Header Ads

জাপানে যোগব্যায়ামের পথিকৃৎ ছিলেন বাঙালি ব্যক্তি বিষ্ণুচরণ ঘোষ


সারা বিশ্ব তাঁকে চেনে যোগাচার্য হিসেবে। বিশ্বের দরবারে যোগকে তুলে ধরার জন্য তাঁর অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। বিশ্বের মানুষ আজও তাঁকে সম্মান জানান। প্রতি বছর লস অ্যাঞ্জেলসে যে বার্ষিক যোগ প্রতিযোগিতা হয়, তাতে পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁরই নামে। যে পুরস্কারের নাম বিষ্ণুচরণ ঘোষ কাপ। তিনিই সেই বাঙালি যিনি বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন যোগ ব্যায়ামকে। তিনি মূলত ভারতের যোগকে বিশ্বসভায় তুলে ধরেন। 


বিষ্ণুচরণ ঘোষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এসসি পাশ করে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে ওকালতি পাশ করে কিছুদিন ওকালতি করেন। কিন্তু শরীর চর্চার দিকেই তিনি বিশেষ করে ঝুঁকেছিলেন৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়াম শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ গুহ ঠাকুরতার কাছেও তিনি তালিম নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। আস্তে আস্তে তিনি শরীরচর্চার সঙ্গে ভারোত্তলন ও যোগব্যায়ামও অনুশীলন করতে থাকেন। পেশী সঞ্চালন ও নিয়ন্ত্রণে তাঁর অশেষ দক্ষতা ছিল। তিনি কলকাতায় নিজস্ব বাসভবনে ঘোষ কলেজ অফ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেসময় বহু শিক্ষার্থী এখানে শরীরচর্চার সুযোগ লাভ করেছেন। এক সময়ে মেয়েদের মধ্যে বুকে হাতি তুলে কিংবদন্তী হওয়া রেবা রক্ষিত দেশ বিভাগের পর কলকাতায় এসে বিষ্ণুচরণের আখড়ায় ভর্তি হয়েছিলেন।

বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস করতেন যে যে ভার উত্তোলন ও বডি বিল্ডিং এর সাথে কেউ যদি হঠ যোগ করেন তবে তার শরীর এবং মন দুইয়েরই উন্নতি সাধন হবে। এই তত্ত্ব তাঁকে ভারতের 'ফিজিক্যাল কালচার' আন্দোলনের প্রথম সারিতে নিয়ে আসে এবং তিনি যে তত্ত্বের অবতারণা করেছিলেন তার প্রত্যক্ষ প্রমাণও তিনি সবার সামনে তুলে ধরেন : বুকের উপর দিয়ে চলন্ত গাড়ি চলে যাওয়া, ১২ ফুট উপর থেকে পেটের ওপর ব্যক্তির ঝাঁপ, লোহার দন্ডকে একটি কুণ্ডলে পরিণত করা ইত্যাদি। তাঁর নিজস্ব ব্যায়াম পদ্ধতিকে 'ঘোষ টেকনিক' নামে স্বীকৃত দেওয়া  হয়। 

ভারতীয় অলিম্পিকে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাপনাবাসীকেও তিনি যোগ ব্যায়াম সম্বন্ধে প্রথম ওয়াকিবহাল করে তোলেন৷ তাঁর হাত ধরেই জাপানে যোগব্যায়ামের প্রচলন ঘটে। এর নেপথ্যে আছে এক ঘটনা। একবার কিছু জাপানী টুরিস্ট বিষ্ণুবাবুর ব্যায়াম পদ্ধতি দেখে এতোই মুগ্ধ হন যে দেশে ফিরে গিয়ে একটি হঠযোগের কেন্দ্র গড়ে তোলেন৷ আমেরিকা ও জাপানের মতো দেশে তিনি যোগ প্রদর্শন করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন৷ 

জাপানে যোগব্যায়ামের পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হয় বাঙালি বডিবিল্ডার বিষ্ণুচরণ ঘোষকে। তিনি যোগব্যায়াম সংক্রান্ত বহু বই লিখে দেশে-বিদেশে সমাদৃত হন। আপামর বাঙালি সমাজ এনাদের মতো বীর বাঙালিদের জন্য আজও গর্বিত। গর্ব তো করতেই হবে কারণ জাপান ব্যায়াম ও জিমনাস্টিকে যেভাবে আজকে প্রচুর স্বর্ণপদক অর্জন করছে, ভাবতে অবাক লাগে এই দেশের মানুষ বাঙালি ব্যক্তি বিষ্ণুবাবুর নিকট যোগব্যায়াম শিখেছিল। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments