Header Ads

এক বিতাড়িত রোহিঙ্গা মেয়ের গল্প উঠে এলো কুমার চৌধুরীর ছবিতে


অনেকের অভিযোগ যে বাংলা ছবিতে নাকি কন্টেন্টের অভাব৷ আসলে এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে বাংলাতে জমজমাট  কন্টেন্টের প্রচুর ছবি হচ্ছে। যারা বাংলা সিনেমা ভালোবাসেন বা বাংলা সিনেমা নিয়ে গবেষণা করছেন কেবল তারাই জানেন যে বাংলাতে এখন কত রকম বিষয় নিয়ে ছবি হয়। এ প্রজন্মের নিত্যনতুন পরিচালকদের হাত ধরে পাল্টে যাচ্ছে বাংলা ছবির চেহারা। 


সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হলো অভিনেতা কুমার চৌধুরী পরিচালিত ও অর্ক ফিল্মস নিবেদিত বাংলা ছবি "প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন"। যে ছবিকে এ সময়ের জ্বলন্ত দলিলও বলা চলে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যার প্রেক্ষাপটে এক রোহিঙ্গা মেয়ের গল্পকে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাবনাতে এই ছবিটি তৈরি হয়েছে। 

বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে  বহু জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের জমি ও বাসস্থান হারাচ্ছে। কাউকে শরণার্থী বানিয়ে ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক দেশে ঘরছাড়া মানুষ অন্য দেশে পালানোর জন্য বর্ডার টপকাতে গিয়ে বর্ডার পুলিশদের গুলিতে মারা পড়ছে৷ কোথাও ধর্মের জিগির তুলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোনো এক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসবাদী সাজানোর জন্য কিছু কিছু দেশ সরব হয়েছে। 

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব মাতৃভূমিতে সুখে থাকুক এটাও যেন এখন কারো কারো কাছে চোখের ছানি। এদেশেও তো আজকে উত্তর-পূর্বে বাঙালিকে বিদেশি সাজানো হচ্ছে। ভারতীয় বাঙালিকে ভারতের মাটিতে বলা হচ্ছে 'বাংলাদেশি'। মায়ানমারে নৃশংস ভাবে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে মেরে ফেলা হয়। শুধু রোহিঙ্গা গণহত্যায় নয়, সেখানে এফআরসি করেও বহু মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনই এক সমসাময়িক অবস্থাতে কুমার চৌধুরী যে ছবিটি বানিয়েছেন তার জন্য অত্যন্ত সৎ সাহস ও নিষ্ঠা থাকা প্রয়োজন। যা পরিচালকের মধ্যে বিদ্যমান।   

'প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন' (Fire Of Teak Flame of Chinar) ছবিতে উন্নতমানের কন্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো প্রযোজক পাননি। সবশেষে তাঁর স্ত্রী পিয়ালি চৌধুরী  নিজের গহনা বিক্রি করে সেই টাকাতে ছবিটি বানাতে তাঁকে সাহায্য করেন। যদিও সেই টাকা দিয়ে ছবিটি পুরোপুরি বানানো সম্ভব হয়নি বলে ক্রাউড ফান্ডিং করে ছবিটির ব্যয়ের খরচ তোলা হয়। এই ফান্ডিং এর মধ্যে ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের দারুণ অবদান রয়েছে। 

ছবিতে অভিনয় করেছেন পিয়ালি সামন্ত, ক্যাপ্টেন আরমান শাহ, ইকবাল সুলতান, নীলাঞ্জনা বিশ্বাস, রণজয় ভট্টাচার্য, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও রঞ্জিনী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা। কুমার চৌধুরী ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য ও সংলাপও নিজে লিখেছেন। ছবির ভাবনাও তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। ছবিতে চিত্র নির্ধারণ করেছেন প্রসেনজিৎ কোলে। ছবিটি সম্পাদনা করেছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মেঘ ব্যানার্জি। ছবিতে সাউণ্ড ডিজাইন করেছেন সুজয় দাস। ছবিতে ভিএফএক্সের কাজ করেছেন অরিত্র দত্ত বণিক। ছবির কালার কারেকশন করেছেন আমির মণ্ডল। ছবিটির মুখ্য সহযোগী পরিচালনা করেছেন শুভদীপ ঘোষ।  

এই ছবির প্রসঙ্গে পরিচালক লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান "ছবিটির বিষয়ে এতোদিনে নিশ্চয় সকলে জেনে গেছেন যে এই ছবির বিষয় এক রোহিঙ্গা মেয়েকে নিয়ে। যে মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে তারপর সেখান থেকে ভারতে আসতে গিয়ে সে ধরা পড়ে যায়। এরপর মেয়েটি ঠিক কোন অবস্থার সম্মুখীন হবে? এটাই আমার ছবির গল্প। আজকে যে ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সটা চলছে বিশেষ করে সাউথ এশিয়ান কান্ট্রি এবং ইরাক, সিরিয়া এই সমস্ত কিছুই রেফারেন্স হিসেবে উঠে এসেছে আমার ছবিতে। ঘটনাচক্র ও ছবির ঘটনাটি কলকাতায় ঘটছে। কিন্তু এটি একটি আন্তর্জাতিক ছবি। কারণ সারা পৃথিবীর সবকিছুই এই ছবিতে আছে।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments