Header Ads

আমেরিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় একমাত্র বাঙালি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবে বীরভূমের অনিরুদ্ধ


আমেরিকাতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। যেখানে মূলত বিজ্ঞান বিষয়ে প্যানেল আলোচনা চলে ও মঞ্চে বিজ্ঞানের নানান বিষয়ের ওপর খুদে থেকে বড়ো সব বয়সের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারের সন্ধানে বিভিন্ন রকম মডেল বানিয়ে সেই বিষয়ে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন৷ 


চলতি বছরের মে মাসে আমেরিকাতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। এখানে একমাত্র বাঙালি শিশু বিজ্ঞানী হিসেবে অংশগ্রহণ করবে বীরভূমের অনিরুদ্ধ দাস। সে বর্তমানে দশম শ্রেণীর ছাত্র। সারা বিশ্বের ৮০ টি দেশের শিশু বিজ্ঞানীরা এই অনুষ্ঠানে প্রায় ১৮০০ টির বেশি প্রকল্প উপস্থাপিত করবে। এ দেশ থেকে মোট ২০ জন শিশু বিজ্ঞানী প্রতিনিধিত্ব করবে তার মধ্যে একমাত্র বাঙালি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবে অনিরুদ্ধ দাস। 

এর আগে অনিরুদ্ধ ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর দ্বারা আয়োজিত জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের ২৭ তম অধিবেশনে জাতীয় স্তরে সেরা নির্বাচিত হয়েছিল। যে প্রকল্পের গাইড ছিলেন তার বীরভূম জেলার কয়থা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ। এই প্রকল্পে তার সঙ্গী ছিল তার সহপাঠী রামিজ আকবর। অনিরুদ্ধের প্রকল্পের বিষয় ছিল আকাশমণি গাছের ফল থেকে প্রাপ্ত নির্যাস কীভাবে জলাশয়ের মধ্যে বেড়ে ওঠা মশার লার্ভা নিধনের সহায়ক হতে পারে। তার এই অভিনব গবেষণা সারা ভারতের ১৮ টি প্রকল্পের মধ্যে একটি ছিল। পরবর্তী ধাপে ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফেয়ার ২০২১-এ অনিরুদ্ধ ঐ প্রকল্পটি উপস্থাপনা করার সুযোগ পেয়েছে৷ 

আমেরিকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলাতে অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে অনিরুদ্ধ দাস লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানায় "আমরা যে প্রকল্পটা করছি এটা একটা জৈব লার্ভিসাইড মানে জৈব লার্ভানাশক তৈরি করেছি। আমরা অনেক ধরণের রাসায়নিক ভাবে তৈরি লার্ভানাশক ব্যবহার করি। এটাতে লার্ভানাশক বলে পরবর্তীকালে বায়োম্যাগনিফিকেশন প্রসেসের মাধ্যমে আমাদেরই ক্ষতি করে। তাই এর বদলে আমরা একটি জৈব লার্ভানাশক তৈরি করেছি যার কোনো রকমের ক্ষতিকারক সাইড এফেক্ট নেই। আমাদের এই প্রকল্পটি প্রথমে এনসিএসসি বা ন্যাশনাল চিলড্রেন সায়েন্স কংগ্রেসে গিয়েছিল। এনসিএসসির তিনটি পর্যায় রয়েছে, প্রথমে জেলা পর্যায় সেখানে প্রথম হলে রাজ্য পর্যায় তারপর সেখানে প্রথম হলে জাতীয় পর্যায়ে। এই জাতীয় পর্যায়ে ১৯ টি প্রকল্পের মধ্যে আমাদের প্রকল্পটি একটি ছিল। এইভাবে এনসিএসসির মাধ্যমে ভারতবর্ষে প্রায় পাঁচটি মেগা অনুষ্ঠান হয় এই টাইপের, যারা এই জাতীয় পর্যায়ের প্রকল্পগুলোকে মনোনীত করে। এদেরকে কেন্দ্র করে 'ইনিশিয়েটিভ ফর রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন অফ স্টেম' বা IRIS নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের একটি ভার্চুয়াল ক্যাম্প হয়েছিল যেখানে হাজারেরও বেশি প্রজেক্ট ছিল। এদের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল ক্যাম্প থেকে একশোটি প্রজেক্ট সর্ট লিস্টেট  হয়েছিল। এই একশোটি প্রজেক্টের মধ্যে মোট ২০ টি প্রজেক্ট মনোনীত হয়েছিল যার মধ্যে আমাদের প্রজেক্টটিও ছিল। এবার ভারতের হয়ে এই ২০ টি প্রজেক্ট যারা বানিয়েছিল তারা আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফেয়ার ২০২১ এ ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। ভবিষ্যতে যদি এই প্রকল্পটিকে আমরা আয়ের ক্ষেত্রে উপস্থাপন করতে চাই। একই সঙ্গে দেশ ও দশের নাম উজ্জ্বল করতে চাই। আমরা সমাজের জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য এটা করছি৷ আমরা মূলত যে লার্ভিসাইডগুলো ব্যবহার করি সেগুলো অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়৷ রাসায়নিক ভাবে ব্যবহার করলে এর প্রচণ্ড ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে। তাই আমরা জৈবিক নির্যাস দিয়ে লার্ভিসাইডটা বানিয়েছি যা ভারতের সর্বত্র পাওয়া যায়। এই লার্ভিসাইডগুলো মশাদের লার্ভা দমনে করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও ফাইলেরিয়ার মতো ভয়ঙ্কর রোগ ধ্বংস করবে। আমরা বিভিন্ন পঞ্চায়েতের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গোটা দেশে এটা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হলো সমাজের কল্যাণ করা।"

নলহাটির কয়থার মতো এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই পড়াশুনা করে অনিরুদ্ধ সবার নজর কাড়ছে। একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই গবেষণা করে সে হয়ে উঠেছে একজন শিশু বিজ্ঞানী। অনিরুদ্ধ ভবিষ্যতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। অনিরুদ্ধ একজন সফল বাঙালি হিসেবে আগামীদিনে বাংলার নাম বিশ্বসভায় তুলে ধরবে। আমরা সকল বাঙালি চাই অনিরুদ্ধ নিজের মতো করে লড়াই করে দেশ ও দশের একজন হোক। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments