Header Ads

দেশের প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্বীকৃতি পাচ্ছেন পূর্ণেন্দুশেখর গুহ


আন্দামান সেলুলার জেলের ফলকে বাঙালি বিপ্লবীদের যে তালিকা আছে তাতে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাবো কোচবিহারের এক প্রখ্যাত বিপ্লবীর নাম। যাকে আমরা হয়তো ভুলে গেছি বা নামও হয়তো শুনিনি। তাঁকে চিনতে ও জানতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। এই বিপ্লবীর নাম হলো পূর্ণেন্দুশেখর গুহ। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তাঁর বারো বছরের জন্য আন্দামান সেলুলার জেলে কারাবাস হয়।   


সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তালিকায় জায়গা পেতে চলেছেন কোচবিহার শহরের পূর্ণেন্দুশেখর গুহ। এর ফলে বাংলার অগণিত মানুষ জানতে পারবেন তাঁর কথা। পূর্ণেন্দুশেখর গুহের ইতিহাস প্রকাশিত হতে চলেছে ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের স্থায়ী সদস্য শিক্ষারত্ন ড. সুরজিৎ ধরের হাত ধরে। তিনি প্রায় সাত বছর ধরে গবেষণা করে পূর্ণেন্দুশেখর গুপ্তের জীবনী তুলে এনেছেন। 

ড. সুরজিৎ ধর এই প্রথমবারই যে গবেষণা করে কোনো বিপ্লবীর জীবনী তুলে ধরার কাজ করছেন তা কিন্তু নয়, এর আগে তিনি গবেষণা করে সূর্য সেন ও গনেশ ঘোষদের জীবনী গ্রন্থ আকারে সকলের সামনে নিয়ে আসেন। এতোদিন পর্যন্ত পূর্ণেন্দুশেখর গুহের যে ইতিহাস আমাদের অজানা ছিল তা জানানোর দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করলেন ড. সুরজিৎ ধর। 

ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টরিক্যাল রিভিউ পূর্ণেন্দুশেখর গুহকে দেশের প্রথম সারির স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। ড. সুরজিৎ ধর পূর্ণেন্দুশেখর গুহের জীবনী গ্রন্থ আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন। আগামী মাসে প্রকাশিত হবে এই গ্রন্থটি। কলকাতা থেকে ২০১৪ সালে পূর্ণেন্দুশেখর গুহকে নিয়ে তিনি গবেষণার কাজ আরম্ভ করেন। তিনি মাস দুয়েক আগে কাউন্সিলকে রিভিউ পাঠান। তিনদিন আগে কাউন্সিলের স্বীকৃত সূচক উত্তর পেয়েছেন তিনি।

পূর্ণেন্দুশেখর গুহ মহাশয়ের দুই পুত্র অলক গুহ ও অরূপ গুহ যথেষ্ট প্রফুল্লিত এ খবরটা শুনে। খুশী তো হবারই কথা। স্বাধীনতা সংগ্রামীর পুত্র বলে কথা। শুধু গুহ পরিবারই নয়, কোচবিহারের সকল মানুষের মধ্যেও খুশীর আবহ তৈরি হয়েছে। 

মাত্র ১২ বছর বয়সেই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন পূর্ণেন্দুশেখর গুহ। ১৯৩৩ সালে রংপুর থেকে কলকাতায় আসেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরা ও অস্ত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন বিপ্লবীদের অস্ত্রের জোগান দেওয়া। তিনি ১৯ বছর বয়সে অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন। এরপর রংপুর অস্ত্র ষড়যন্ত্র মামলায় অস্ত্র সমেত তিনি ধরা পড়ে যান। যার ফলে ১২ বছরের জন্য তাঁকে আন্দামান সেলুলার জেলে বন্দী করা হয়। ১৯৩৭ সালে জেলে বসে টানা ৩৬ দিন যাবৎ অনশন শুরু করেন। যদিও সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরোধে তিনি অনশন ভাঙ্গেন। এই অনশন থেকে বহু বিপ্লবী শিক্ষা নেন। এই বিপ্লবীদের কারণেই তিনি আন্দামান সেলুলার জেল থেকে মুক্তি হন। 

১৯৩৮ সালে ১১০ জন বন্দীর সঙ্গে জাহাজে করে কলকাতায় আলিপুর জেলে পাঠানো হয় তাঁকে। অবশেষে ১৯৪৬ সালে তিনি কারাবাসমুক্ত হন। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি তাঁর মামার বাড়ি আসামের ধুবড়িতে চলে যান৷ তারপর সেখানে 'অসম ম্যাচ ফ্যাক্টরি'তে কাজ শুরু করেন। এখান থেকেই তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শুরু করেন। এর সাথে সাথে খেলাধূলোও আরম্ভ করেন। কোচবিহারের মহারাজার দলে  খেলার সূত্র ধরে ১৯৬০ সাল থেকে তিনি কোচবিহারেই থেকে গেলেন। ১৯৮২ সালে ৬২ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments