Header Ads

কালাজ্বরের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় নতুন পথের সুলুকসন্ধান একদল বাঙালি বিজ্ঞানীর


এককালে কালজ্বর পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে আতঙ্ক হিসেবে বিরাজ করতো। এক প্রাণঘাতী ভয়ানক রোগ ছিল কালাজ্বর। এই রোগের মহামারী আকার নেওয়ার ক্ষমতাও সেকেলে প্রবল ছিল। বাংলার ঘর আলো করে জন্মানো প্রখ্যাত বিজ্ঞানী   উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের ঔষধ আবিষ্কার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তারপর থেকে কালাজ্বর নিরাময় সহজসাধ্য ব্যাপার হয়ে ওঠে। 


অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় জুড়ে কালাজ্বর ছিল মৃত্যুর দূত। কবি সুকুমার রায়ের মৃত্যুও হয়েছিল কালাজ্বরে। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর হাত ধরে ইউরিয়া স্টিবামাইন হয়ে উঠল এই রোগ থেকে মুক্তির অব্যর্থ মহাষৌধ। ১৯২০ সালে তিনি এই ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন। কালাজ্বরের ঔষধ আবিষ্কারের পর মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে আসে। 

উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর সেই আবিষ্কারের ১০০ বছর পর নতুন করে শুরু হয়েছে কালাজ্বর সম্পর্কিত গবেষণা। কালাজ্বরের অত্যাধুনিক চিকিৎসার সুলুকসন্ধান এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। কলকাতার এক ছোট্ট গবেষণাগারে বসে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের ঔষধ আবিষ্কার করেন। আর এবারো সেই কলকাতায় কালাজ্বর নিরাময়ে নতুন পথ দেখাচ্ছে। এতোদিন পর্যন্ত কালাজ্বরের চিকিৎসায় ইউরিয়া স্টিবামাইন ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই ঔষধে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন শরীর জ্বালা করা, চুলকানি, যন্ত্রণা, লালভাব ও সাময়িক শারীরিক অস্বস্তি। 

ইউরিয়া স্টিবামাইন অনেক সময় শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দিতে হয়। এর জন্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সুশান্তশেখর অধিকারী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চিরঞ্জীব পালের তত্ত্বাবধানেই সম্পূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। আর সম্পূর্ণ গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মহম্মদ ইউসুফ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবারতি মুখোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে তাঁরা 'ফেরোসেনিলকুইলোনিন' নামে যে ঔষধ আবিষ্কার করেছেন তা সাধারণ ঔষধের মতোই মুখ দিয়ে খাওয়া যাবে, এমনটাই জানা যায়। নতুন এই ঔষধটিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।  

২০১২ সালে কালাজ্বরের চিকিৎসার জন্য নতুন ঔষধের মডেল তৈরি করেন অধ্যাপক সুশান্তশেখর অধিকারী। কিন্তু কেবল মডেল তৈরি করলেই তো আর হবে না তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করারও প্রয়োজন আছে। সেজন্য অধ্যাপক চিরঞ্জীব পালের সহায়তায় নতুন করে শুরু হয় পরীক্ষানিরীক্ষা। অবশেষে সম্পূর্ণ ঔষধটি পেটেন্টের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। বাঙালি বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার বিষয়টি আমেরিকার এক গবেষণা পত্র 'জার্নাল অব মেডিক্যাল কেমিস্ট্রি' তে প্রকাশিত হয়েছে। এই ঔষধ বাজারে সহজলভ্য দামে সাধারণ মানুষ কিনতেও পারবে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments