Header Ads

গণিত নিয়ে গবেষণা করতে মার্কিন পাড়ি দিচ্ছেন বঙ্গতনয়া মধুমিতা রায়


এক বঙ্গতনয়া কোচবিহার এবিএন শীল কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার জন্য নিউ জলপাইগুড়িতে নামেন। সেখান থেকে বাড়ি যেতে বাসে ভাড়া দেওয়ার টাকা না থাকায় তিনি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে লোকাল ট্রেনে ওঠেন। এখানে ঘটে এক বিপত্তি। কতগুলো নেশাগ্রস্ত অসভ্য জানোয়ার মানুষ চড়াও হয় তার ওপর। তারা জোর করে তার হাত থেকে বইভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মেয়েটির ঘরে প্রচণ্ড অভাব থাকায় তিনি নিজের বইভর্তি ব্যাগকে উদ্ধার করতে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ মেরে বইভর্তি ব্যাগটি ফিরে পান৷ লেখাপড়ার জন্য এই মেয়েটির এমনই জেদ। 


এই জেদী মেয়েটিই এবার গণিত নিয়ে গবেষণা করার জন্য মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিতে চলেছে। এই মেয়েটি হলেন বাংলার মেয়ে মধুমিতা রায়। ছোটো বেলা থেকেই গণিত বিষয়টির প্রতি তার প্রবল ঝোঁক ছিল। অঙ্ক কষতে তার এতোটাই ভালো লাগে যে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে অতোটা আগ্রহ নেই। অঙ্কের প্রতি অগভীর ভালোবাসা তাকে আজ আমেরিকাতে পৌঁছে দিচ্ছে। তার এই সাফল্য বাংলার বহু ছাত্রছাত্রীকে প্রেরণা জোগাবে। 

মধুমিতা রায়ের বাড়ি নকশালবাড়ির রায়পাড়াতে। যত কঠিন অঙ্কই তাকে দেওয়া হোক না কেন তিনি মিনিটের মধ্যেই তা সমাধান করে ফেলেন। অঙ্কের জটিল ধাঁধার জট ছাড়ানোও তার কাছে যেন জলঘাটের মতো৷ আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মেম্ফিসে তিনি পেয়েছেন অঙ্ক নিয়ে গবেষণার সুযোগ। ২০২০ সালে ভারত থেকে একমাত্র মেয়ে হিসেবে আমেরিকার এই ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার কাজ শুরু করলেও তিনি করোনার জেরে গবেষণার কাজ শুরু করে বাড়ি ফিরে আসেন। করোনা প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারো তিনি আগামী ২৩ শে জানুয়ারি পাড়ি দিচ্ছেন আমেরিকাতে। 

মধুমিতা রায়ের এই জায়গাতে  পৌঁছানো মোটেও সোজা ছিলনা। মধুমিতা নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন মেয়ে। মধুমিতাদের পরিবারে পাঁচ সদস্য তিনি, তার দুই বোন ও তার মা-বাবা। নকশালবাড়ি বিডিও অফিসের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কাঁচা রাস্তা পেরোলেই তাদের বাড়ি। টিনের চালার একটি ছোট্ট বাড়িতে বহু কষ্ট করে দিন কাটে তাদের। সামান্য ডালভাতের জন্যও তাদের হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিন বেলা ঠিকঠাক খাবারও জোটে না তাদের। তার মা ডলি রায় একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তার বাবা গোপীনাথ রায় টিউশন পড়ান। 

২০১০ সালে মধুমিতা তারকনাথ সিন্দুরবালা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তবে আর্থিক অনটনের জন্য প্রথম পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সাহস পাননি তিনি। যদিও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভরসাতে শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা আরম্ভ করেন। তিনি উচ্চমাধ্যমিকে ৭৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর গণিত অনার্সের জন্য কোচবিহার এবিএন শীল সরকারি কলেজে তিনি ভর্তি হন। এরপর জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট ফর এমএসসি পরীক্ষায় পাস করে পরবর্তীতে কানপুর আইআইটিতে তিনি পড়ার সুযোগ পান৷ কিন্তু এই সময় তার মায়ের পেটে টিউমার ও গলায় থাইরয়েড হয়। তার মাকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয় তার বাবা গোপীনাথবাবুর। শুধু তাই-ই নয়, তিনি তার আরো দুই মেয়ে মৌভাসি ও কৃপাকে অঙ্ক ও ইংরেজি অনার্সে ভর্তি করতে গিয়ে তাকে টালমাটাল অবস্থায় দিন কাটাতে হয়। তিনি মধুমিতার জন্য কানপুর আইআইটিতে পড়ার অর্থ বহন করতে ব্যর্থ হন৷ 

মধুমিতা কখনোই লেখাপড়া করতে গিয়ে হাল ছাড়েননি। ২০১৬ সালে আরো একবার জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট ফর এমএসসি পরীক্ষা দেন। তাতে আবারো উত্তীর্ণ হয়ে তিনি খড়গপুর আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেলেন৷ সেখান থেকে ২০১৭ সালে জেআরএফ পাশ করে অঙ্কে এমএসসি। ২০১৯ সালে অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করতে জিআরই ও টিওইএফএলতে কোয়ালিফাই করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মেম্ফিসে অঙ্ক নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি পেয়ে গেলেন এক সুবর্ণ সুযোগ। যা একজন বাঙালির কাছে অত্যন্ত গর্বের। যারা বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছেলেমেয়েদের অবজ্ঞা করেন তাদেরকে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিলেন তিনি। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments