Header Ads

শিল্প ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ব্রিটিশদের তাড়াতে চেয়েছিলেন বিপ্লবী সুন্দরী মোহন দাস


দেশকে স্বাধীন করার জন্য নানান বিপ্লবী নানান পন্থা অবলম্বন করতেন। যুদ্ধ-লড়াই, সংগ্রাম থেকে প্রবল সংগ্রামও যেমন স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন তেমই শিল্প ও প্রতিষ্ঠান গড়ে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছুঁড়ে দেওয়াও প্রয়োজনীয় কাজ। ঠিক এমনটাই মনে করতেন বিপ্লবী সুন্দরী মোহন দাস। তিনি ছিলেন বন্দুক হাতে লড়াই না করা বিপ্লবী। হাজার হাজার বিপ্লবী দেশকে ব্রিটিশমুক্ত করার জন্য বন্দুক হাতে লড়াই করে শত্রুদের যখন হাতে মারছেন তখন সুন্দরী মোহন দাস ব্রিটিশদের ভাতে মারার পরিকল্পনা চালাচ্ছেন। স্বাধীনতার যুদ্ধ তো এমনই। শত্রুকে হাতে ও ভাতে দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারলেই স্বাধীনতা আসবে। বিপ্লবী সুন্দরী মোহন দাস পড়তেন শত্রুকে ভাতে মারা বিপ্লবীদের দলে। 


সুন্দরী মোহন দাস মহান স্বদেশী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ পণ্য ও ব্রিটিশ শিক্ষা বর্জন ইত্যাদির ওপর প্রচুর অনুপ্রেরণামূলক গান রচনা করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ দ্রব্য ও ব্রিটিশ শিক্ষা বর্জনের উদ্দেশ্যে বহু মিছিলও পরিচালনা করেছিলেন। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত ও চিকিৎসা বিষয়ক 'জাতীয় শিক্ষা' আয়োজনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন জাতীয় শিক্ষা কাউন্সিলের প্রধান সংগঠক।

স্বদেশী আন্দোলন সুন্দরী মোহন দাসের কাছে কোনো নেতিবাচক আন্দোলন ছিল না। তিনি তীব্রভাবে অনুভব করেছিলেন যে ব্রিটিশ পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। স্বদেশী শিল্পকে উৎপাদনের মাধ্যমে স্বদেশী পণ্য দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে না পারলে এই আন্দোলন কখনোই সফল হবে না। তিনি স্বপ্ন দেখতেন যে ভারতকে অবশ্যই শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। তিনি তাঁর সুকিয়া স্ট্রিট হাউসে হোসিয়ারি পণ্য তৈরির জন্য বুনন যন্ত্রপাতি আমদানি করেছিলেন যেখানে তিনি প্রচুর বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। 

তাঁর সবচেয়ে বড়ো অবদান হলো দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি ও চিকিৎসাশাস্ত্রকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকেই স্বদেশী ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আরো অনেক নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন। স্বদেশী ভাবনার ফলশ্রুতিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট যা আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। কর্মহীন ও কর্মনাশা যুবকদের জন্য বানিয়েছিলেন দেশীয় ঔষধের কারখানা। তাঁর লক্ষ্য ছিল আমাদের দেশে যেসব গাছ হয় সেইসব গাছ গাছড়া দিয়ে ঔষধ বানানো। এই লক্ষ্যে অবিচল থেকে তিনি তাঁর নিজের ছেলে প্রেমানন্দকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন ঔষধের রসায়ন শিখে আসার জন্য। 

যে সব স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সশস্ত্র পথে মাতৃমুক্তি পণ করেছিলেন সুন্দরী মোহনের দরজা তাঁদের জন্য সদা উন্মুক্ত ছিল। বাস্তবিক পক্ষে তাঁর ৭৩, সুকিয়া স্ট্রীটের বাড়িটি বিপ্লবীদের ঘাঁটি ছিল। বিখ্যাত বিপ্লবী ঊল্লাসকর দত্ত প্রায়শ‌ই এখানে এসে থাকতেন। এ ছাড়া বাংলার কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতারা যেমন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, লিয়াকৎ হোসেন প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ বিপীন চন্দ্র পালের নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে মিলিত হতেন। এই বাড়িতেই দেশবন্ধুর 'স্বরাজ্য পার্টি'র পূর্বসূরী 'স্বরাজ্য সমিতি' গঠিত হয়েছিল।

তাঁর কাজের পরিধি স্বাধীন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আবর্তিত ছিল। তাঁর‌ই পরামর্শে 'চিত্তরঞ্জন সেবা সদন' গড়ে উঠেছিল এবং তিনি এর প্রথম সুপারিন্টেডেন্ট ছিলেন। তিনি ডঃ রাধাগোবিন্দ করকে 'আর জি কর মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল' গড়ে তুলতে যথাযথ সাহায্য করেন এবং অনেকদিন ঐ কলেজের সম্মানিত শিক্ষক ছিলেন। ডঃ সুন্দরী মোহন তাঁর লোভনীয় প্র্যাক্টিস ছেড়ে দিয়ে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। এই প্রতিষ্ঠান‌ই পরবর্তী কালে 'ন্যাশান্যাল মেডিক্যাল কলেজ' এ পরিণত হয়।

তথ্যসূত্র- খেয়ালখুশির পাতা ফেসবুক পেজ, সুন্দরীমোহন ডট ও.আর.জি 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments