্রধান হন।
লতিকা সরকার যখন তাঁর পেশার শীর্ষে ছিলেন, তখন তাঁকে ভারতে অবস্থিত মহিলাদের অবস্থা সম্পর্কিত কমিটিতে সমতা প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছিল। আইন, নারীশিক্ষা এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রণী হিসাবে তিনি এই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। মহিলাদের অধিকার সম্পর্কিত প্রচারের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীলতা এবং বিশ্লেষণাত্মক স্পষ্টতা সহ মহিলা কমিটির স্থিতিতে মহিলা আইন সম্পর্কিত অধ্যায়ের তিনি সূচনা করেছিলেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন আইন অধ্যাপক উপেন্দ্র বক্সী, কেলকার ও ড. বসুধা ধগম্বরকে নিয়ে লতিকা সরকার মথুরা ধর্ষণ মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ১৯৭৯ সালে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে এক ঐতিহাসিক উন্মুক্ত চিঠি লিখেছিলেন। প্রায় চার পাতাবিশিষ্ট এই চিঠি নারীদের চিরকাল সন্ত্রাস, ভয় দেখানো ও পরাধীন অবস্থায় রাখার জন্য অপরাধ হিসাবে বিচার বিভাগ, ধর্ষণ আইন এবং যৌন সহিংসতার প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য হ্রস্বকালীন শিখা হিসেবে কাজ করেছিল। এর ফলে ১৯৭০ সালের জানুয়ারীতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রথম নারীবাদী গোষ্ঠীর জন্ম হয়। যে গোষ্ঠীর নামকরণ করা হয়েছিল "Forum Against Rape".
১৯৮০ সালে ড. বীণা মজুমদারের সাথে লতিকা সরকার 'সেন্টার ফর উইমেনস ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের এপ্রিলে এসএনডিটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি উইমেন স্টাডিজের প্রথম সম্মেলনে মুম্বই এসেছিলেন। এই সমাবেশে 'ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন স্টাডিজ' গঠিত হয়েছিল। পরবর্তী সম্মেলনগুলিতে তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন স্টাডিজে তিনি অসংখ্য বৈধ আইনের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ককে আকর্ষিত করেছিলেন।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
তথ্যসূত্র- ফেমিনিস্ট ইন্ডিয়া, এমএসএন ইন্ডিয়া নিউজ, ইন্ডিয়ান আর্কাইভ।
Post a Comment