বিদ্যাসাগর রচিত 'বর্ণপরিচয়' বইটির প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮৫৫ সালে প্রকাশিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত বর্ণপরিচয়। প্যারীচরণ সরকার ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একসময় সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা ইংরেজি ও বাংলায় বর্ণশিক্ষা বিষয়ক একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের একটি বই লিখবেন। সেইমতো প্যারীচরণ সরকার লিখলেন 'ফার্স্ট বুক অফ রিডিং' ও বিদ্যাসাগর লিখলেন 'বর্ণপরিচয়'। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বর্ণপরিচয়' বইটির প্রসঙ্গে 'চারিত্রপূজা' গ্রন্থে বলেন-----
"বিদ্যাসাগরের জীবনীতে এই অনন্যসুলভের মনুষ্যত্বের প্রাচুর্যই সর্বোচ্চ গৌরবের বিষয়। তাঁহার সেই পর্বত-প্রমাণ চরিত্রমাহাত্ম্য তাঁহারই কৃত কীর্তিকেও খর্ব করিয়া রাখিয়াছে।
তাঁহার প্রধান কীর্তি বঙ্গভাষা। বিদ্যাসাগর বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। তৎপূর্বে বাংলায় গদ্যসাহিত্যের সূচনা হইয়াছিল, কিন্তু তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা গদ্যে কলানৈপুণ্যের অবতারণা করেন।
বাংলাভাষাকে পূর্বপরিচিত অনাবশ্যক সমাসাড়ম্বরভার হইতে মুক্ত করিয়া, তাহার পদগুলির মধ্যে অংশযোজনার সুনিয়ম স্থাপন করিয়া, বিদ্যাসাগর যে বাংলা গদ্যকে কেবলমাত্র সর্বপ্রকার-ব্যবহারযোগ্য করিয়াই ক্ষান্ত ছিলেন তাহা নহে, তিনি তাহাকে শোভন করিবার জন্যও সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন৷ গদ্যের পদগুলির মধ্যে একটা ধ্বনিসামঞ্জস্য স্থাপন করিয়া, তাহার গতির মধ্যে একটি অনতিলক্ষ্য ছন্দঃস্রোত রক্ষা করিয়া, সৌম্য এবং সরল শব্দগুলি নির্বাচন করিয়া, বিদ্যাসাগর বাংলা-গদ্যকে সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতা দান করিয়াছেন। গ্রাম্য পাণ্ডিত্য এবং গ্রাম্য বর্বরতা, উভয়ের হস্ত হইতেই উদ্ধার করিয়া তিনি ইহাকে পৃথিবীর ভদ্রসভার উপযোগী আর্যভাষারূপে গঠিত করিয়া গিয়াছেন।"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment